শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাভীর প্রয়োজনীয় পরিচযার্

যতেœই রতœ। তবে তা সময়মতো হওয়া চাই। প্রসবকালীন সময়ে বিশেষ যতেœর মাধ্যমেই হতে পারে গাভীর কাক্সিক্ষত উৎপাদন, সেই সঙ্গে সুস্থ-সবল বাছুর। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে...
নাহিদ বিন রফিক
  ২২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

প্রজননের মাধ্যমে একটি গাভী নিদির্ষ্ট সময়ে বাচ্চা প্রসব করে। গাভী ও বাছুরের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ওই মুহূতের্ বিশেষ যতেœর প্রয়োজন। গাভীর বাচ্চা প্রসব হবে তখনই; যখন ওলান বড় হবে, যোনিমুখ বেশ প্রশস্ত হয়ে ঝুলে পড়বে। গাভী বারবার ওঠাবসা করবে। এমন সময় গাভীর যোনিমুখে বাছুরের সামনের দু’পা দেখা যাবে। এ অবস্থায় খুবই সতকর্তার সঙ্গে বাছুরকে আস্তে আস্তে বের করে আনতে হয়। এবার জেনে নেয়া যাক কীভাবে গাভী এবং বাছুরের প্রতি বিশেষ যতœ নিতে হবে, সেসব কথা।

যে স্থানে বাচ্চা প্রসব করানো হবে সেটি খোলামেলা এবং নিরিবিলি এমন জায়গা হওয়া চাই। স্থানটিতে শুকনো খড়ের নরম বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা হতে হবে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত। প্রসবের সময় বিকট শব্দ কিংবা কোনো প্রাণির চিৎকার দ্বারা পরিবেশকে অশান্ত করা যাবে না। জরায়ুতে বাছুরের সামনের দু’পা এবং মাথার অবস্থান যদি সম্মুখভাগে না হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি অস্বাভাবিক প্রসব। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ভেটেরিনারি সাজের্নর সাহায্য নিতে হবে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাছুরকে পাটের চটের ওপর রেখে নাক-মুখের শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে দিতে হবে। যদি শ্লেষ্মা বের না হয় তাহলে বাছুরের পেছনের দু’পা ধরে উপরের দিকে উঁচু করলেই তা বেরিয়ে আসবে। তবে বাছুরকে ওর মায়ের সামনে দিলেই সবচে ভালো হয়। এতে গাভী তার বাচ্চার নাক-মুখসহ শরীরের অন্যান্য অংশ চেটে পরিষ্কার করে দেবে। বাছুরের নাভি ঝরে না পড়লে অথবা লম্বা হলে দু’ইঞ্চি রেখে বাকি অংশ ধারালো ছুরি বা বেøড দিয়ে কেটে সেস্থানে ডেটল বা সেভলন লাগাতে হবে। নয়তো নাভির মাধ্যমে রোগজীবাণু সংক্রমিত হয়ে ধনুস্টংকার কিংবা নাভিফোলা হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

প্রসবের পরপরই একটি বালতিতে কুসুম গরম পানির সঙ্গে দেড় কেজি পরিমাণ গমের ভুসি, আধা কেজি চিটাগুড়, আধা কেজি ভাতের মাড় এবং ৫০ গ্রাম লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে গাভীকে খেতে দিতে হবে। এ জাতীয় খাদ্য খাওয়ালে গাভীর গভর্ফুল তাড়াতাড়ি পড়ে যেতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া কুসুমগরম পানিতে ঝোলাগুড় মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। প্রসবের পর জীবাণুনাশক ওষুধ পানিতে মিশিয়ে গাভীর পেছনের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। গাভীর ফুলপড়া নিয়ে অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হয়। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফুল না পড়ে তাহলে অভিজ্ঞ প্রাণিচিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। কারণ যথাসময়ে না পড়লে তা পচে জরায়ুতে পুঁজ জমতে পারে। ফুল পড়ে গেলে মাটিতে গতর্ করে পুঁতে ফেলতে হবে। গাভীর ওলানে বেশি পরিমাণে দুধ থাকলে বার বার দোহন করতে হয়। তা না হলে ওলানপাকা রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাছুরকে প্রথমেই গাভীর গাঢ় লালচে বণের্র শাল দুধ খাওয়াতে হবে। এ ধরনের দুধকে কঁাচলা দুধও বলে। এ দুধ না খাওয়ালে ওলান শক্ত হয়ে প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই দুধের বঁাটসহ ওলান এবং গাভীর তলপেট কুসুমগরম পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা বাঞ্ছনীয়। লালচে রঙের এ দুধ অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং রোগপ্রতিরোধক। সাধারণ দুধের চেয়ে ৩-৫ গুণ আমিষ থাকে। ক্যারোটিন আছে ৫-১০ গুণ। সে সাথে অন্যান্য ভিটামিনের পরিমাণও বেশি। বিভিন্ন খনিজ পদাথর্ যেমন: আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাংনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে । শাল দুধ বাছুরের পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে। ফলে স্বাভাবিক মলত্যাগে সুবিধা হয়।

কথার আছে, যতেœই রতœ। তবে তা সময়মতো হওয়া চাই। প্রসবকালীন সময়ে বিশেষ যতেœর মাধ্যমেই হতে পারে গাভীর কাক্সিক্ষত উৎপাদন, সেই সঙ্গে সুস্থ-সবল বাছুর। এ বিষয়ে নিজে সচেতন হতে হবে। অপরকেও করতে হবে উৎসাহিত।

লেখক : টেকনিক্যাল পাটিির্সপেন্ট, কৃষি তথ্য সাভির্স, বাংলাদেশ বেতার, বরিশাল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<4500 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1