শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
পবিপ্রবি গবেষকদের সাফল্য

নারিকেল-সুপারির ব্যাগওয়ার্ম শনাক্ত

লেপিডোপটেরা বর্গের সিকিডি পরিবারে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩৫০টি প্রজাতির ক্ষতিকারক ব্যাগওয়ার্ম পোকা রয়েছে। যাদের মধ্যে মাহাসিনা করবেটি নামক প্রজাতির ব্যাগওয়ার্মটি মারাত্মক ক্ষতিকারক। এ প্রজাতির পোকা শুধুমাত্র অর্থকরী ফসল যেমন সুপারি, নারিকেল কিংবা পামজাতীয় অন্যান্য গাছের সব পাতা ভক্ষণ করে এমনটি নয় বরং শুভাবর্ধনকারী গাছ মেহেদি ও ড্রসিনার পাতাও ভক্ষণ করে গাছকে পলস্নবহীন করে মেরে ফেলে
নতুনধারা
  ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ইফরান আল রাফি

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায় সুপারি ও নারিকেল গাছে মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রজাতির ব্যাগওয়ার্ম সর্বপ্রথম শনাক্ত করেছেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও প্রফেসর ড. এস এম হেমায়েত জাহানের নেতৃত্বাধীন এক দল গবেষক। এ সংক্রান্ত তাদের গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সাময়িকী 'ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনোভেটিভ রিসার্চ' এ প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা জানান, লেপিডোপটেরা বর্গের সিকিডি পরিবারে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩৫০টি প্রজাতির ক্ষতিকারক ব্যাগওয়ার্ম পোকা রয়েছে। যাদের মধ্যে মাহাসিনা করবেটি (গধযধংবহধ পড়ৎনবঃঃর) নামক প্রজাতির ব্যাগওয়ার্মটি মারাত্মক ক্ষতিকারক। এ প্রজাতির পোকা শুধুমাত্র অর্থকরী ফসল যেমন সুপারি, নারিকেল কিংবা পামজাতীয় অন্যান্য গাছের সব পাতা ভক্ষণ করে এমনটি নয় বরং শুভাবর্ধনকারী গাছ মেহেদি ও ড্রসিনার পাতাও ভক্ষণ করে গাছকে পলস্নবহীন করে মেরে ফেলে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু দ্বীপে এই প্রজাতির পোকার সন্ধান মিললেও বাংলাদেশে ইতোপূর্বে এই প্রজাতির পোকার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। আগে মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন, সুমাত্রা, জাবা, ব্রম্ননাই, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও পাপোয়া নিউগিনি থেকে এ প্রজাতির পোকা শনাক্ত হলেও ২০১৫-১৬ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মেঘালয় প্রদেশের পূর্ব পাহাড়ীয় খাশি জেলায় সুপারি গাছে প্রথম এ প্রজাতির পোকা শনাক্ত হয়- যা ২০১৮ সালের বৈজ্ঞানিক সাময়িকী 'ফাইটোপ্যারাসাইটিকায়' প্রকাশ পায়।

বাংলাদেশে সুপারি ও নারিকেল গাছে ক্ষতিকারক প্রজাতির ব্যাগওয়ার্ম মথ শনাক্তকরণ ও তার অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে গবেষণা প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশে ২০১৮ সালে পবিপ্রবি খামারের সুপারি গাছে সর্বপ্রথম এ প্রজাতির ব্যাগওয়ার্ম দৃষ্টিগোচর হলে তা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে লালন-পালন করে তার পূর্ণাঙ্গ জীবনচক্র দেখা হয়। কারণ, মুক্তাবস্থায় পূর্ণাঙ্গ মথ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর এবং প্রজাতি শনাক্তকরণে পূর্ণাঙ্গ পুরুষ মথ প্রয়োজন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গবেষকরা নিশ্চিত হয় যে, এটা একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক ব্যাগওয়ার্ম। গবেষণা চলাকালীন সময়ে গবেষকরা এ প্রজাতির পোকার উপস্থিতি নারিকেল, মেহেদি ও ড্রসিনা গাছেও লক্ষ্য করেন। দুশ্চিন্তার বিষয় এ পোকার হোস্টপস্নান্টের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পোকায় আক্রমণে গাছের এক থেকে দুই তৃতীয়াংশ পাতা খেয়ে ফেলার কারণে বিনষ্ট হয়, কখনো বা পুরো গাছটিই শুকিয়ে মারা যায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায় এ পোকার আক্রমণে ৪০-৫০% ফলন নষ্ট হয়ে যায়- যা অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতি।'

কীভাবে এ পোকা দমন করা যায় এমন প্রশ্নের প্রতুুত্তোরে তিনি বলেন, এ পোকা দমন করতে হলে সূচনালগ্নেই সিস্টেমিক কীটনাশক প্রয়োগ করে লার্ভা এবং সঠিক ফেরোমন/আলো ফাঁদ ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ মথ মেরে ফেলতে হবে, নতুবা ব্যাগের ভেতর থাকাকালীন মারা একটু কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, সঠিক দমন পদ্ধতি উদ্ভাবনে আমাদের গবেষণা কার্যক্রম চলমান আছে। আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা একটি ভালো দমন পদ্ধতি উদ্ভাবনে সক্ষম হবো ইনশালস্নাহ। এ গবেষণা দলের অন্যান্য গবেষক হলেন- প্রফেসর ড. এস এম হেমায়েত জাহান, মো. সাব্বির তালুকদার, মো. রুবেল কাজী ও মো. সাদিকুল ইসলাম।

গবেষণায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কতগুলো ইনসেক্টর প্রজাতি রয়েছে তার সঠিক কোনো চেকলিস্ট এখনো প্রকাশিত হয়নি। আমার লক্ষ্য হচ্ছে শত আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশের মেজর কিছু অর্ডারের ইনসেক্টর চেকলিস্ট তৈরিসহ তাদের জিনোমিক সিকুয়েন্স প্রকাশের নিমিত্তে কাজ করা। আমি জানি কাজটি অনেক কষ্টসাধ্য, তবুও আমার চেষ্টা থাকবে নিরন্তর যাতে ইনসেক্ট বায়োরিসোর্সের দিক থেকেও আমাদের দেশ পিছিয়ে না থাকে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<73991 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1