শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাগ্য বদলেছে কেঁচো কম্পোস্ট

নতুনধারা
  ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
কালীগঞ্জের নিয়ামতপুর ইউনিয়নের দাপনা গ্রামের ১০৫ পরিবারের মধ্যে ১০০ পরিবারের নারীরাই কেঁচো কম্পোস্ট তৈরির সাথে জড়িত

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৪নং নিয়ামতপুর ইউনিয়নের দাপনা গ্রাম। অন্য আর একটি গ্রাম থেকে একটু ব্যতিক্রম উপজেলার দাপনা গ্রামটি। এই গ্রাম এখন কেঁচো আর কম্পোস্ট সারের গ্রামে পরিণত হয়েছে। শতভাগ বাড়িতে এখন কম্পোস্ট সার উৎপাদন হচ্ছে। এই গ্রামে ১০৫ পরিবারের মধ্যে ১০০ পরিবারের নারীরা এই পেশার সঙ্গে জড়িত। এসব নারীরা সবাই গৃহিণী। এ গ্রামের মানুষ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে নিজেদের উৎপাদিত পরিবেশবান্ধন কম্পোস্ট সার দিয়েই চাষাবাদ করছে। এই গ্রামের নারীরা প্রতি মাসে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার সার ও ৫ লাখ টাকা পরিমাণের কেঁচো উৎপাদন করছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তাদের উৎপাদিত কম্পোস্ট সার সৌদি আরব, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে। বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজের শেষে তারা এই কাজ করে থাকে। এই কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন জাপানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড ও উপজেলা কৃষি অফিস।

এখন আর স্বামীর কাছ থেকে কোনো টাকা নিতে হয় না। কেঁচো কম্পোস্ট সার বিক্রির আয় দিয়ে সংসারে সহযোগিতা করি। সংসারে কোনো কিছু কিনতে গেলে আমাদের রোজগারের টাকা দিয়ে কিনে থাকি। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ দিয়ে সহযোগিতা করি। এভাবেই বলছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলার দাপনা গ্রামের কৃষানি রেবেকা বেগম, সুখজান ও রিজিয়া বেগম।

রেবেকা, সুখজান, সোনাভান, নাজমা, শাহনাজ, শাহিদার মতো প্রায় ১০০ নারী, যাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই রয়েছে পাকা হাউস কিংবা মাটির চাড়ি। প্রতিদিন এই গ্রাম থেকে কয়েকশ মন উন্নতমানের কম্পোস্ট সার চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ইতোমধ্যে এই গ্রামকে কেঁচো আর কম্পোস্টের গ্রাম হিসেবেও পরিচিত পেয়েছে। গত কয়েক বছরে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থীরা গ্রামটি পরিদর্শনে এসেছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বের প্রত্যন্ত পলস্নী গ্রাম দাপনা। এই গ্রামের নারীরা খুবই কর্মঠ। প্রত্যেকের বাড়িতেই দুই থেকে পাঁচটি পর্যন্ত গরু রয়েছে। তারা তাদের গরুর গোবর কাজে লাগিয়ে সার তৈরি করছে। যে সার পরিবেশবান্ধব। এই গ্রামে শতভাগ বাড়িতে কম্পোস্ট পস্নান্ট বানাতে পরামর্শ সহযোগিতা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন রেবেকা, সুখজান, শাহনাজ ও সোনাভান নামের ৫ নারী। তারা সবাই কৃষিতে সফল। প্রথম পর্যায়ে হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতায় এই কাজ শুরু করেন এ গ্রামের নারীরা। তোরা ঘরের মধ্যে, রান্নাঘরে, বারান্দায়, গোয়াল ঘরে, বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় এসব কম্পোস্ট পস্নান্ট তৈরি করে সার উৎপাদন করছেন।

তাদের উৎপাদিত কম্পোস্ট সার নিজেদের জমিতে ব্যবহার করে বাকিটুকু বিক্রি করছে। দেশের যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সিরাজগঞ্জ, কুমিলস্নার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ট্রাক ভরে সার ও কেঁচো ক্রয় করে নিয়ে গিয়ে পরে সেগুলো প্যাকেটিং করে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছে। কেঁচো কম্পোস্ট সার বিশেষ করে ধান, পান, সবজি জাতীয় চাষাবাদে বেশি উপকার পাচ্ছে।

কৃষানি সুখজান ও তার ছেলের বৌ রিজিয়া বেগম মিলে তারা কম্পোস্ট পস্নান্ট তৈরি করেছেন। তাদের বাড়িতে প্রায় ৩শ মাটির চাড়ি রয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে ৩০-৩৫ মণ সার উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি কেজি সার ৮-১০ টাকায় তারা বিক্রি করেন। এবং এক কেজি কেঁচো বিক্রি করেন ১ হাজার টাকায়। তারা বলেন, কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করতে বেশি টাকা খরচ হয় না। দরকার আগ্রহ। গরুর গোবর, লতাপাতা, কলাগাছ আর কেঁচো এই দিয়েই প্রতি তিন মাস অন্তর সার উৎপাদন করা হয়। এই সারের গুণগত মানও ভালো। যশোর মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রে তারা এ জৈব সার পরীক্ষা করে দেখেছেন। বাজারের যে সব টিএসপি পাওয়া যায় তার মান ৪৫% অন্যদিকে কম্পোস্ট সার বা অর্গানিক সারের মান ৮৫% (সার্বিক)।

গৃহিণী সোনাভান জানান, আমাদের স্বপ্ন আর যেন কেউ রাসায়নিক সার ব্যবহার করে জমিগুলো নষ্ট না করে। আমরা সারা বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিতে চাই নিজেদের তৈরি সার জমিতে ব্যবহার করেই স্বাবলম্বী হওয়া যায়। বাড়ির পুরুষরা আমাদের সহযোগিতা করে। এই গ্রামের প্রত্যেক নারীর হাত খরচ, চিকিৎসার টাকা স্বামীদের কাছ থেকে নিতে হয় না।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম জানান, কম্পোস্ট সার পরিবেশবান্ধব। এই সার জমিতে পরিমাণে বেশি লাগে তবে ফসল ভালো হয়। এই গ্রামের কৃষানিরা নিজেদের উৎপাদিত সার জমিতে ব্যবহার করছে এটা ভালো উদ্যোগ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46220 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1