বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিশ্র ফলচাষে সফল শামছুল আলম

উত্তম আর্য্য, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)
  ২১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
নিজের ড্রাগন ফলের বাগানে শিক্ষক শামসুল আলম - যাযাদি

শামসুল আলম পেশায় শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন বিষমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফলজ গাছের বাণিজ্যিক বাগান। আর তার বাগানে বর্তমানে বিষমুক্ত হরেক রকমের ৭৮টি ফলজ গাছ রয়েছে। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নে চাপড়ী গ্রামে। স্কুল শিক্ষক শামছুল আলম কেমিক্যালমুক্ত মিশ্র ফলচাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তিনি ৭ একর জমিকে প্রায় দেশি-বিদেশি ৭৮ জাতের ফলজ গাছ লাগিয়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। পেশায় শিক্ষক হলেও কৃষি কাজের প্রতি রয়েছে তার প্রবল আগ্রহ ও অদম্য চেষ্টা। তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পাহাড়ি মাটিতে কেমিক্যালমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফলচাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন।

ঘাটাইল এসই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক শামছুল আলম। কৃষি শিক্ষক হওয়ার সুবাদে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি হাতে-কলমে শিক্ষাদানের জন্য একটি ফলের বাগান করেন। এ বাগান থেকেই মনে প্রবল আগ্রহ দেখা দেয় বাণিজ্যিকভাবে কেমিক্যালমুক্ত ফলচাষ করার।

পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ৭ একর জায়গার উপরে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নিজ হাতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গড়ে তোলেন দেশি-বিদেশি ৭৮ প্রজাতির ফলদ বৃক্ষের বিশাল বাগান। আর এ বছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সফল হয়েছেন। বাজারেও তার ফলের চাহিদা ব্যাপক। তবে সরকারিভাবে আরও সহযোগিতা পেলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কেমিক্যালমুক্ত ফলের বিস্তার ঘটাতে পারবেন বলে মনে করছেন সফল মিশ্র ফলচাষি শামছুল আলম। তার বাগানে প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

তার বাগানে লাগানো ফল গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে- আম, মাল্টা, কমলা, জাম, লিচু, কলা, কাঁঠাল, আনারস, আমলকী, জামরুল, শরিফা, অরবরই, সফেদা, পেয়ারা, আতা, ডালিম, চালতা, কামরাঙ্গা, জলপাই, নারিকেল, পিচফল, মালবেরী, লেবু, পেঁপে, চেরিফল, কদবেল, করমচা, কাউফল, হেমফল, বাতাবি লেবু, তেঁতুল, কাঠলিচু, তাল, বেল, আমড়া, বাউকুল, বিলম্বি, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম, মোসম্বি, ছাগল নাদা, তিতিজাম, গাব, বাঙ্গি, লুকলুকি।

এ ছাড়া বিদেশি ফলের মধ্যে সৌদি খেজুর, ভিয়েতনামি ওপি নারিকেল, ড্রাগন ফল, ত্বীনফল, কালো আঙ্গুর, আপেল, রামবুটান, নাশপাতি, এগফ্রুট (সাউথ আফ্রিকা), ডুরিয়ান (মালয়েশিয়ার জাতীয় ফল), অ্যাভোকাডো, ম্যাংগোস্টিন, কফি, মিরাক্কেল, থাই বাতাবি লেবু, চায়না কমলা, চায়না লিচু, চায়না পেয়ারা, থাই পেয়ারা, লকেট, সুদানী শরিফা, জাপটিকাবা, আলু বোখারা, পামফল, পামওয়েল, বিলেতি গাব, অ্যানোনিয়া, সাতকরা, ব্রনাই, কিং আম, ব্যানানা ম্যাংগো, কিউজাই আম (থাইল্যান্ড), অ্যামেরিকান সুন্দরি আম। বারোমাসি ফল- বারোমাসি আম (৪ জাত), বারোমাসি পেয়ারা, বারোমাসি কাঁঠাল, বারোমাসি আমড়া, বারোমাসি কামরাঙ্গা, বারোমাসি পেঁপে, বারোমাসি কলা, বারোমাসি লেবু, বারোমাসি চেরিফল। মসলা- সাদা এলাচ, কালো এলাচ, তেজপাতা, পোলাও পাতা। ঔষধি- কালোমেঘ, তুলসী, অ্যালোভেরা, শ্বেতমূলি, ধুতুরা, গ্যাস্টিক গাছ। কাঠগাছ- সেগুন, মেহগনি, জারুল, গামাই, লম্বু, পলাশ, দেবদারু, একাশি। শৌখিন গাছ- পান, সুপারি, বিভিন্ন ধরনের ফুল। সবজি- বিভিন্ন ধরনের সবজি তার বাগানে রয়েছে।

শিক্ষক শামছুল আলম বলেন, 'কাঠবিড়ালী আমার বাগানের ফল খেয়ে নষ্ট করে ফেলছে। এমনকি মুকুল ও ফুল ফোটা থেকে শুরু করে কোনো কোনো গাছের ফুল পর্যন্ত খেয়ে ফেলছে। বাগানের প্রধান সমস্যা হলো সেচ সমস্যা। পাহাড়ি মাটি হওয়ায় মাটির পানি ধারণক্ষমতা কম তাই শুষ্ক মৌসুমে বেশি সেচ দিতে হয়। ৭ একর জমি সেচের আওতায় আনার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার নাই। গত বছর সেচের অভাবে বাগানে অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক গাছে আগের বছর ফল ধরলেও সেচের অভাবে এ বছর ফল ধরেনি।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারিভাবে যদি আমি একটি সেচ প্রকল্প পাই তাহলে আমার সম্পূর্ণ ফল বাগানে বিভিন্ন ফলের বাম্পার ফলন ফলাতে সক্ষম হবো। আমি চাই আমার বাগানটি হবে জীবন্ত সংগ্রহশালা। আমি দেশি-বিদেশি উন্নত ফলের চারা উৎপাদন করে স্বল্প মূল্যে চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেবো।

সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে বাজারে দেশীয় ফলের অভাব দেখা যায়। তখন বিদেশি ফলের ওপর নির্ভরশীল থাকে ফল বাজার। আমি চাচ্ছি সারা বছর দেশীয় ফল, বাজার সয়লাব করবে এবং বিদেশি ফলের ওপর যেন নির্ভরশীল না হতে হয়। আমি বিদেশি ফলই দেশে চাষ করে বাজারে বিদেশি ফলের সরবরাহ বাড়াব। আমাদের যেন আর বিদেশ থেকে ফল আমদানি না করতে হয়, আমরা যেন দেশের ফলই বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। আমার বাগানে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসছেন বাগান দেখতে ও ফল কিনতে। অনেকে বাগান করার পরিকল্পনাও করতে আমার পরামর্শ চাচ্ছেন।'

ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন বিশ্বাস বলেন, 'শামছুল আলম একজন সফল মিশ্র ফলচাষি, পাশাপাশি তিনি একজন শিক্ষকও। তাকে আমরা নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তিনি উৎসাহী হয়ে ৭৮ প্রজাতির দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের ফল তার বাগানে চাষাবাদ করে আসছেন। তিনি নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।'

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক শামসুল আলম বিষমুক্ত ফলচাষ করে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি একই সঙ্গে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিষমুক্ত ফল উপহার দিচ্ছেন। তাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59075 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1