শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নকলায় ১৬ হাজার ইঁদুর নিধন

রফিক মজিদ, শেরপুর
  ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

‘ঘরের ইঁদুর মাঠের ইঁদুর ধ্বংস করে অন্ন, সবাই মিলে ইঁদুর মারি ফসল রক্ষার জন্য’ এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দেশব্যাপী চলেছে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান। এই ইঁদুর নিধন অভিযানের অংশ হিসেবে শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় চলছে ইঁদুর নিধন অভিযান কাযর্ক্রম। ইতোমধ্যে বিগত ১৬ মাসে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার ইঁদুর নিধন করেছে উপজেলার ভূরদী খন্দকার পাড়া গ্রামের কৃষকরা।

জানা গেছে, উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভ‚রদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার কৃষক সদস্যরা দিনের অন্তত ২ ঘণ্টা ইঁদুর নিধনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ওই সংস্থার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ২০১৭ সালে একটি দৈনিক পত্রিকা মারফত জানতে পারেন কোনো এক কৃষক সংগঠন সবোর্চ্চ সংখ্যক ইঁদুর মেরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কতৃর্ক পুরস্কৃত হয়েছেন। এটা দেখে তারা উদ্বুদ্ধ হন। পরবতীর্ সাপ্তাহিক সভায় তারাও ইঁদুর নিধনের জন্য সবর্সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকেই শুরু হয় তাদের ইঁদুর নিধন কাযর্ক্রম। ইঁদুর নিধনে তারা রেকডর্ গড়তে চান।

সংস্থার রেজিস্ট্রারের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে চলতি বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পযর্ন্ত অথার্ৎ গত ১৬ মাসে ‘ভ‚রদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদস্যরা ১৬ হাজার ৬৫৪টি ইঁদুর মেরে এলাকার সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ওই সংস্থার সদস্যরা জানান, তাদের ইঁদুর নিধন কাযর্ক্রম দেখে সবর্সাধারণ নিজে থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইঁদুর নিধনে অংশ নিয়েছেন। তারা আরও জানান, ইঁদুর নিধন করায় তাদের ফসলের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। দিনে ২ ঘণ্টা করে ইঁদুর নিধনে ব্যস্ত থাকায় তাদের যে সময়টুকু ব্যয় হয়েছে, তাতে তাদের ফসল উৎপাদনে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়েনি, বরং ফসল উৎপাদনের হিসাবে দিনে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা কাজ করার উপকার হয়েছে বলে তারা দাবি করছেন।

ইঁদুর নিধনের পরে ওইসব ইঁদুর ধ্বংস করার বিষয়ে সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন জানান, ইঁদুর মারার পরে সংস্থার রেজিস্ট্রার দিন তারিখ উল্লেখ করে ইঁদুরের সংখ্যা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে রাখেন। তাদের সাপ্তাহিক সভায় এক সপ্তাহে যে কৃষক সদস্য সবোর্চ্চসংখ্যক ইঁদুর মারেন তাকে সংস্থার পক্ষ থেকে সাধ্যানুযায়ী পুরস্কৃত করা হয়। তা ছাড়া ইঁদুর মারার বিষয়টি তথা নিধনকৃত ইঁদুরের সংখ্যা নিয়মিত উপজেলা কৃষি অফিসে জানান তারা। বিশেষ করে সদ্য বিদায়ী উপজেলা কৃষি কমর্কতার্ কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর এবং কৃষি সম্প্রসারণ কমর্কতার্ কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ ও উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কমর্কতার্ আতিকুর রহমানকে জানিয়ে মৃত ইঁদুরগুলো মাটিতে পুঁতে রাখতেন বলে জানান ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মো. ছাইদুল হক।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ভ‚রদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদ্য বিদায়ী সভাপতি মোশারফ হোসেন জানান, তাদের সংস্থা শুধু কৃষিপণ্য উৎপাদন ও উন্নয়নেই কাজ করেন না, তারা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজ করেও এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দরিদ্র মেধাবীদের সহায়তা করা, কন্যা দায়গ্রস্ত বাবা-মাকে সহায়তা করা, রাস্তার পাশে ও মসজিদ মাদ্রাসার অঙ্গীনায় বিভিন্ন গাছ রোপণ করা, শীতাতের্দর মাঝে শীত নিবারনের কাপড় বিতরণসহ ন্যূনতম সহায়তা করার মতো বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজ করে আসছেন তারা।

উপজেলা কৃষি কমর্কতার্ কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, ভ‚রদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার বছরব্যাপী ইঁদুর নিধন অভিযানের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। তাদের দেখাদেখি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কৃষক সংগঠনের সদস্যরাও ইঁদুর নিধনের কাজ হাতে নিয়েছেন বলে জানান মাঠ পযাের্য়র কৃষি কমর্কতার্রা। ইঁদুর নিধনের জন্য ওই কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার কৃষকদেরসহ উপজেলার অন্যান্য কৃষকদের মাঝে ইঁদুর মারার যন্ত্র বা বিষ টোপ বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ইঁদুর বছরে কৃষকদের যে পরিমাণ খাদ্য শস্য, শাক-সবজি ও গৃহস্থালীসামগ্রী নষ্ট করে, তা অকল্পনীয় ও অপূরণীয়। তাই কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ও ইঁদুর নিধন অভিযানে সব কৃষকদের সংশ্লিষ্ট করতে প্রতিবছর সরকারিভাবে তথা কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তরের আয়োজনে কৃষকদের অংশগ্রহণে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান পালন করা হয়। চলতি বছর বতর্মান মাসে ইঁদুর নিধন অভিযান চলেছে বলে তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<26105 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1