বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যষ্টিমধুর অজানা কথা

আসমা অন্বেষা
  ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

আমার বাবার খুব ইচ্ছে হয়েছিল ছোটবেলায় আমাকে গান শেখাবেন। একজন গানের শিক্ষকও ঠিক করে দিলেন। খুবই মজার মানুষ ছিলেন আমার শিক্ষক। উনি পান খেতেন না কিন্তু কিছু একটা মুখের মধ্যে চিবোতেন। একদিন প্রশ্ন করে জানতে পারলাম তিনি যষ্টিমধু খাচ্ছেন। তার কাছ থেকেই জানতে পারলাম যষ্টিমধু খেলে গানের গলা ভালো হয়। এরপর থেকে আমার জন্যও নিয়ে আসতেন যষ্টিমধু। এটি একটি গাছের শিকড়ের কাষ্ঠল অংশ। এর অঁাশ খুলে খুলে খেতাম আমি। বেশ মিষ্টি এবং সুস্বাদু খেতে। আসলে এটা গলা পরিষ্কার রাখে।

যষ্টিমধু হিসেবে যা আমরা ব্যবহার করি তা আসলে গাছের শিকড়। এর প্রধান ব্যবহার ওষুধ হিসেবে। এটি আয়ুবের্দীয় বা হারবাল ওষুধ তৈরির অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহুবছর ধরে। খাবারে সুগন্ধির কাজে ব্যবহার করা হয় যষ্টিমধু। শিকড়ের পাউডার মিষ্টি, বেকিং সামগ্রী এবং আইসক্রিম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ওষুধ প্রস্তুতিতেও ব্যাপকভাবে কাজে লাগে এই হাবর্। শিকড়ে গøাসিরাইজিন থাকে যার কারণে এটা সুক্রোজের চাইতে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি। অঁাশযুক্ত শুকনো শিকড় চিবিয়ে খায় মানুষ। শিকড় থেকে খুব ভালো চা তৈরি হয়। শিকড়ের পাউডার অন্যান্য হারবাল চায়ে মিষ্টিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মঙ্গোলিয়াতে এর পাতা ব্যবহার করা হয় চা হিসেবে।

যষ্টিমধুর বৈজ্ঞানিক নাম গøাইকিরাইজা গেøবরা (এষুপুৎৎযরুধ মষধনৎধ)। সাধারণ নাম লিকোরিশ (খরয়ঁড়ৎরপব বা ষরপড়ৎরপব) । ঋধনধপবধব পরিবারের সদস্য। অনেকগুলো সিনোনিম রয়েছে এই গাছের অথার্ৎ আরও কয়েকটি বৈজ্ঞানিক নাম আছে এই গাছের। বহুবষর্জীবী উদ্ভিদ। ১ থেকে ১.২ মিটার পযর্ন্ত লম্বা হতে পারে। জুন থেকে জুলাই পযর্ন্ত ফুল হয়। পোকা দ্বারা পরাগায়িত হয়। ইউরোপ থেকে মেডিটেরানিয়ান পযর্ন্ত বিস্তৃতি এদের। ইন্ডিয়া, ইরাক, ইরান, ইটালি, আফগানিস্তান, চীন, আজারবাইজান এবং টাকিের্ত যষ্টিমধুর চাষ হয়। কিছু ভ্যারাইটি রাশিয়াতেও জন্মায়। সেখানে এদের শিকড় ১০ সেমি পযর্ন্ত প্রশস্ত হতে পারে। সাধারণত শুকনো জায়গাতে বেশি জন্মায় এই গাছ। বিশেষ করে সমুদ্র উপক‚লের বালিমাটিতে ভালো হয়। ভালো শিকড় পাওয়ার জন্য উবর্র ভেজা মাটিতে লাগানো প্রয়োজন। বালু মাটিতে শিকড় ভালো হয়। কিছুটা এলকালাইন মাটিতে সবচাইতে ভালো গাছ পাওয়া যায়। তবে এই গাছ ভেজা বালি মাটি পছন্দ করে। অল্প আলো থেকে প্রচুর আলোতে বেড়ে উঠতে পারে এই গাছ। এরা প্রবল বাতাস সহ্য করতে পারে। -১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও এরা টিকে থাকতে পারে। এরা শিকড়ের মাধ্যমে মাটিতে নাইট্রোজেন সরবরাহ করতে পারে। মাটিতে থাকা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সাথে এই গাছের সিমবায়োটিক সম্পকর্ রয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়া যষ্টিমধু গাছের শিকড়ের গায়ে এক ধরনের নোডিউল তৈরি করে এবং তার মাধ্যমে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। এই নাইট্রোজেনের কিছু অংশ যষ্টিমধু গাছ নিজে ব্যবহার করে এবং বাকিটা ব্যবহার করে আশপাশের অন্যান্য গাছ। সেই কারণে এদের আশপাশের গাছদের বৃদ্ধি ভালো হয়। ৩ থেকে ৪ বছর বয়েসি গাছ থেকে শিকড় সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত ১০ থেকে ১২ টন শিকড় পাওয়া যায় প্রতি একরে। এই ফলন অবশ্য গাছের বয়স ৪ বছর হলেই পাওয়া যায়। এই গাছকে ফুল হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। কারণ ফুল হলে এদের শিকড়ের ফলন কমে যায়। ফুল না হলে শিকড়ের গুণগত মানও ভালো হয়।

বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যষ্টিমধুতে থাকা গøাইসিরাইজিন ও গøাইসিরাটিক এসিড আলসারকে প্রতিরোধ করে এবং পাকস্থলীর মিউকাস মেমব্রেনকে সুরক্ষা করে। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রিক আলসার, পেপটিক আলসার নিরাময়েও ভালো ভ‚মিকা রাখে যষ্টিমধু। বিষাক্ততার কবল থেকে লিভার কোষকে রক্ষা করে। টিউমার প্রতিরোধক হিসেবে ভালো কাজ করে। যষ্টিমধু তরল আকারে কফ বের করে দেয় এবং কাশি ভালো করতে পারে। এ ছাড়া ব্রঙ্কাইটিস, টনসিলাইটিস ও কণ্ঠনালির প্রদাহ দুর করতেও সাহায্য করে। লিভারকে ডি-টক্সিফাই করার জন্য এবং এন্টিইনফ্লেমেশনের হিসেবে এটি খুব ভালো কাজ করে। মুখের ঘা এবং আথ্রাইটিসের জন্য ভালো ওষুধ পাওয়া যায় এই গাছ থেকে। যষ্টিমধুর শিকড়ে এক ধরনের হরমোনাল ইফেক্ট পাওয়া গেছে যা ওভারি বা গভার্শয়ের হরমোনের সাথে মিল পাওয়া গেছে। কাশির ওষুধে এর শিকড় বহুল ব্যবহার হচ্ছে। সেই সাথে ইউরিনারি ট্রাক্ট, এজমা, ব্রঙ্কাইটিস, কাশি, আথ্রার্ইটিস, এলারজি ইত্যাদি সমস্যায় প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।

যষ্টিমধু কখনোই বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত নয় বা দীঘির্দন ব্যবহার করা ঠিক নয়। এক নাগারে ৬ সপ্তাহের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য যষ্টিমধু মঙ্গলকর নয়। কিডনির সমস্যা থাকলেও যষ্টিমধুর ব্যবহার উচিত নয়। যষ্টিমধুর ডোজ বেশি হয়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গভর্বতী থাকাকালীন বা লিভার সিরোসিস থাকলে যষ্টিমধু ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে মাথাধরা, অলসতা এবং পটাসিয়াম শূন্যতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যষ্টিমধু বা এর কোনো ওষুধ ব্যবহারের পূবের্ সব সময়ই ডাক্তার অথবা বিশেষজ্ঞের পরামশর্ গ্রহণ করা উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8567 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1