বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসমান বীজতলায় চারা উৎপাদন

কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
  ১১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

বন্যা ও জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি এবং ক্ষেত্র বিশেষে আপদকালীন সময়ে আমন ধানের চারা উৎপাদন সম্প্রসারণে নতুন যুগের সূচনা করেছে। টানা বৃষ্টি ও নদনদীর পানি বৃদ্ধির কারণে দেশের কিছু এলাকা বর্তমানে বন্যায় আক্রান্ত। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে কিছু স্থানে বীজতলায় রোপা আমনের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। ফসলহানি থেকে রক্ষার জন্য ভাসমান বীজতলায় রোপা আমনের চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। বন্যার পানি নামতে দেরি হলে বা বীজতলা তৈরির উপযোগী জমি না থাকলে নদী, বিল, পুকুর বা জলাবদ্ধ স্থানে পানির উপর কচুরিপানা বা কলাগাছের ভেলা তৈরি করতে হবে। ভেলা বা কচুরিপানার উপর নারিকেল বা সুপারি গাছের শুকনা পাতা অথবা চাটাই বিছিয়ে দিতে হবে। এর ওপর জলাধারের তলদেশের মাটি বা কাদার ৩-৪ সেমি স্তর দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম জাগ দেয়া রোপা আমনের বীজ ফেলতে হবে। স্বাভাবিক বীজতলার মতোই পরিচর্যা করতে হবে। চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে চারা উঠিয়ে মাঠে রোপণ করা যেতে পারে। সতর্কতা হচ্ছে- বীজ ছিটানোর পর সতর্ক থাকতে হবে যেন হাঁস বা পাখি বীজতলা নষ্ট করতে না পারে। এ জন্য চারিদিক নেট বা জাল দিয়ে ঘেরা দিতে হবে। পানিতে ভাসমান বেড যেন ভেসে না যায় সে জন্য বীজতলার ভেলাকে দড়ি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখতে হবে। চারার বয়স বেশি করা যাবে না। অন্যথায় চারার শিকড় কচুরিপানার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে এবং তোলার সময় ছিঁড়ে যাবে।

বন্যাকবলিত এলাকায় ভাসমান বেডে আমন ধানের বীজতলা করা যায়। ভাসমান বেডে ধানের বীজতলা করলে পানিতে ডুবে থাকা জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার পরপর কিংবা ডুবোজমি জেগে উঠার পর দেরি না করে ২০ থেকে ২৫ দিন বয়সী আমনের চারা মূল জমিতে লাগানো যায়। এতে সময় নষ্ট হয় না, সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আমন আবাদ করা যায়। আমন ফলনেও তেমন ব্যাঘাত ঘটে না। বৃষ্টি আর বন্যার কারণে যেখানে আমনের বীজতলা করা যায় না সেখানেও বর্ষা বা বন্যার পানি টান দিলে সময় নষ্ট না করে ভাসমান বেডে উৎপাদিত আমন ধানের চারা দিয়ে যথাসময়ে এসব জমিতে আমন আবাদ কর যায়। এতে সময় সাশ্রয় হয়, বহুমুখী লাভ হয়। এ প্রযুক্তিটি ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এতে কৃষি আর কৃষকদের বহুমুখী লাভ হচ্ছে।

ভাসমান বেড তৈরির প্রধান উপকরণ কচুরিপানা। এ ছাড়া টোপাপানা, শেওলা, বিভিন্ন ধরনের জলজ আগাছা, দুলালিলতা, ধানের খড় বা ফসলের অবশিষ্টাংশ, আখের ছোবড়া, ডাস্ট ব্যবহার করে ভাসমান বেড তৈরি করা যায়। পরিপক্ব গাঢ় সবুজ রঙের বড় ও লম্বা কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করলে বেডের স্থায়িত্ব বেশি হয়। যেখানে দুলালিলতা পাওয়া যায় না সেখানে দুলালিলতার পরিবর্তে পাটের তৈরি দড়ি দিয়ে বল মেডা তৈরির করা হয়। এ ছাড়া নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া চারা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।

ভাসমান বীজতলার ক্ষেত্রে অন্য স্বাভাবিক বীজতলার মতোই বীজের হার প্রতি বর্গমিটারে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম হবে। এ ক্ষেত্রে এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ৩৫ বর্গমিটার বা প্রায় ১ শতক ভাসমান বীজতলার চারা ব্যবহার করা যায়। চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিনের হলে চারা উঠিয়ে মাঠে রোপণ করা যেতে পারে। এতে দানের চারা উৎপাদনের জন্য আর মূল জমি ব্যবহার করতে হয় না। জমি ব্যবহার সাশ্রয়ী হয়। জেগে উঠা খালি জমিতে তাড়াতাড়ি কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এভাবে তৈরি চারা অন্যসব স্বাভাবিক চারার মতোই রোপণ করতে হবে এবং পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা অন্য স্বাভাবিক বীজতলার চারার মতোই হবে। উৎপাদিত চারা অন্য সব স্বাভাবিক চারার মতোই ফলন দেয়। পানিতে ভাসমান থাকার জন্য এ বীজতলায় সাধারণত সেচের দরকার হয় না, তবে মাঝে মধ্যে প্রয়োজনে ছিটিয়ে পানি দেয়া যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62113 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1