শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশপ্রেম না থাকলে উন্নয়ন সম্ভব নয়

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী। বহু গুণে গুণান্বিত একজন সফল ব্যক্তি। বিশিষ্ট ডেন্টাল সাজর্ন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, টিভি উপস্থাপক, মাদক ও ধূমপানবিরোধী সংগঠন ‘মানস’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বারডেমের ডেন্ট্রিস্টি বিভাগের অধ্যাপক। শত ব্যস্ততার মধ্যেও কথা বলেছেন তারার মেলার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেনÑ মাসুদুর রহমান
নতুনধারা
  ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:০০
ডা. অরূপ রতন চৌধুরী

তারার মেলা : চলছে বিজয়ের মাস, আসছে বিজয় দিবস। প্রতি বছর এই সময়ে কেমন লাগে, কি মনে হয়? ডা. অরূপ রতন চৌধুরী : প্রতি বছরই স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস এলে মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়ের দিনগুলো খুব মনে পড়ে। কত কষ্টের বিনিময়েই না আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পেরেছি। যাদের জীবনের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হলো তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ভক্তিভরে স্মরণ করি। তারার মেলা : নিজেকে যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন কিভাবে ? ডা. অরূপ রতন চৌধুরী: আমি তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বষের্র ছাত্র ছিলাম। একেবারেই তরুণ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ থেকেই আমাদের দেশের তরুণরা পাকিস্তানের নানা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আসছিল। তখন থেকেই নিজের মধ্যেও প্রতিবাদের উন্মাদনা কাজ করছিল। সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হলে অনেকেই যুদ্ধে চলে যান। আমিও নেমে পড়ি। যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন শব্দ সৈনিক হয়ে কাজ করেছি। ওই সময় এই বেতার কেন্দ্রটি ছিল ভারতের কলকাতায়। আমি সেখানে চলে যাই। তারার মেলা : স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যুদ্ধের সময় কতটা অবদান রেখেছে বলে মনে হয়? ডা. অরূপ রতন চৌধুরী: একাত্তরে যুদ্ধের জন্য সেক্টর ছিল ১৪টি। যেগুলো থেকে সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালিত হতো। আর ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ ছিল অঘোষিত একটি সেক্টর। দেড়-দুইশ শিল্পী সেখানে কাজ করতেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে যুদ্ধের সব খবরাখবর জানানো হতো। যারা স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন তারা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতি উদগ্রিব হয়ে থাকতেন। ‘পূবর্ দিগন্তে সূযর্ ওঠছে’, ‘কারা ঐ লৌহ কপাট’, ‘মোরা একটি ফুলকে বঁাচাব বলে যুদ্ধ করি’, ‘তীর হারা এই ডেউয়ের সাগর’ এর কম অসংখ্য গান শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, পুরো দেশবাসীকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছে। তাদের উজ্জীবিত করেছে, প্রেরণা জুগিয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র না থাকলে হয়তো বাংলাদেশ এত সহজেই স্বাধীন হতো না। তারার মেলা : কখন প্রথম শুনতে পেয়েছিলেন বিজয়ের খবর? ডা. অরূপ রতন চৌধুরী : যুদ্ধের শেষ সময় পযর্ন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেই ছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিজয়ের খবর শুনতে পাই। সবাই উল্লাসে মেতে উঠি। পাশের মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনে একে অপরকে মিষ্টি মুখ করাই। বিজয়ের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে শহিদুল্লাহ তৎক্ষণাৎ একটি গান লিখে ফেলেন; আর সুর করে ফেলেন সুজেয় শ্যাম। সবাই মিলে গাইতে থাকি ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটি। তারার মেলা : যুদ্ধের স্মরণীয় কোনো স্মৃতি... ডা. অরূপ রতন চৌধুরী : মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতো অনেক। কোনটা রেখে কোনটা বলি। তবে এই মুহ‚তের্ মনে পড়ছে বিজয়ের খবর শোনার সেই মধুময় স্মৃতির কথা। আমরা ভারতের বেলোনিয়ার একটি বিল্ডিংয়ে স্বাধীনতা বেতার কেন্দ্রের কাজ করতাম। সে দেশের গোয়েন্দাদের নজরদারিতে ছিল এই বেতার কেন্দ্র। সেখান থেকেই গান-নাটক সব করতাম। কিন্তু মজার বিষয় হলো এসব কেউ জানত না। এখান থেকে এত বিশাল কাজ হচ্ছে অথচ একটা কাক-পক্ষী পযর্ন্ত তা টের পাইনি। কেউ জানত না স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এখান থেকে কাজ করছে। বিজয়ের খবর শোনার পর যখন আমরা রাস্তায় নেমে পড়ি আর উল্লাস করতে থাকি তখন আশপাশের সবাই অবাক হন। বিষয়টি কী। এরপর সবাই জানতে পারেন। কত গোপনে আমরা সেই বিশাল কাজ করেছিলাম। এটা আমার খুব মনে পড়ে। তারার মেলা : স্বাধীনতার পর এ সময়ে প্রত্যাশার প্রাপ্তি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? ডা. অরূপ রতন চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা কিংবা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন সৈনিক হিসেবে গবের্বাধ করি। একটি গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন দেখি। যেখানে সব ধমের্র লোকের বসবাস থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সুজলা-সুফলা, শস্য শ্যামলে ভরা একটি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই তার অকাল মৃত্যু জাতির জন্য অত্যন্ত দুভার্গ্য। এরপর বিভিন্ন সরকারের পালা বদল হলেও দেশ এগুতে পারেনি। এরপর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বতর্মান সরকার ক্ষমতায় আসে। আশার দিক হচ্ছে এ সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য অধিক কাজ করে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে যদি এই ধারাবাহিকতা থাকতো তবে আমাদের দেশও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতো। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর কোথা থেকে কোথায় এসেছে। আমরাও পারতাম কিন্তু রাজনৈতিক বিপযের্য়র কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। তারার মেলা : আপনার কি মনে হচ্ছে, তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে উঠছে? ডা. অরূপ রতন চৌধুরী: তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সেভাবে বেড়ে ওঠছে না। আধুনিকতা ও প্রযুক্তির দিকে যেভাবে ঝুঁকছে দেশপ্রেমের দিকে তরুণ প্রজন্ম ততটা ঝুঁকছে না। দেশপ্রেম না থাকলে নিজের ও দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। তরুণরা অনেকেই মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হচ্ছে। তারার মেলা : আপনার মাদকবিরোধী সংগঠন ‘মানস’-এর বতর্মান অবস্থা নিয়ে জানতে চাই? ডা. অরূপ রতন চৌধুরী: পেশাদার হিসেবে রোগী দেখেই সময় কাটাতে পারতাম। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় মাদকবিরোধী কাজ করে যাচ্ছি। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ‘মানস’ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সেমিনার, সেম্পোজিয়াম, টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়মিত কাজ চলছে। আমরা মাদকমুক্ত বাংলাদেশের সবার্ত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারার মেলা : নতুন চলচ্চিত্র নিমার্ণ... ডা. অরূপ রতন চৌধুরী: ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আমার পরিচালিত ‘স্বগর্ থেকে নরক’ মুক্তি পায়। মাদক সচেতনমূলক এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফেরদৌস ও নিপুণ। এরপর বছর তিনেক আগে সরকারি অনুদানের জন্য ‘মাটির টানে’ চলচ্চিত্রটি জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া পাইনি। অপেক্ষায় আছি। বঙ্গবন্ধুর আদশের্ক নিজের মধ্যে লালন করে এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আমাদের দেশে আছেন। ঠিক তেমনই একজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প নিয়ে ছবিটির গল্প। সেই মুক্তিযোদ্ধা নীরবে নিভৃতে এই প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পকের্ সচেতন করে তোলার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। দেশ প্রেমের পাশাপাশি এতে মাদকের বিষয়টিও থাবে। তারার মেলা : গান নিয়ে চলমান ব্যস্ততা যাচ্ছে? ডা. অরূপ রতন চৌধুরী: আমি সাধারণত বিশেষ দিবস উপলক্ষে গান নিয়ে কাজ করি। তবে গানের নতুন একটি খবর হচ্ছে নতুন বছরে একটি রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ করব। এতে আমার সঙ্গে আছেন ওপার বাংলার হৈমন্তী শুকলা। অ্যালবামটি দুই বাংলাতেই প্রকাশ পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে