বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরাশ্রয়ী হাউজপস্ন্যান্ট মোম ফুল

আসমা অন্বেষা
  ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সৃষ্টিকর্তার অনেক যত্নের সৃষ্টি 'হয়া' ফুল। যার অপর নাম মোম ফুল। প্রায়ই দেখা যায় হয়া পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ হয়ে অন্য গাছের উপর বেড়ে ওঠে এবং বসবাস করে। আশ্রয়দাতা গাছ থেকে এরা খাবার বা রস কোনো কিছুই গ্রহণ করে না। এরা বাতাস, ধুলোবালি বা বৃষ্টির পানি থেকে খাবার গ্রহণ করে। কিছু কিছু প্রজাতি টেরেস্ট্রিয়াল বা স্থলচর হয়ে বেড়ে ওঠে। মাঝে মাঝে দেখা যায় পাহাড়ি এলাকায় এরা গাছ বেয়ে লতার মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বেয়ে ওঠে। হয়া মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় উদ্ভিদ, চির সবুজ বহু বর্ষজীবী ক্রিপার অথবা ভাইন লতা এবং খুব কমই গুল্ম হয়।

হয়া অঢ়ড়পুহধপবধব পরিবারের মধ্যে পড়েছে। একই সঙ্গে এদের সরষশবিবফ ও বলা হয়। এদের ২০০-৩০০ প্রজাতি রয়েছে। বেশিরভাগ প্রজাতির আদিবাস এশিয়াতে। বিশেষ করে ইন্ডিয়া, চায়না, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় গাছ এরা। ফিলিপাইনে হয়ার বিভিন্ন প্রজাতির অনেক বৈচিত্র্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পলিনেশিয়া, নিউ গিনি এবং অস্ট্রেলিয়াতেও অনেক প্রজাতি পাওয়া গেছে। এদের ইংরেজিতে ওয়াক্সপস্নান্ট, ওয়াক্সভাইন, ওয়াক্সফ্লাওয়ার অথবা শুধু 'হয়া' বলে ডাকা হয়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী থমাস হয়া এর নাম অনুসারে এদের 'হয়া' নামকরণ করা হয়।

হয়া ফুল সাধারণত একটি পুষ্পবৃন্তের মাথায় গুচ্ছাকারে বা থোকা হয়ে ফুটে থাকে। আম্বেল অর্থাৎ অনেকগুলো ছোট ফুলের ডাঁটা যখন একত্রে একটি কমন ডাঁটার সঙ্গে যুক্ত থাকে তাকে পেডিসেল বলে। দেখতে অনেকটা আমব্রেলা রিবসের মতো মনে হয়। ফুলের দন্ডগুলো সাধারণত পাতার বোঁটার কোণা থেকে বের হয় এবং বেশিরভাগ প্রজাতিতে এই দন্ডগুলো অনেক বছর ধরে বেঁচে থাকে। বারবার ফুল হওয়াতে ফুলের দন্ডগুলো বড় হতে থাকে। ফুলগুলোর থোকার ব্যাস ৯৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

ফুলগুলো মূলত স্টার আকৃতির হয়ে থাকে। প্রতিটি ফুলে পাঁচটি মোমের মতো পুরু পাপড়ি থাকে যার উপরে আরও পাঁচটি স্টার এর মতো হয় দেখতে পাপড়ি থাকে যাকে করোনা বলে। অসাধারণ চোখ জুড়ানো রঙের বৈচিত্র্য দেখা যায় এই ফুলে। সাদা, গোলাপি, হলুদ, কমলা, গাড় লাল ইত্যাদি মনোমুগ্ধকর রঙের কম্বিনেশনে অপরূপ সাজে সেজে থাকে এই ফুলেরা। বেশিরভাগ ফুলে মিষ্টি ঘ্রান থাকে এবং এরা প্রচুর পরিমাণে মধু তৈরি করে। খুব কাছে থেকে দেখলে মনে হয় সৃষ্টিকর্তা অনেক যত্ন করে নিখুঁতভাবে গড়েছেন এদের।

এই ফুলের পরাগায়ন সাধারণত মথ, মাছি বা পিঁপড়া করে থাকে। এদের পরাগায়ন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য নেই। যে সমস্ত গাছ বাইরে গরমে রাখা হয়, তারা কিছু বীজ তৈরি করে। এদের পরাগায়ন স্থানীয় পোকা দ্বারা সংঘটিত হয় বলে মনে করা হয়। বীজগুলো সাধারণত টুইন পডের মতো হয়। বীজকোষগুলো বেশ হালকা এবং বাতাসে ভেসে ভেসে দূরদূরান্তে যেয়ে এদের বিস্তার লাভ করতে পারে। বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম বেশ তাড়াতাড়ি হয় কিন্তু সহজে বাঁচে না এদের চারা।

হয়ার কিছু প্রজাতি পিঁপড়ার সঙ্গে সহঅবস্থান করে সিমবায়োটিকভাবে। অর্থাৎ পিঁপড়াকে এরা আশ্রয় দেয় এবং বিনিময়ে পিঁপড়া এদের পরাগায়নে সাহায্য করে। পাতাগুলো সাধারণত আদর্শ সাকুলেন্ট। বিভিন্ন ধরনের পাতা দেখা যায় এই জেনাসে। সাধারণত মসৃণ এবং রোমশ। অনেকগুলো প্রজাতি আছে যাদের পাতার উপরের পিঠে ডোরাকাটা থাকে এবং তার মাঝখানে বিভিন্ন রঙের ফোটা থাকে।

হয়ার অনেকগুলো প্রজাতি হাউজপস্নান্ট বা অন্দর-উদ্ভিদ হিসেবে বাড়িতে লাগানো হয় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এরা আদ্রিত হয় এদের আকর্ষণীয় ফুলের জন্য এবং এদের সুগন্ধির জন্য। অনেক আবাদি হয়াকে অন্দর-উদ্ভিদ হিসেবে নির্বাচন করা হয়; এদের পাতা, ফুলের সৌন্দর্য এবং অপূর্ব সুন্দর রঙের কারণে। তীব্র সুমিষ্ট ঘ্রাণের কারণেও হয়া ইনডোর পস্নান্ট হিসেবে লাগানো যায়। এরা উজ্জ্বল আলো পেতে পছন্দ করে কিন্তু অল্প আলোতেও এরা বেঁচে থাকতে পারে। তবে অল্প আলোতে এরা ফুল তৈরি নাও করতে পারে। হয়া নার্সারিতে বিক্রি হয় হাউজপস্নান্ট হিসেবে।

সম্প্রতি জর্জিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, হয়া খুবই ভালোভাবে ঘর বা বিল্ডিংয়ের ভেতরের দূষণ দূর করতে পারে। অস্ট্রেলিয়াতে কিছু হয়া পাওয়া গেছে যারা হাস-মুরগি এবং ভেড়ার জন্য বিষক্রিয়া হয়ে কাজ করেছে। বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে পলিনেশিয়ান সমাজে হয়াকে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84918 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1