মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চকোলেটের ফল কোকোয়া

কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
  ২৬ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

কোকো বা কোকোয়া দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন উপত্যকার উদ্ভিদ। যার বীজ থেকে চকোলেট তৈরি হয়। মধ্য আমেরিকার আরও কয়েকটি দেশে এর চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। তারপর আফ্রিকার আইভরি কোস্ট, ঘানা, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুনে এর চাষ শুরু হয়। গ্রিক ভাষায় ঞযবড়ং মানে ভগবান আর নৎড়সধ মানে খাদ্য অথার্ৎ ভগবানের খাদ্য। তাই এর বৈজ্ঞানিক নাম : ঞযবড়নৎড়সধ পধপধড়. পরিবার : গধষাধপবধব. সব মিলিয়ে প্রায় ৩০টির মতো বীজ থাকে প্রতিটি ফলে। অনেক জাত আছে কোকোয়ার। তাই পাকলে কোনো জাতের ফলের রং হয় মোটো লাল আবার কোনোটার গাঢ় হলুদ। পাকা ফলের ভেতরের বীজ বের করে শুকিয়ে তাকে ফারমেনটেশন বা গাজাতে হয়। তারপর তাকে রোস্ট করে গুঁড়া করতে হয়। এর পাউডার থেকেই চকোলেট তৈরি হয়। বছরে দুবার ফল সংগ্রহ করতে হয়। কোকোয়া গাছ শীতল ও গরম হাওয়া কোনোটাই সহ্য করতে পারে না। বছরে দুবার ফল সংগ্রহ করতে হয়।

ভেষজ গুণাবলি : বীজে আছে থিওব্রোমাইন, ক্যাফেন ও রঙিন বস্তু। সাবির্কভাবে বীজ উত্তেজক, মূত্র রোগে উপকারী। থিওব্রোমাইন স্নায়বিক রোগের টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হৃদজনিত রোগে ‘এনজাইমা পেক্টোরিস’-এর ব্যথা উপশম করতে পারে চকোলেটের ক্বাথ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ও বুকের ব্যথায় চকোলেট পানীয় খেতে দেয়া হতো। ফলের নরম শঁাস থেকে কোকোয়া-মাখন তৈরি হয়। এর প্রলেপ ত্বক কোমল রাখতে সাহায্য করে থাকে। গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল ফোটে গাছের কাÐে ও ডালে। ফুল ছোট, হালকা গোলাপি ও সাদা। ফলে অনেক শিরা, আকারে অনেকটা নাশপাতি ফলের মতো। পাকা ফলের ভেতরে পেঁপের মতো ফঁাকা আর পঁাচ সারির ছোট ছোট বীজ থাকে।

চকোলেটের উপকারিতা : ‘চকোলেট খেও না!’ আপনার ছেলেমেয়েদের এমন শাসন করার আগে চকোলেটের উপকারিতা সম্পকের্ একটু জেনে নিই। নটিংহাম ইউনিভাসিির্টর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চকোলেট ব্যক্তির মনস্তাত্তি¡ক ক্ষমতা ও মানসিক দক্ষতাকে প্রখর করে। শুধু আপনার সন্তান-ই নয়, আপনিও চকোলেট খাওয়ার মাধ্যমে আপনার স্মৃতিশক্তিকে রাখতে পারেন শক্তিশালী! আমেরিকার এক গবেষক প্রমাণ করেছেন, ফ্ল্যাভানল সমৃদ্ধ কোকোয়া মিল্কে ভরপুর চকোলেট খেলে দুই থেকে তিন ঘণ্টা মস্তিষ্কের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতে রক্ত সঞ্চালন ত্বরান্বিত হয়। এর ফলে মস্তিষ্ক নিদির্ষ্ট কোনো কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে। এ ছাড়া মস্তিষ্কের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া তীক্ষè করতে চকোলেটের জুড়ি নেই। কাডির্ওভাসকুলার ডিজিজের জন্য চকোলেট উপকারী। আমেরিকার একটি কনফারেন্সে বলা হয়েছে, চকোলেট ডিমেনশিয়া ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া চকোলেটের ফ্ল্যাভানল সমৃদ্ধ কোকোয়া মিল্ক ক্লান্তি দূর করতে, ইনসোমনিয়া প্রতিরোধে এমনকি বাধর্ক্য দূর করতেও সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করে। নটিংহাম ইউনিভাসিির্টর ইয়ান ম্যাকডোনাল্ডস কয়েকজনকে কোকোয়া মিল্ক খাওয়ান এবং এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং)-এর মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে চকোলেট খেলে মস্তিষ্ক অপেক্ষাকৃত বেশি সক্রিয় হয় এবং মস্তিষ্কে বেশি মাত্রায় অক্সিজেন পৌঁছাতে সহায়তা করে। চকোলেট উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কাডির্ওভাসকুলার ডিজিজের রোগীরা চকোলেট থেকে উপকার পেতে পারেন। চকোলেট সূযের্র রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনার ত্বককে সুরক্ষা দেয়। যারা বয়স বেড়ে গেলেও চকোলেট খাওয়ার লোভ সামলাতে পারেন না, তারা নিশ্চিন্তে আনন্দের সঙ্গে চকোলেট খান।

নেচার নিউরোসায়েন্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী সুস্থ ব্যক্তি যারা তিন মাস উচ্চ ফ্ল্যাভানলযুক্ত কোকোয়া পানীয় পান করেছেন, তাদের স্মৃতিশক্তি বেড়েছে। চকোলেটের আরেকটি বড় গুণ এটি বিষণœতা দূর করতে মহৌষধের মতো কাজ করে। চকোলেটে থাকা ট্রিপটফেন নামের একটি উপাদান বিষণœতা রোধে কাযর্কর ভ‚মিকা রাখে। এটি মস্তিষ্কে ডোপামিন বাড়িয়ে শরীরে আনন্দের অনুভ‚তি তৈরি করে। দিনে ৪০ গ্রাম ডাকর্ চকোলেট খেলে দুই সপ্তাহের মধ্যে স্ট্রেস হরমোন কমে যায়।

সম্ভব হলে অরগানিক কিনা, সেটাও দেখে নিতে হবে। চকোলেটের লেবেলে যদি লেখা থাকে ‘প্রসেসড উইথ অ্যালকালি’ তবে তা পরিহার করতে হবে। এই পদ্ধতিতে তৈরি চকোলেটে কোকোয়ার প্রাকৃতিক ফ্ল্যাভানল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভেঙে ফেলা হয়। কোকোয়া বাটারবিহীন চকোলেট কিনুন। তবে এত সব উপকারী গুণাগুণ আছে বলেই যত খুশি চকোলেট খাওয়া যাবে, তা নয়। পরিমিত মাত্রায় চকোলেট খাওয়া ভালো। সপ্তাহে ভালো মানের অল্প চকোলেট খেলেও উপকারিতা পাবেন।

ইতিহাস থেকে : প্রাচীনকালে বহু শতাব্দী ধরে কোকোয়া বীজ এতই মূল্যবান ছিল যে এগুলোকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন মায়া ও অ্যাজটেক সভ্যতার মানুষজন বিশ্বাস করত, কোকোয়া বীজের জাদুকরী শক্তি আছে। কিংবদন্তি রয়েছে, অ্যাজটেক রাজা মন্টেজুমা যখন স্প্যানিশ পযর্টকদের চকোলেট খেতে দেন, তখন তারা এর তিতকুটে স্বাদ একেবারেই পছন্দ করেনি। এরপর ১৭ শতাব্দীতে এসে ধীরে ধীরে ইউরোপে চকোলেট জনপ্রিয় হতে শুরু করে। মায়া ও আজটেক মানুষের কথা মিথ্যা নয়। চকোলেটের আসলেই জাদুকরী গুণ রয়েছে। বিশেষ করে ভালো মানের কালো বা ডাকর্ চকোলেটে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। ৭০-৮৫ ভাগ কোকোয়াসমৃদ্ধ চকোলেটকেই বলে ডাকর্ চকোলেট। এতে আছে অঁাশ, লোহা, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম। দিনে অল্প পরিমাণ ডাকর্ চকোলেট খেলেও ৫০ ভাগ পযর্ন্ত হৃদরোগে মৃত্যুুর ঝুঁকি কমে যায়। নিয়মিত চকোলেট খেলে ইনসুলিনের কাযর্কারিতা বাড়ে। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও শারীরিক প্রদাহ রোধেও ডাকর্ চকোলেট সহায়তা করে।

ডাকর্ চকোলেটে প্রচুর পরিমাণে সক্রিয় জৈব উপাদান রয়েছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এসব উপাদান পলিফেনলস, ফ্ল্যাভানল ইত্যাদি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোধ করে এবং ক্যান্সার রোধে ভ‚মিকা রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে কোনো ফলের তুলনায় ডাকর্ চকোলেটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বেশি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<9056 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1