বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আমগাছ ও মকুলের যতেœ করণীয়

নিতাই চন্দ্র রায়
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মাঘের শেষে সারাদেশে আমগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই আমের মুকুলের মিষ্টি গন্ধে সুবাসিত হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। মুকুলের যতœ না নিলে আমের ভালো ফলন সম্ভব নয়। অনেকেই শখ করে আমগাছ রোপণ করি ভালো ফলনের আশায় কিন্তু সময় মতো সামান্য যতেœর অভাবে এবং পোকা ও রোগের আক্রমণের কারণে আমাদের সেই আশা পূরণ হয় না; আমের মুকুল ও গুটি ঝড়ে যায়। অথচ সময় মতো একটু যতœ নিলেই আমরা পেতে পারি সুস্বাদু আমের স্বাদ।

আমগাছে বষার্র আগে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে একবার এবং বষার্র পর আশ্বিন-কাতির্ক মাসে আর একবার সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের নিচে যতটুকু স্থানে গাছের ছায়া পড়ে, ততটুকু স্থানের মাটি কুপিয়ে এই সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পরপরই হালকা সেচ দিতে হবে। গাছের বয়স ১ থেকে ৪ বছর হলে গোবর ১৫ কেজি, ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমওপি ১০০ গ্রাম, জিপসাম ১০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১০ গ্রাম, ও বরিক এসিড ২০ গ্রাম দুই ভাগ করে বষার্র আগে ও পরে প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স ৮ থেকে ১০ বছর হলে গোবর ২৫ কেজি, ইউরিয়া ৭৫০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম, জিপসাম ২৫০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১৫ গ্রাম ও বরিক এসিড ৩০ গ্রাম এবং গাছের বয়স ১১ থেকে ১৫ বছর হলে গোবর ৩০ কেজি, ইউরিয়া ১০০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ৪০০ গ্রাম, জিপসাম ৩৫০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১৫ গ্রাম ও বরিক এসিড ৩০ গ্রাম একই নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া গাছের বয়স ১৬ থেকে ২০ বছর হলে গোবর ৪০ কেজি, ই্উরিয়া ১৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৭৫০ গ্রাম, এমওপি ৫০০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম জিংক সালফেট ২০ গ্রাম ও বরিক এসিড ৪০ গ্রাম বছরে দুই বারে প্রয়োগ করতে হবে।

আমের মুকুল ফোটার শেষ পযাের্য় একবার এবং আম দানার মতো হলে আর একবার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ করতে হবে। ফুল আসার সময় শোষক পোকা আমের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। এরা কচি ডগা ও মুকুল থেকে রস চুষে খায়। ফলে মুকুল শুকিয়ে বিবণর্ হয়ে ঝরে যায়। এ ছাড়া এ পোকার নিম্ফগুলো রস চোষার সময় আঠালো মধুরস নিঃসরণ করে, যা মুকুলে আটকে গিয়ে পরাগায়ন ব্যাহত করে এবং মুকুলে কালো ছত্রাকের জন্ম দেয়। এ পোকা দমনের জন্য আম গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে একবার এবং আম আমগাছ দানার মতো হলে আর একবার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি ল্যাম্বডা সাইহ্যালোথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (রিভা ২.৫ ইসি অথবা ক্যারাটে ২.৫ ইসি) মিশিয়ে আম গাছের ডাল, পাতা ও মুকুলে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। আমের মাছি পোকা দমনের জন্য প্রতি গাছে একটি করে ব্যাকটোডি নামের ফেরোমন ফঁাদ লাগানো যেতে পারে। আমের ফল ছিদ্রকারী পোকার কিড়া শঁাস খেয়ে আমের ক্ষতি করে। এ পোকা দমনের জন্য আমের গুটি মাবের্ল আকার ধারণ করলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ফলিথিয়ন ৫০ ইসি মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করতে হবে।

অ্যানথ্রাকনোজ ও পাউডারি মিলডিঊ রোগের কারণে আম গাছের মুকুল ঝরে যেতে পারে। তাই এ রোগ দমনের জন্য মুকুল আসার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে একবার এবং আম আমগাছে দানার মতো হলে আর একবার প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট, ২৫০ ইসি অথবা ২ গ্রাম অটোস্টিন, ৫০ ডবিøউ ডি জি মিশিয়ে গাছের ডালপালা ও মুকুলে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া আমের মুকুলও ফল ঝরা রোধে প্রতি লিটার পানিতে এক মিলি মিরাকুলান মিশিয়ে ফুল ফোটার ঠিক আগে একবার এবং আম মটর দানার আকৃতি ধারণ করলে আর একবার স্প্রে করা যেতে পারে।

আমের বৃদ্ধি পযাের্য় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। বষার্র শেষে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম হারে বরিক এসিড অথবা ১০০ গ্রাম হারে বোরাস্ক সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের গোড়ার মাটিতে বোরণ প্রয়োগ করা সম্ভব না হলে আমের মুকুল আসার আগে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম সলোবর মিশিয়ে গাছে স্প্রে করলেও সুফল পাওয়া যাবে।

লেখক: সাবেক মহাব্যস্থাপক (কৃষি), নথের্বঙ্গল সুগার মিল, গোপালপুর , নাটোর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<35944 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1