মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাতের নাগালে কৃষি সেবা

কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
  ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ফসল কিংবা গবাদিপশুর রোগ-বালাই নিয়ে কৃষকের উৎকণ্ঠার দিন শেষ। খামারি বা কৃষক ভাইদের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উপজেলায় আসা-যাওয়া করে কৃষি সেবার জন্য আর দুভোর্গ পোহাতে হবে না। কৃষি উন্নয়ন আরেক ধাপ এগিয়ে, কৃষি সেবা এখন গ্রামে। কৃষকরা হাতের নাগালে পাবেন সব ধরনের কৃষি সেবা। এতে কৃষকদের শ্রম, সময় ও আথির্ক সাশ্রয় হবে। সচ্ছলতা আসবে কৃষক পরিবারগুলোতে। সরকার কৃষি কাজে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রান্তিকপযাের্য় কৃষকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় স্থাপন করেছে ‘কৃষক সেবাকেন্দ্র’। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘ইউনিয়নপযাের্য় কৃষক সেবাকেন্দ্র স্থাপন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর (পাইলট) প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২১টি জেলার ২৪টি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নে এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। উপজেলাপযাের্য় প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (৩য় পযার্য়) প্রকল্পের আওতায় ২০টি ইউনিয়নে আরও ২০টি ‘কৃষক সেবাকেন্দ্র’ নিমার্ণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উপসহকারী কৃষি কমর্কতার্রা যেহেতু মাঠপযাের্য় কৃষকদের সম্প্রসারণ সেবা দিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে ইউনিয়নপযাের্য় তাদের দাপ্তরিক সেবাপ্রদান ও স্বপরিবারে বসবাসের কোনো সুযোগ না থাকায় কৃষকভাইয়েরা প্রয়োজনের সময় অনেকক্ষেত্রেই উপসহকারী কৃষি কমর্কতাের্দর কাছ থেকে সেবা পেতে কষ্ট করতে হয়। কেন্দ্রগুলো চালু হলে কৃষকের আধুনিক কৃষি তথ্যসেবা সহজলভ্য হবে। ‘কৃষক সেবাকেন্দ্র’ ইউনিয়নে ‘কৃষি সেবার ওয়ান স্টপ সেন্টার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। পাল্টে যাবে গ্রামীণ কৃষির চিত্র। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপির নিদেির্শত নকশা মোতাবেক ভবনগুলো আধুনিক ও উন্নতমানের করে নিমার্ণ করা হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় তথা কৃষিমন্ত্রীর এ দূরদশীর্ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ অধিক জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা বিধান সম্ভব হবে। রোগবালাইয়ের আক্রমণ থেকে কীভাবে ক্ষেতের ফসল রক্ষা করা যাবে বা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো যাবে, এসব পরামশর্ ছাড়াও এ সেবাকেন্দ্র থেকে কৃষকরা পাবেন কৃষি বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ। শুধু তাই নয়, কৃষক সেবাকেন্দ্রেই পাবেন সরকারি প্রণোদনায় দেয়া সার ও উন্নত মানের বীজ। সেবাকেন্দ্রগুলোতে উপসহকারী কৃষি কমর্কতাের্দর সাবর্ক্ষণিক অবস্থানের জন্য পারিবারিক আবাসন সুবিধা রাখা হয়েছে। যাতে তারা কৃষকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে কৃষির নানা বিষয়ে পরামশর্ দিতে পারেন। তিন তলা বিশিষ্ট সুসজ্জিত এ ভবনের নিচ তলায় রয়েছে কৃষক প্রশিক্ষণ ও পরামশর্ কেন্দ্র। দ্বিতীয় তলায় তিনজন উপসহকারী কৃষি কমর্কতাের্দর অফিস ও সিনিয়র উপসহকারী কৃষি কমর্কতার্র জন্য সব সুবিধাসহ পারিবারিক সরকারি বাসস্থান। তৃতীয় তলায় রয়েছে দুজন উপসহকারী কমর্কতার্র পারিবারিক সরকারি বাসস্থান। ভবনের সব ফ্লোরে টাইলস, বাসাগুলোতে ডাইনিং, ড্রইং ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য রয়েছে সৌর প্যানেল, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের সুবিধা, ফসল সংগ্রহোত্তর নিরাপদ বাজারজাতকরণ কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ সুবিধা এবং কৃষি তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতকরণের জন্য কম্পিউটার, প্রজেক্টর, ইন্টারনেট, ফটোকপিয়ার, স্ক্যানারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ইউনিয়নের কৃষির ডাটাবেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‘কৃষক সেবাকেন্দ্র’ ও সংলগ্ন খালি জমিতে আধুনিক ও উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তির এবং স্থানীয় জামর্প্লাজম সংরক্ষণের জন্য মাতৃবাগান স্থাপন এবং মিনি নাসাির্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাতৃবাগান থেকে বছরব্যাপী চারা বা কলম উৎপাদন ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের সুবিধা রাখা হয়েছে। পাবনার চাটমোহর উপজেলার পাশ্বর্ডাঙ্গা ইউনিয়নে স্থাপিত ‘কৃষক সেবাকে›ন্দ্র’ নিয়ে এলাকার কৃষকদের আগ্রহের শেষ নেই। বেশ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক জানান, আগে আমরা বাপ-দাদার আমলের চাষাবাদ করতাম। ফলন কম পাইতাম। চাষাবাদ শুরুর সময় পরামশর্ নিতে বা সার-বীজ নিতে কৃষি অফিসে যেতে অনেক সময় লাগত। কিছুদিনের মধ্যে আমরা ঘরের পাশেই কৃষি সেবা ও প্রশিক্ষণ পাবো। আমরা প্রশিক্ষিত হয়ে বেশি বেশি করে ফসল উৎপাদন করতে পারব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বতর্মানে দেশের ২৪টি ইউনিয়নে পাইলটিং আকারে ‘কৃষক সেবাকেন্দ্র’ স্থাপন করা হচ্ছে। পযার্য়ক্রমে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ‘কৃষক সেবাকেন্দ্র’ গড়ে তোলা হবে। উৎপাদনের বিভিন্ন তথ্য কৃষকদের আগেই জানাতে পারলে কৃষক সহজে তার মাঠের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবতর্ন, কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, শস্য বহুমুখীকরণ, নতুন নতুন কৃষিপ্রযুক্তি কৃষকদের ঘরে পৌঁছে দিতে ‘কৃষক সেবাকেন্দ্র’ গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রাখবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে