শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীতে সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছের পরিচযার্

খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম
  ০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

শীতকালে বাংলাদেশের প্রকৃতি সুন্দর হয়ে ওঠে নানান জাতের হরেক রঙের ফুলে ফলে। চারদিকে বাহারি ও মনোমুগ্ধকর রঙিন ফুল সৌন্দযির্পপাসুদের দৃষ্টিকে যেমন দেয় অনাবিল আনন্দে ভাসার উপলক্ষ, তেমনি মনের ক্ষুধা মেটাতে বিচিত্র সুগন্ধী ফুলের সৌরভে মনে দোলা দেয় পবিত্র অনুভ‚তি। বতর্মানে ফুল শুধু সামাজিক বা ধমীর্য় উৎসবেরই অংশ নয়, ফুল এখন গৃহসজ্জা, সুধিজনকে সম্মান প্রদশর্ন আর ভালোবাসা প্রকাশের স্বতঃস্ফ‚তর্ বহিঃপ্রকাশ। শীতকালে অনেক জাতের ফুল ছাড়াও বেশ সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছ পাওয়া যায় যেগুলো ফুলের মতোই বা ফুলের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছের বিভিন্ন রঙের ও আকারের পাতাগুলোই ফুলের মতোই আকষর্ণীয় হয়ে থাকে। শীতকালীন ফুলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ গোলাপ, গঁাদা, ডালিয়া. চন্দ্রমল্লিকা, কসমস, এস্টার, কানের্শন, প্যানজি, ভারবেনা, নেস্টারশিয়াম, ফ্লকস, পিটুনিয়া, পটুের্লকা, হলিহক, কনর্ ফ্লাওয়ার, সুইট-পি, ডায়ান্থাস, পপি, সুইট সুলতান, লুপিন, জিনিয়া, ডেইজি, এন্টিরিয়াম, ক্যানা, এলিসান। শীতকালে যেসব সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছ পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পাতাবাহার, এলোকেশিয়া, অরোকেরিয়া বা ক্রিসমাস ট্রি, থুজা, ড্রেসিনা, সাইকাস, ফানর্, দুরন্ত, স্নেক প্লান্ট, বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস ও ইউফরবিয়া উল্লেখযোগ্য।

শীতকালীন ফুল ও সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছের বেশ কিছু পরিচযার্ করার প্রয়োজন হয়। একেক ফুল ও গাছের জন্য বিভিন্ন পরিচযার্ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রয়োজন হলেও কাজগুলো প্রায় একই। এসব পরিচযার্র কাজগুলো যদি যতœসহকারে করা হয়, তাহলে শীতকালীন ফুল ও সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠবে। শীতকালীন ফুল ও সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছগুলো যেন দিনের বেলা প্রচুর আলো-বাতাস পায় সে ব্যবস্থা করতে হয়। আশপাশে উঁচু গাছের ডালপালা যদি ছায়া ফেলে তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলোর কিছু কিছু ছঁাটাই করে আলোর ব্যবস্থা করতে হয়। মনে রাখতে হবে আলোতে ফুলের উজ্জ্বলতা বাড়ে। তবে কোনো কোনো ফুল আংশিক ছায়া পছন্দ করে, বিশেষ করে দুপুরের রোদে ফুল নেতিয়ে পড়তে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। ফানর্ ও পাতাবাহারজাতীয় গাছে সকালের দিকে ২ ঘণ্টা সূযাের্লাক প্রয়োজন। ফুল ও সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছের গোড়ার মাটি যেন শুকনো হয়ে না যায়, তাহলে ফুল ও পাতা পানি শূন্যতায় নেতিয়ে পড়তে পারে এবং স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারাতে পারে। ফুলগাছে প্রতিদিন প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সেচ দিলেও সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছে শীতকালে ৩-৪ দিন পর পর হালকা সেচ দেয়া ভালো। এ ছাড়া এসব গাছের পাতা নিয়মিত পানি দিয়ে পরিষ্কার রাখা উচিত, কোনোভাবেই ধুলাবালি জমতে দেয়া ঠিক না।

মৃত, শুকিয়ে যাওয়া ও রোগ বা পোকা আক্রান্ত গাছ দ্রæত তুলে ফেলা প্রয়োজন। গাছে শুকনো ফুল বা পাতা থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হয়। বিশেষ করে দুবর্ল, চিকন ও রোগাক্রান্ত শাখা-প্রশাখা অবশ্যই কেটে ফেলতে হয়। এতে নতুন শাখা-প্রশাখা গজায়, যেগুলো নতুন পাতা ও ফুল উৎপন্ন হয়, কখনো কখনো ফুল আকারে বড়ও হয়। ছঁাটাইয়ের পর গাছে আগা মরা রোগ দেখা দিতে পারে। সেজন্য পরে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছের অপ্রয়োজনীয় শাখা-প্রশাখা কেটে ফেলতে হয়। অনেক সময় গাছের একটি নিদির্ষ্ট আকৃতি দেয়ার জন্য ফুল ও সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছ ছঁাটাই করতে হয়।

ফুল ও সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছে বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ হতে পারে। গাছ আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে স্প্রে না করে প্রথমে হাত দিয়ে আক্রান্ত অংশ ভেঙে বা কেটে সরিয়ে ফেলতে হয়। আক্রমণ বেশি হলেই বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় নিদির্ষ্ট দিন পর পর স্প্রে করতে হয়। রোপণের পর ঢলে পড়া রোগে ফুল চারা আক্রান্ত হলে কপারযুক্ত ছত্রাকনাশক, শিকড় পচা রোগে আক্রান্ত গাছে কাবের্ন্ডাজিমজাতীয় ছত্রাকনাশক, সাদাগুঁড়া রোগে ডালিয়া, দোপাটি, সুইটপি, জিনিয়া, লুপিন প্রভৃতি ফুলগাছ আক্রান্ত হলে সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক এবং ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, সূযর্মুখী ফুলগাছ বাদামি পোড়া রোগে আক্রান্ত হলে মেনকোজেব বা কাবের্ন্ডাজিমজাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যেতে পারে। এ ছাড়া পাতা কেঁাকড়ানো ও হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগে আক্রান্ত গাছ তুলে মাটির গভীরে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হয়।

বিভিন্ন ধরনের শোষক পোকা যেমনÑ জাবপোকা, জ্যাসিড, থ্রিপস বা চোষী পোকা ও ছাতরা পোকা বা মিলিবাগ ফুল ও সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছের পাতা, কচি ডগা বা কাÐ, কুঁড়ি, পুষ্পমঞ্জুরি ও ফুল আক্রান্ত হলে নিম বা তামাক পাতার ১০০ মিলিলিটার রস ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যায়। আক্রমণ বেশি হলে ০.১% হারে ম্যালাথিয়ন জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। শক্ত ডানা ও চোয়ালের পূণার্ঙ্গ বা অপূণার্ঙ্গ বিটল পোকা ফুল ও সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছের পাতা ও অন্যান্য অংশ খেয়ে ফুটো করে বা কুরে কুরে খেয়ে ঝঁাঝরা করে বা জাতের মতো করে ফেলে। এ পোকা দমনে অ্যাসিফেট বা ক্লোরপাইরিফস বা প্রোফেনোফসজাতীয় কীটনাশক ০.০৭৫% হারে স্প্রে করতে হয়। মাকড় পাতার নিচের দিকে জাল না বুনে বাস করে এবং পাতার রস চুষে খায়। মাকড় নিয়ন্ত্রণে সালফারযুক্ত বালাইনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।

এ ছাড়া ফুল ও সৌন্দযর্বধর্নকারী গাছের মূল বা মাটি সংলগ্ন অংশ খেয়ে গাছের ক্ষতি করে। গাছের গোড়ায় কেরোসিন মিশ্রিত ছাই ছিটিয়ে পিঁপড়া ও উইপোকা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। নিয়মিত সেচ দিলে বা গাছের গোড়া ভেজা ভেজা থাকলে এদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

লেখক: উদ্যান বিশেষজ্ঞ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর অঞ্চল, রংপুর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<24978 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1