বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ভতির্যুদ্ধই ভবিষ্যতের পটভ‚মি

নাহিদ হাসান
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
নতুন শিক্ষাথীের্দর বরণ করে নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চলছে ভতির্ পরীক্ষার কাযর্ক্রম

দেশের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। যে কোনো শিক্ষাথীর্র স্বপ্ন থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার। তাই নতুন শিক্ষাথীের্দর বরণ করে নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চলছে ভতির্ পরীক্ষার কাযর্ক্রম।

রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছে এর মধ্যেই চলছে শিক্ষাথীের্দর ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি। ক্যাম্পাসের প্রকৃতির রূপের চারদিকে সবুজের ছড়াছড়ি। আর সবুজের শোভায় সোনালি রোদের দোল দোল খেলা ক্যাম্পাসের প্রকৃতিকে এক বিস্ময়কর সৌন্দযের্ সাজিয়ে দেয়, যা এক অভিভূত অভিজ্ঞতায় মন ভরে ওঠে। ঘন সবুজের স্নিগ্ধরূপে মন তারুণ্যের উচ্ছ¡াসে উদ্বেলিত হয়। সহপাঠী ও বন্ধুদের নিয়ে প্যারিস রোডের দু’পাশে, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির দক্ষিণ পাশে, সিনেট ভবনের সামনে, শহীদ জোহা চত্বরের চারপাশে ও সুবণর্জয়ন্তী টাওয়ারের সামনে জটলা বেঁধে শিক্ষাথীের্দর আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে।

এসব স্পটে শিক্ষাথীর্রা মূলত দেশ ও জাতির শিক্ষা, চিকিৎসা, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অথৈর্নতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

বিশ^বিদ্যালয়ের শাবাশ মাঠের মেঘমুক্ত আকাশের সুনীল রূপকান্তি, গাছের পাতার আড়ালে সূযাের্লাকের আলোছায়ার লুকোচুরি তার পাশে সিনেট ভবনের সামনের লাল-সাদা গোলাপ, গঁাদা ও শিউলি ফুলের মন উদাস করা গন্ধ, দু’পাশে ফুলের অপূবর্ সমারোহ প্রকৃতিকে করে তুলেছে সুষমামÐিত। শাবাশ মাঠে গান, গল্প, আড্ডা, সেলফি ও ফটোসেশনে ব্যস্ত শোভন, জাহিদ, শাকিল, মাহফুজ শান, জয়নব ফেরদৌস শান্ত, নিলুফা লাকি ও সিতু। তারা বলেনÑ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতির্ হয়ে পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে নিজেদেরকে ধন্য মনে করছি। নিত্যদিনের মতো আজকে তাদের আলোচনায় উঠে আসে বিশ^বিদ্যালয়ের ভতির্ পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়।

ভতির্যুদ্ধের সময়টুকুই ভবিষ্যতের পল্লবিত সৌন্দযের্র অস্ফুট পটভূমি। এই সময়ই হলো শিক্ষাথীের্দর প্রস্তুতিপবর্। এরই ওপর নিভর্র করে তার পরবতীর্ জীবনের সফলতা-ব্যথর্তা। তাই এটিই পরীক্ষাথীের্দর শৃঙ্খলা অনুশীলনের প্রকৃষ্ট সময়। এ বিশ্বজাহান এক অদৃশ্য দুলর্ঙ্ঘ্য নিয়মের সূত্রে বঁাধা; ক্ষুদ্রতম অণু-পরমাণু হতে বিশাল বিশাল গ্রহ-নক্ষত্র পযর্ন্ত সবর্ত্রই এক কঠোর নিয়মের শাসন বিরাজিত। প্রভাতে পূবির্দগন্তে সূযোর্দয় এবং দিবাশেষে পশ্চিম-দিগন্তে সূযার্স্ত সবই এক দুলর্ঙ্ঘ নিয়মের অধীন। তেমনি পরীক্ষাথীের্দর প্রয়োজন সেই নিয়মের শাসন। জীবনকে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত করে তুলতে হলে প্রয়োজন উপযুক্ত শৃঙ্খলাবোধ। পরিকল্পিতভাবে সামনের সময়টুকু কাজে লাগিয়ে প্রস্তুতি নিলে কোনো একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে চান্স অবশ্যই পাওয়া যাবে। কেবল ব্যক্তিজীবনেই নয় সবর্ত্রই চাই নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতিষ্ঠা।

ইতিমধ্যেই এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে এখন চলছে তাদের ভতির্ পরীক্ষার প্রস্তুতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষাথীর্ নিলুফা লাকি বলেন, অনেকের ফল ভালো হয়েছে আবার অনেকের চলার মতো ফল করেছেন। যাদের ফলাফল ভালো হয়েছে আশা করি তারা ভালো প্রতিষ্ঠানে নিজের একটা জায়গা করে নিবেন আর খারাপ ফলাফলে ভেঙ্গে পরার কোন কারণ নেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে একাডেমিক ফলাফলে কোন স্কোর থাকে না ভতির্ পরীক্ষার মাকের্সর ওপর ভতির্ করানো হয়। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করেও অনেকেই চান্স পায় না আবার অনেকের রেজাল্ট একটু খারাপ নিয়েও ভালো প্রতিষ্ঠানে চান্স পেয়ে যান। এর কারণ পরিকল্পিতভাবে অধ্যয়ন করা। সীমিত সময় তাই একই পড়া একাধিকবার রিভিশনের সুযোগ নাই। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য হাজার হাজার পরীক্ষাথীের্ক পেছনে রেখে মেধা তালিকায় নিজের স্থান করে নিতে হয়।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শেষ বষের্র শিক্ষাথীর্ শোভন কুমার মিনজি বলেন, প্রস্তুতির প্রথমেই পারিবারিক ও সামাজিক চাপকে উপেক্ষা করে তোমার একাডেমিক যোগ্যতা ও নিজস্ব মেধাসীমার পরিধির বিপরীতে ঠিক করে ফেলতে হবে তোমার পছন্দের বিষয়টি যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্টার, বিজনেস, বিজ্ঞান, জীবজগৎ, দশর্ন, অথর্নীতি, ইতিহাস, ভৌগল, কৃষি, ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস, মৎস্য বিজ্ঞান, চারুকলা ও অন্যান্য। তারপর যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই বিষয়টি পড়ার সুযোগ আছে তার পরীক্ষা পদ্ধতি জানার পর পাঠ্যপুস্তকের যে বিষয়গুলো পরীক্ষায় লাগবে সেই সব বিষয়ে ক্লিয়ারকাট ধারণা অজর্ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সংস্কৃত ভাষার একটি প্রবাদ আছে অধ্যয়নং ছাত্রানং তপঃ অথাৎ লেখাপড়া করাই হচ্ছে ছাত্রজীবনের প্রধান কতর্ব্য। কথাটা ভতির্ পরীক্ষাথীের্দর মাথায় রাখতে হবে। ভতির্ পরীক্ষার সময়টুকুতে সমস্ত রকমের ভোগবিলাস ত্যাগ করে একাগ্রতার সঙ্গে পরীক্ষার বিষয়ভিক্তিক জ্ঞানাজর্ন করে সফলতার চরম শিখরে পৌছাতে হবে।

পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোসর্ বিভাগের শিক্ষাথীর্ সায়লা সরকার বলেন, জীবনে চলার পথে বহু রকমের যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয় তবে এটাই প্রথম যুদ্ধ। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হওয়ার পর আর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এই কয়েক দিনের মধ্যেই সাধারণত আগেরগুলোর ফল দিতে থাকে এতে অনেকেই চান্স হবে আবার অনেকের হবেনা। যাদের হবেনা তারা হতাশা না হয়ে পড়ালেখার মাধ্যমে আগের পরীক্ষার ফলাফলের তালিকায় নিজের নামটি না আসার পিছনের ভুলগুলি সুধরায়ে নিতে হয়। প্রতিযোগিতায় হার-জিৎ থাকবে তবে মন খারাপ করলে লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব নয়। আমাকে চান্স পেতেই হবে এরকম মনোবল ও প্রস্তুতি নিয়ে সাহসের সাথে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টাসর্ শেষ সেমিস্টারের শিক্ষাথীর্ পলাশ আহমেদ অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, জীবনের এই গুরুত্বপূণর্ যুদ্ধে একজন পরীক্ষাথীর্র সবচেয়ে বড় মনোবল জোগাতে পারে তার বাবা-মা। মানসিক সাপোটের্র মাধ্যমে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্তনিহিত। পড়াশোনায় শিক্ষাথীের্দর মানসিকতা হবে নিত্য-নতুনের বরণ্যে অভিষিক্ত। পরীক্ষা দেয়ার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্যরক্ষার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে পিতা-মাতাকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দিতে দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পাড়ি জমাতে হয় আর এ কারণেই অনেক পরীক্ষাথীর্ অসুস্থ হয়ে পরেন তাই সুস্থ থাকার জন্য আলাদা নজর দিতে হবে। নিরাপদ ও হাতে সময় রেখেই সবকিছু ঠিকঠাকভাবে করতে হবে। ভতির্ পরীক্ষাথীের্দর জন্য রইল শুভ কামনা।

উল্লেখ্য, এমসিকিউতে সত্যিকার মেধা যাচাই হয় নাÑ এমন বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির কতৃর্পক্ষ এমসিকিউ বাতিল করে সৃজনশীল পদ্ধতিতে দুই ঘণ্টায় একশো মাকের্সর লিখিত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরবতীের্ত সেটা বাতিল করে পূবের্র ন্যায় এমসিকিউ পদ্ধতি বহাল রেখে আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর পঁাচটি ইউনিটের প্রতি ইউনিটের বিপরীতে সবোর্চ্চ বত্রিশ হাজার পরীক্ষাথীর্ ভতির্ পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13147 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1