শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হরেকরকম কাঠগোলাপ

জায়েদ ফরিদ
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

কাঠের গায়ে গোলাপ, সেজন্যই কি কাঠগোলাপ? এই শব্দবন্ধটা আলাদাভাবে ফুল ও গাছের সঙ্গে আকৃতি-প্রকৃতিতে তেমন মেলে না। কিন্তু যুগ্ম উচ্চারণে মনের ভেতর একটি মনোরম চিত্রকল্প তৈরি হয় যা আমাদের ভালো লাগে, অনুভ‚তিকে স্পশর্ করে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে একে গুলাচি, চম্পা ইত্যাদি নামে ডাকা হলেও আমাদের কাছে একান্তই কাঠগোলাপ। সারা দুনিয়ায় এই ফুল দুটি নামেই বেশি পরিচিত। গোটা আমেরিকাতে একে বলে প্লুমেরিয়া আর অস্ট্রেলিয়াতে ফ্র্যাঞ্জিপেনি।

প্লুমেরিয়া (চষঁসবৎরধ) বলার কারণ এটা শনাক্ত করেছিলেন ১৭শ’ শতাব্দীর উদ্ভিদবিদ চালর্স প্লুমেরিয়ার। কাঠগোলাপের বৈজ্ঞানিক নাম যেহেতু প্লুমেরিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই প্রাবন্ধিক আলোচনায় একে সাধারণত প্লুমেরিয়া বলেই উল্লেখ করা হয়।

আমাদের দেশে অনেকের বিশ্বাস, শেওড়াগাছ আর গাবগাছে ভ‚ত থাকে, কারণ ভ‚তের নিবাস অন্ধকারে। ফিলিপাইনস্? দ্বীপপুঞ্জের মানুষ বিশ্বাস করে, কাঠগোলাপ গাছে ভ‚ত বাস করে, আর সে কারণে এই গাছগুলোকে তারা কবরস্থানে লাগায়। ধারণা করে ভ‚তেরা মৃত আত্মার যতœ নেবে, পাহারা দেবে, ফুল ঝরিয়ে কবরকে শোভিত রাখবে।

হাওয়াই দ্বীপে কাঠগোলাপের ছড়াছড়ি। দ্বীপের মেয়েরা কানে কাঠগোলাপ গেঁাজে। বাম কানে দিলে বুঝতে হবে সে বিবাহিতা ডান কানে থাকলে, অনূঢ়া। এই দ্বীপে এক সময় নিয়মিতভাবে অতিথি-অভ্যাগতদের বরণ করা বা বিদায় উপলক্ষে ব্যবহার করা হতো একপ্রকার মালা, যার হাওয়াই নাম ‘লেই’ (খবর)। এসব লেই অধিকাংশই তৈরি হতো কাঠগোলাপ দিয়ে। এখন ডেন্ড্রোবিয়াম অকির্ড এর সিংহভাগ পূরণ করে।

হাওয়াই এবং অস্ট্রেলিয়াতে প্রচুর পরিমাণে কাঠগোলাপ জন্মে বলে মনে হয়, এগুলো হয়তো সেখানকার আদিবাসী। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় জানা গেছে এগুলো হাওয়াইতে গেছে ১৮৬০ সালের দিকে। কাঠগোলাপের প্রাথমিক অস্তিত্ব সম্পকের্ জানা যায়, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মাঝখানে সংযোগ স্থাপনকারী ‘ছেঁড়া ব্রেজিয়ার’ সদৃশ অঞ্চলটিতে, যেখানে প্রাচীন মায়া ও অ্যাজটেক সভ্যতার নিদশর্ন দেখা যায়।

প্লুমেরিয়ার শত শত হাইব্রিড তৈরি হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এত শত হাইব্রিড শনাক্ত করা কেবল দুঃসাধ্য নয়, সরল বৃক্ষপ্রেমীর জন্য অহেতুক কাজ বলেও মনে হয়। অনিশ্চিত ও অসমাপ্ত ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে আমরা এর একটা বিহিত করতে পারি। আলোচনায় ৬০টি প্রজাতি নয়, এমনকি ১০টিও নয়, ৫ আঙ্গুলে ৫ প্রজাতির কাঠগোলাপ আমরা অবশ্যই ধারণ করতে পারি। অভিজ্ঞতা বলে, মানুষের সাধারণ স্মৃতি-সামথর্্য ৭ সংখ্যাকে সহজে অতিক্রম করতে পারে না। ৭ ডিজিটের বেশি হলে গাড়ির নাম্বার প্লেটে অক্ষর যোগ করতে হয়, ৭ লাইনের বেশি হলে আধুনিক কবিতায় প্যারার প্রয়োজন দেখা দেয়।

প্লুমেরিয়া রুব্রা (চষঁসবৎরধ ৎঁনৎধ) গাছের পাতার কোণা চোখা। নিকারাগুয়ার জাতীয় ফুল এটি। গাছগুলো বেশ বড় হতে দেখা যায় যাকে বৃক্ষই বলা যায় কারণ এর উচ্চতা ১৩ ফুটের বেশি, বেশি পুরনো গাছ ২০-২৫ ফুট পযর্ন্ত হতে দেখা যায়। লাল রং থেকে শুরু করে খুব হাল্কা হলুদ বা গোলাপি রঙের হতে পারে এই ফুল। এর ঘ্রাণ সবচেয়ে বেশি, বিশেষত যেগুলোর মাঝখানে ডিমের কুসুমের মতো হলুদ রঙের আভা থাকে । প্লুমেরিয়া অবুঁজা (চষঁসবৎরধ ড়নঃঁংধ) গাছের পাতার অগ্রভাগ অধর্বৃত্তাকার। এর সাধারণ নাম ‘শুভ্র সিঙ্গাপুর’ যা কখনও সিঙ্গাপুরের নেটিভ নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মধ্য আমেরিকা এবং এর নিকটবতীর্ অঞ্চলেই এর আদিবাস। এই গাছ প্রায়শ চিরসবুজ থাকে অনুক‚ল পরিবেশে।

প্লুমেরিয়া স্টেনোফিলা (চষঁসবৎরধ ংঃবহড়ঢ়যুষষধ) গাছের পাতা দেখতে চিকন, অনেকটাই করবী পাতার মতো। এই গাছকে গুল্ম বলাই সঙ্গত কারণ এর উচ্চতা সীমাবদ্ধ থাকে ১০ ফুটের মধ্যেই।

প্লুমেরিয়া পুডিকা (চষঁসবৎরধ ঢ়ঁফরপধ) গাছের পাতার অগ্রভাগ দেখতে চামচের মতো, পুডিকা শব্দের অথর্ও চামচ। আমাদের দেশে একে সাদৃশ্য করা হয় সাপের ফণার সঙ্গে যে কারণে এর এক নাম নাগচম্পা। নাম এবং দেহ বাহারি হলেও এর গন্ধ নেই। ল্যান্ডস্কেপিংয়ে বেশ ব্যবহার হয় এই চিরসবুজ গাছ। এই ফণা কয়েক রকম হতে দেখা যায়।

প্লুমেরিয়া কারাকাসানা (চষঁসবৎরধ পধৎধপধংধহধ) নামে একটি হাইব্রিড আছে, যে নামটি এসেছে ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাস থেকে। থাইল্যান্ডে পুডিকার একটি ভ্যারাইটির নাম ‘শ্রী সুপাকরন’ যা গোলাপি রঙের। এক প্রকার ভ্যারিয়েগেটেড প্রজাতিও সেখানে উদ্ভব হয়েছে যার পাতায় সাদা-হলুদ রং মেশানো থাকে বলে আদর করে ডাকা হয় সোনার বা রূপার চামচ নামে।

প্লুমেরিয়া এলবা (চষঁসবৎরধ ধষনধ) গাছের পাতা করবীর মতো চিকন কিন্তু আরও অনেক লম্বা। এটি লাওসের জাতীয় ফুল। এর সুগন্ধি ফুল বেশ বড় কিন্তু হ্যাংলা, প্রতিটি পঁাপড়ি স্পষ্টভাবে আলাদা। গাছগুলো ২০ ফুটের ওপরে লম্বা হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<11388 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1