মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
পোল্ট্রি শিল্প

দ্রুত বধর্নশীল ও সম্ভাবনাময়

একনজরে পোল্ট্রি শিল্প বাণিজ্যিক খামারের সংখ্যা ৬৫ থেকে ৭০ হাজার জিপি ফামর্ ৮টি কোম্পানির মোট ১৫টি পিএস ফামর্ ২০৫টি অনিবন্ধিত ফিড মিল ১২৮টি পোল্ট্রিবিষয়ক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ৩০টির মতো বিনিয়োগ ৩০০ বিলিয়ন টাকা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কমর্সংস্থান ৬০ লাখ নারী কমর্সংস্থান ৪০ ভাগ দৈনিক মাংস উৎপাদন ৪০০০ মেট্রিক টন দৈনিক ডিম উৎপাদন ২ কোটি ৮০ লাখ
এসএম মুকুল
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:২৭

পোল্ট্রিশিল্প বতর্মান বিশ্বে দ্রুত বধর্নশীল একটি বহুমুখী শিল্প। গামেের্ন্টর পর পোল্ট্রিই দ্বিতীয় বৃহত্তম কমর্সংস্থান সৃষ্টিকারী শিল্প খাত। বলতে দ্বিধা নেই মেধাবী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনে এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রেখে চলছে পোল্ট্রিশিল্প। এ খাত সংশ্লিষ্টদের নিরবচ্ছিন্ন ভ‚মিকার ফলে দেশ এখন মুরগির ডিম ও মাংসে স্বয়ংসম্পূণর্তা অজর্ন করেছে। বাংলাদেশের মোট প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৪০-৪৫ ভাগই জোগান দিচ্ছে এই শিল্পটি। এই শিল্প খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যার সঙ্গে কমবেশি ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা নিভর্রশীল। আশার খবরটি হচ্ছে বতর্মান বাজারে যে পরিমাণ ডিম, মুরগি, বাচ্চা এবং ফিডের প্রয়োজন তার শতভাগ এখন দেশীয়ভাবেই উৎপাদিত হচ্ছে। এমনকি দেশের ডিম ও মাংসের শতভাগ চাহিদাপূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদনও করছে এ শিল্পটি। বাংলাদেশে দ্রæত অগ্রসরমান পোল্ট্রিশিল্পের সম্ভাবনাকে সারাবিশ্বে জানান দিতে এবং বিশ্বেও পোল্ট্রি সায়েন্স জ্ঞান বিনিময়ের লক্ষ্যে বৃহৎ কলেবরে ১১তম আন্তজাির্তক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াল্ডর্স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (ডাবিøউপিএসএ) বাংলাদেশ শাখা এবং ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল’ (বিপিআইসিসি)। আন্তজাির্তক পোল্ট্রি সেমিনার অনুষ্ঠানটি হবে ২০১৯ সালের ৫-৬ মাচর্ ঢাকার রিজেন্সি হোটেলে এবং আন্তজাির্তক পোল্ট্রি শো অনুষ্ঠিত হবে ৭-৯ মাচর্ আন্তজাির্তক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়। আয়োজকদের প্রত্যাশা এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই শিল্পের সম্ভাবনা সারাবিশ্বের কাছে ছড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি সেমিনারের মাধ্যমে আমরাও পোল্ট্রি সায়েন্সেরা জ্ঞান-গবেষণা সম্পকের্ আরও সমৃদ্ধ হতে পারব। এবার ভিন্ন আঙ্গিকে এবং আরও জমকালোভাবে অনুষ্ঠিত হবে ১১তম আন্তজাির্তক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার। আগের বছরগুলোতে ‘পোল্ট্রি শো’ ও ‘সেমিনার’ একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হলেও এবার ৫ ও ৬ মাচর্, ২০১৯ ওয়াল্ডর্স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (ডাবিøউপিএসএ) বাংলাদেশ শাখার উদ্যোগে ঢাকা রিজেন্সি হোটেলে ‘ইন্টারন্যাশনাল টেকনিক্যাল সেমিনার’ এবং ৭, ৮ ও ৯ মাচর্ ডাবিøউপিএসএ বাংলাদেশ শাখা এবং ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল’ (বিপিআইসিসি)-এর যৌথ উদ্যোগে বসুন্ধরা আন্তজাির্তক সম্মেলন কেন্দ্রে (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত হবে ‘ইন্টারন্যাশনাল পোল্ট্রি শো’। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বতর্মানে সারা দেশে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামার রয়েছে। এ ছাড়া আছে ব্রিডার ফামর্, হ্যাচারি, মুরগির খাবার তৈরির কারখানা। পোল্ট্রিশিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে লিংকেজ শিল্প, কঁাচামাল ও ওষুধ প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ডিমের দৈনিক উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ। মাথাপিছু কনজাম্পশন ছিল প্রায় ৪১টি। ২০১৬ সালে ডিমের দৈনিক উৎপাদন ছিল প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ। মাথাপিছু কনজাম্পশন প্রায় ৫১টি। এই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে দৈনিক উৎপাদন হবে প্রায় ৪ কোটি ৫ লাখ ডিম। আর তখন মাথাপিছু কনজাম্পশন প্রায় ৮৬টিতে। পরিসংখ্যানে মুরগির মাংসের উৎপাদন ও কনজাম্পশন দেখানো হয়েছে, ২০১৪ সালে মুরগির মাংসের দৈনিক উৎপাদন ছিল প্রায় ১,৫১০ মেট্রিক টন। তখন মাথাপিছু বাষির্ক কনজাম্পশন ছিল প্রায় ৩.৫ কেজি। ২০১৬ সালে মুরগির মাংসের দৈনিক উৎপাদন বেড়ে দঁাড়ায় প্রায় ১,৮৫১ মেট্রিক টন। তখন মাথাপিছু বাষির্ক কনজাম্পশন ছিল প্রায় ৪.২ কেজি। আর এ ধারাবাহিকতা থাকলে ২০২১ সালে হবে উৎপাদন হবে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক। মাথাপিছু বাষির্ক কনজাম্পশন হবে প্রায় ৭ কেজি। এমন প্রেক্ষাপটে খাত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ২০২০ সালের মধ্যে পোল্ট্রি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য রপ্তানি করা যাবে। আর এ লক্ষ্য অজর্ন করা সম্ভব হলে প্রাথমিক পযাের্য় বছরে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব হবে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এই শিল্পের সম্ভাবনা কত বড় তা সহজেই অনুমেয়। ডাবিøউপিএসএ-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন বলেন, পোল্ট্রি ব্যবসা এখন অনেক বেশি কঠিন হয়ে গেছে। সাধারণ খামারি থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রত্যেকেই লোকসানের জালে আটকা পড়েছে। কর ও শুল্কের বোঝা প্রতিবছরই বাড়ছে। এবছর আরও দুটি নতুন প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছেÑ একটি বিএসটিআই-এর বাধ্যতামূলক মানসনদ এবং অন্যটি হচ্ছে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগের বাধ্যতামূলক ব্যবহার। অঞ্জন বলেন, প্রান্তিক খামারিদের বঁাচাতে হবে এবং সেজন্য তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে হবে, তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে তাহলে আমাদের খামারিরাই অত্যন্ত উন্নতমানের ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদন করতে পারবে। মূলত সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের পোল্ট্রিশিল্প। তিনি বলেন, ঢাকা শোটি এ উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং কাযর্কর শো। এবারের পোল্ট্রি শোতে বিশ্বের ১০ থেকে ১৫ জন টপ মোস্ট রিসাচার্রকে পেপার প্রেজেন্টেশনের জন্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এবারের ¯েøাগান ‘পোল্ট্রি ফর হেলদি লিভিং’। আমাদের দেশের স্বল্প শিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর খামারিদের অনেকেই বই পড়ে খামার ব্যবস্থাপনা বুঝতে পারেন না তাই এবার আমরা চিত্র-নিভর্র ম্যানুয়াল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। এমনকি মডেল খামার তৈরির মাধ্যমে খামারিদের হাতে-কলমে শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছি। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং শিক্ষা গুরুত্বপূণর্ মাইলফলক এবং দ্ব্যথর্হীনভাবে বলতে চাই এই তিনটি ক্ষেত্রেই পোল্ট্রিশিল্প গুরুত্বপূণর্ অবদান রাখছে। জাতীয় অথর্নীতিতে পোল্ট্রিশিল্পের অবদান প্রায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ ছাড়াচ্ছে। পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৪ সালে পোল্ট্রি ফিডের বাষির্ক উৎপাদন ছিল প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৬ সালে পোল্ট্রি ফিডের বাষির্ক উৎপাদন ছিল প্রায় ৩৩ লাখ মেট্রিক টন। ২০২১ সালে পোল্ট্রি ফিডের বাষির্ক উৎপাদন হবে প্রায় ৫৫-৬০ লাখ মেট্রিক টন। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশ্বে পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদন ১০০ কোটি টন ছাড়িয়েছে। ক্রমবধর্মান চাহিদা মেটাতে ২০৫০ সালে তা বাড়াতে হবে ৬০ থেকে ৭০ গুণ। ডাবিøউপিএসএ-বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হাসান বলেন, এবারের সেমিনারের পেপারগুলো যেন আরও বেশি প্রায়োগিক এবং বাংলাদেশের খামারিদের জন্য সহায়ক হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে পোল্ট্রি মেলাতে এক্সিবিটররা যেন তাদের পণ্য ও সেবার সঠিক ডিসপ্লে ও প্রমোশন করতে পারেন, দেশি-বিদেশি ভিজিটররা যেন প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখতে পারেন, দেশীয় খামারিরা যেন পোল্ট্রি ওয়াল্ডের্র সবের্শষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পকের্ জ্ঞান লাভ করতে পারেন, বিজনেস ডিল করতে পারেন সে বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কাজ চলছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয় পারস্পরিক সম্পকর্ জোরদার করা, কাজের পরিধি বৃদ্ধি এবং সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্যের নিরাপদ প্রোটিনের উৎস- ডিম ও মুরগির মাংসের প্রতি সাধারণ ভোক্তাদের আগ্রহ বাড়াতে স্বল্প ও দীঘের্ময়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাযর্ক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন এক বাংলাদেশ এবং নতুন এক পোল্ট্রিশিল্প দেখবে বিশ্ব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে