শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড্রাগন চাষে লাভ বেশি

উঁচু মাটিতে, অল্প জায়গায় দীঘর্জীবী ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ড্রাগন ফুল নাইট কুইনের মতোই রাতে ফোটে। ফুলের আকার লম্বাটে এবং রং সাদা ও হলুদ। প্রতি বিঘা জমিতে ২০০টি ড্রাগন ফলের গাছ রোপণ করা যায়। বীজ ও কাটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ফুল থেকে ডিম্বাকৃতি ফল উৎপন্ন হয়। ফলটি হালকা মিষ্টি ও ক্যালরি কমযুক্ত এবং এতে কালোজিরার মতো অসংখ্য বীজ থাকে। একটি গাছ থেকে বছরে ৬০ থেকে ১০০ কেজি ফল পাওয়া যায়। ড্রাগন গাছ শতকরা ৫০ ভাগ খাবার বায়ুমÐল থেকেই সংগ্রহ করে। বাকি খাবার সংগ্রহ করে জৈব সার থেকে। দেশে এখন এই ফলের চারাও পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রুট জামর্ প্লাজম সেন্টারে। বিস্তারিত জানাচ্ছেনÑ এস এম মুকুল
নতুনধারা
  ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাসের মতো। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ফলের নামটিও অদ্ভুত। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগ নিবারণে ড্রাগন ফল বেশ উপকারী। এতে ভিটামিন ‘সি’র পরিমাণ খুবই বেশি। তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, ড্রাগন ফলের জন্ম দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে। ১০০ বছর আগে এই ফলের বীজ ভিয়েতনামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই ড্রাগন ফলের চাষ বিস্তারলাভ করে। ড্রাগন ফলের চাষ সবচেয়ে বেশি হয় ভিয়েতনামে। এ ছাড়া তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরাইল, অস্ট্রেলিয়াতেও ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। আমাদের দেশে ড্রাগন চাষ ও এর সম্প্রসারণ ঘটাতে চাষাবাদ কৌশল জানতে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর নিদের্শনায় মন্ত্রণালয় তদানীন্তন বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার দেশের প্রখ্যাত ফল গবেষক ও উদ্ভাবক এস এম কামরুজ্জামানকে ভিয়েতনাম পাঠানো হয়। এ প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান বলেন, ‘দেশে প্রথম কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিদেশ থেকে উন্নত জাতের কিছু ড্রাগন ফলের চারা নিয়ে আসেন। পরবতীর্ সময়ে আমরা বিদেশে গিয়ে হাতে-কলমে এর চাষ শিখে দেশে চাষ শুরু করি।’ এখন মডানর্ হটির্কালচার সেন্টারে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা এবং চায়না থেকে আনা বিভিন্ন জাত ছাড়াও উদ্ভাবিত সবাির্ধক ১২টি জাতের দুই হাজার গাছে সবাির্ধক লাল, সাদা, গোলাপি, হলুদ এবং মাল্টি কালারÑ এই পঁাচ রঙে ড্রাগন ফল উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত ড্রাগন যাচ্ছে রাজধানীর কাওরান বাজার আর শ্যাম বাজারে। ওখান থেকে পঁাচ তারা হোটেল, অভিজাত ডিপাটের্মন্টাল স্টোর এবং সারা দেশে।

ড্রাগন চাষে লাভ বেশি

জৈব পদাথর্সমৃদ্ধ বেলে দেঁা-আশ মাটিই ড্রাগন চাষের জন্য উত্তম হলেও প্রায় সব ধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। ড্রাগন গাছের কাÐ লতানো প্রকৃতির। ড্রাগন ফল চাষ খুব সহজ। অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষিদের পরিশ্রম অনেক কম, আয় বেশি। ড্রাগন ফলের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হলো জুন-জুলাই মাস। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মে মাস থেকে অক্টোবর মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ও বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল)। এ দুটি জাত বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে। ড্রাগন চাষের জন্য কাটিং চারাই বেশি উপযোগী। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। উপযুক্ত যতœ নিলে একরপ্রতি ৬ থেকে ৭ টন ফলন পাওয়া যায। কেজিপ্রতি দাম ২০০ টাকা হলেও, যার বাজর মূল্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। খরচ ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা বাদ দিলেও নিট লাভ হবে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। আমাদের দেশে ড্রাগন ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

সফল হচ্ছেন অনেকে

ঢাকার সাভারে আশুলিয়ার মরিচকাটা গ্রামে ওই ফলচাষি প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার গাছ লাগিয়ে এরইমধ্যে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। মাত্র এক বছরের মধ্যে গাছগুলো ফলবতী হয়ে উঠছে। জানা গেছে, ফটিকছড়ির হালদা ভ্যালি চা বাগানেও ড্রাগন ফল চাষে সফলতা পাওয়া গেছে। চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাদের খান সম্পূণর্ শখের বশে ২০০৪ সালে থাইল্যান্ড সফরকালে তিনি ড্রাগন ফলের ৮০০ চারা গাছ সংগ্রহ করে আনেন। ড্রাগন ফলের দেশ হিসেবে পরিচিত থাইল্যান্ডে একটি গাছ পরিপূণর্ ফলবান হতে সময় লাগে তিন বছর। ২০০৯ সালে থাইল্যান্ড থেকে ড্রাগন ফলের চারা এনে জমিতে লাগানোর মাত্র এক বছরের মধ্যে ফল ধরতে দেখে তিনি নিজেই হতবাক হয়ে যান। তাই তিনি রপ্তানিযোগ্য এই ফলের ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে বেশ আশাবাদী।

পাহাড়ে ড্রাগন চাষ

আশার খবরটি হলোÑ রাঙামাটির কাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ড্রাগন ফলের পরীক্ষামূলক গবেষণায় সফল হয়েছেন। তাদের মতে, পাহাড়ের মাটি এই ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে এই ফলের ব্যাপক চাষাবাদ সম্ভব। পাহাড়ে বাড়ছে বিদেশি ফল ড্রাগনের চাষ। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিদেশি ফল হলেও পাহাড়ের জলবায়ু এবং মাটি দুটিই ড্রাগন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পাহাড়ে ড্রাগন ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ কম এবং পানির সেচ কম লাগায় এ চাষে আগ্রহী হচ্ছে পাহাড়িরা। স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় বান্দরবানে জুমচাষ ছেড়ে ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন পাহাড়িরা। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, চিম্বুক পাহাড়ের বসন্ত পাড়ায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে লাভবান হয়েছেন তারা।

বরেন্দ্র অঞ্চলে ড্রাগন চাষ

খরাপ্রবণ এলাকা হিসেবে বরেন্দ্র অঞ্চলে খরাসহিষ্ণু ক্যাকটাস প্রজাতির এ ফলের ফলন ভালো হওয়ায় ‘ ড্রাগন’ চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রাজশাহীর কিছু অঞ্চলে স্থানীয়দের মধ্যে অপরিচিত এ ফল চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সীমিত পরিসরে রাজশাহী অঞ্চলে ড্রাগন ফলের আবাদ শুরু হয়েছে। বিঘাপ্রতি খরচ পড়ছে ২ লাখ টাকা বছরে আয় ৫ লাখ টাকা।

ছাদে ড্রাগন চাষ

ড্রাগন ফলটি জমির পাশাপাশি বাড়ির ছাদেও চাষ করা য়ায়। বাড়ির ছাদে টবে চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুস ছালাম। আব্দুস ছালাম ২০১১ সালে এপ্রিল মাসে গাজীপুর জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা) হতে ৩টি চারা নিয়ে টবে লাগান। ২০১২ সালে ফ‚ল ফোটে ফল হয়। টবে লাগানো একেকটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম হতে ৩০০ গ্রাম পযর্ন্ত হয়। সঁাথিয়া তথা পাবনা জেলার মধ্যে তিনিই প্রথম দালানের ছাদে সফলভাবে ড্রাগন ফল চাষ করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে ড্রাগনের জাত এনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জামর্ প্লাজম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এমএ রহিম বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের ওপর নিরলস গবেষণার মাধ্যমে দেশে ফলটির আবাদ উপযোগী নতুন জাতের উদ্ভাবন করেন। পরবতীের্ত ড্রাগন চাষে সফলতা অজের্নর ফলে জামর্ প্লাজম সেন্টারের পক্ষ থেকে নাটোর, রাজবাড়ী, রাঙামাটিসহ এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রাগন চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৯ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বড়াইগ্রামে হবিদুল ইসলামের বাড়িতে বাংলাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ উদ্বোধন করেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ড্রাগন ফলের গাছ নিয়ে আসা হয়। দেশে বাণিজ্যিক ড্রাগন চাষ করা সম্ভব হলে পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিরাট অবদান রাখবে বলেও কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাদের মতে দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আবাদের জন্য বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা), বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল), হলুদ ও কালচে লাল ড্রাগন ফলে চাষ বাড়ানো যেতে পারে। খেতে সুস্বাদু পুষ্টিকর এ ফলের চাষ ব্যাপকভাবে গড়ে উঠলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ড্রাগন ফল বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে কৃষিবিদরা মনে করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<20747 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1