মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাঁসের খামারে মাসিক আয় লাখ টাকা

মাসুদ রানা, দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল)
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

প্রবাস জীবন ছেড়ে দেশে ফিরে হাঁসের খামারে ভাগ্য ফেরালেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটী ইউনিয়নের গাছপাড়া কামান্না গ্রামের আমিনুর রহমান (ফালু)। প্রবাস নয়, দেশের মাটিতেও সঠিক শ্রম দিতে পারলে কাঙ্ক্ষিত উপার্জন করা সম্ভব আর এমনটাই প্রমাণ করলেন আমিনুর। বর্তমানে প্রতি মাসে হাঁসের খামার থেকে প্রায় লাখ টাকা আয় করছেন আমিনুর। কয়েক বছর আগে তিনি বেশি উপার্জনের আশায় নিজ জন্মভূমি বাংলাদেশ ছেড়ে কাজের সন্ধানে সৌদি আরব এবং সিঙ্গাপুরে গিয়ে বেশ সময় ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু প্রবাসে কঠোর শ্রম দিয়েও যে সাফল্য মেলিনি সেটি পেয়েছেন গ্রামের একটি বিলে হাঁস পালন করে। প্রবাসের চেয়ে দেশেই উপার্জন ভালো হচ্ছে বলে আনন্দিত সে। এ ছাড়া এলাকায় বেকারদের প্রেরণা দিচ্ছেন খামারটি।

আমিনুর রহমান জানান, তিনি প্রায় ১০/১২ বছর আগে গমের ব্যবসা করতেন। তার গমের ব্যবসার প্রতিদিনের লাভের অংশ থেকে একটি করে হাঁস কিনতেন। এভাবে ১৬৫টি হাঁস কিনলেন। হাঁস পালনের লাভ তখন থেকেই বুঝতেন। দীর্ঘদিন হাঁস পালনের টাকায় সংসার চালিয়ে বিদেশে যাওয়ার খরচও জোগাড় করেছিলেন। উপার্জন বাড়াতে সৌদি আরবে যান তিনি। সৌদি থেকে ফিরে সিঙ্গাপুরে যান। প্রবাসের চেয়ে হাঁস পালনেই বেশি উপার্জন হবে ভেবে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ক'দিন পরই ৩৫ হাজার টাকায় একহাজার জিনডিং ও খাকি ক্যাম্পবেল প্রজাতির হাঁসের বাচ্চা কেনেন। ঘর তৈরিতেও তেমন খরচ হয়নি। বিলের মাঝে খামার হওয়ায় সবসময় হাঁসগুলো থাকে জলাশয়ে। ফলে খাবার খরচও কমে আসে। বাচ্চাগুলো প্রথম তিন-চার মাস পালনের পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ ডিম দিচ্ছে। প্রতি শতক ডিম ১১০০ টাকা (৪৪ টাকা প্রতি হালি) দরে খামার থেকেই কিনে নিচ্ছে পাইকাররা। এতে প্রতিদিন সাড়ে তিনশ' ডিম বিক্রি হয় ৩৮০০ টাকা। যা মাসে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ৫ মাস যাবত ধারাবাহিকভাবে সাড়ে তিনশ ডিম তুলছেন আমিনুর। কখনো খামারে মাসে প্রতিদিন ৪শ' ডিমও আসে।

আমিনুর রহমান আরও বলেন, জলাশয়ে ঠিকমতো পানি থাকলে খাবার খরচ কমে যেত এতে ডিমের দাম আরও কম হতো। কিন্তু পানি কমে যাওয়ায় অনেকটা সময় হাঁসগুলো বাড়িতে পালন করতে হয়। এরপরও তার ইচ্ছে চলতি বছরে ৩ হাজার বাচ্চা খামারে তুলবেন। বিদেশের চেয়েও এখন তার বেশি উপার্জন হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী অনেকেও প্রেরণা পেয়ে খামার করার কথা ভাবছেন। ৪/৫ মাসে খামারের ডিম বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ টাকা। খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। এখন নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। এ ছাড়া এক হাজার হাঁসের দাম ৪শ টাকা দরে হলে বিক্রি হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা। যার সবটুকুই থাকবে লাভ থেকে। এ হিসেবে মাসে লাখের ওপর উপার্জন হচ্ছে আমিনুরের। তবে, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এসব খামার পরিদর্শন করে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ, পরামর্শ ও সহযোগিতা দিলে খামারিরা উপকৃত হতো।

আমিনুরের স্ত্রী বিপুল জানান, তিনি ও তার স্বামী দুজনে মিলেই শ্রম দিচ্ছে খামারে। ফলে স্বামী প্রবাসে থাকার চেয়ে তাদের সংসার এখন আরও ভালো চলছে। হাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় প্রথম ধাপে ১৭ দিন দ্বিতীয় ধাপে ২১ দিন প্রশিক্ষণ করেছেন তিনি। খামারে প্রাথমিক চিকিৎসা এখন নিজেই দিতে পারেন। হাঁস পালনেই মাসে লাখ টাকা উপার্জন করছে। কখনো মাসে এক লাখ আবার কখনো ১ লাখ ৩৫/৪০ হাজার টাকার ডিম বিক্রি হচ্ছে।

দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভ্যাটেরিনারি সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, আমিনুরের হাঁসের খামার করা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে হাঁসগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়ম মাফিক ভ্যাকসিন এবং ডাক কলেরার টিকা সিডিউল অনুযায়ী দিতে হবে। সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ভ্যাকসিনসহ, চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88701 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1