শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কমর্মুখী শিক্ষার অনন্য মাধ্যম ‘বিইউবিটি’

গতানুগতিক খাতা-কলমের লেখাপড়া নয়, বাংলাদেশ ইউনিভাসিির্ট অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) কমর্মুখী শিক্ষাদান করে চলেছে। ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাসটি সিসি টিভিতে ঘেরা, শিক্ষকরাও শিক্ষাথীের্দর উন্নয়নের নানা কাযর্ক্রম পরিচালনা করছেন। লেখাপড়ার খরচও তুলনামূলকভাবে কম। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এবারের বিশেষ আয়োজন। সহকারী রেজিস্ট্রার (জনসংযোগ) জিসান আল যুবাইরের সহযোগিতা নিয়ে লিখেছেন আলম আশরাফ
নতুনধারা
  ১০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
অধ্যাপক মো. আবু সালেহ, উপাচাযর্, বিইউবিটি

২০০৩ সালে যাত্রা শুরু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে অন্য সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নয়, ব্যবসায় ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৫ বছর আগে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল মাত্র ৬৭ জন ছাত্র-ছাত্রী, এখন সেখানে আছেন প্রায় ১০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী। তাদের জন্য আছেন ৩০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ‘বাংলাদেশ ইউনিভাসিির্ট অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)’। ঢাকার মধ্যেই এর স্থায়ী ক্যাম্পাস। ঠিকানা : রূপনগর, মিরপুর-২, ঢাকা-১২১৬।

সাত একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কাযর্ক্রম তিনটি বিশাল ভবনে পরিচালনা করা হচ্ছে। আছে ছয়টি অনুষদ। সেগুলো হলোÑ ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস, ফ্যাকাল্টি অব আটর্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস, ফ্যাকাল্টি অব ল’, ফ্যাকাল্টি অব সোশ্যাল সায়েন্সেস এবং ফ্যাকাল্টি অব ম্যাথমেটিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেস। ফ্যাকাল্টি অব বিজনেসের অধীনে অ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, ফিন্যান্স, মাকেির্টং ও হিউম্যান রিসোসর্ বিষয়ে অনাসর্ ডিগ্রি লাভের সুযোগ আছে। এ অনুষদের অধীনে ‘মাস্টাসর্’ ডিগ্রি হিসেবে এক্সিকিউটিভ এমবিএ ও মাস্টাসর্ অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি দেওয়া হয়। ফ্যাকাল্টি অব আটর্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজের অধীনে ইংরেজিতে বিএ ও এমএ এবং ইংলিশ লিটারেচার অ্যান্ড ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টিচিংয়ে মাস্টাসর্ ডিগ্রি দেওয়া হয়। ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেসের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনাসর্ ডিগ্রি দেয়া হয়। ফ্যাকাল্টি অব ল’র অধীনে এলএলবিতে অনাসর্ এবং এক ও দুই বছরের ‘এলএলএম’ মাস্টাসর্ ডিগ্রি দেয়া হয়। ফ্যাকাল্টি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের অধীনে অথর্নীতিতে অনাসর্ ও মাস্টাসর্ এবং এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকসে অনাসর্ ডিগ্রি দেওয়া হয়। ফ্যাকাল্টি অব ম্যাথমেটিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেসের অধীনে গণিতে এক বছর ও দুই বছরের (জেনারেল ও থিসিস) মাস্টাসর্ ডিগ্রি দেয়া হয়। এভাবে বিইউবিটিতে মোট ১২টি বিষয়ে অনাসর্ ও ৯টি বিষয়ে মাস্টাসর্ ডিগ্রি দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ অধ্যাপক মো. আবু সালেহ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠাতারা সবাই শিক্ষাবিদ। তারা সাধারণ পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের অল্প খরচে, উন্নত মানের উচ্চশিক্ষা দানের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, একে অলাভজনক কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কল্যাণকর বিশ্ববিদ্যালয় করা। সেই লক্ষ্যে শুরু থেকেই আমরা গুণগতমানের শিক্ষাদান করে চলেছি। ১২ থেকে ১৫ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী টিউশন ফিতে নানা ধরনের বৃত্তি ও শতভাগ ওয়েইভার বা ছাড় নিয়ে পড়ালেখা করছে।’ গুণী শিক্ষকের এই কথার সঙ্গে পুরোপুরি একমত হলেন বিবিএর আনোয়ার হোসেন। সপ্তম সেমিস্টারের এই ছাত্র বললেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের পাথর্ক্য হলোÑ বিইউবিটিতে লেখাপড়ার খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং সিজিপিএ চারের মধ্যে ‘চার’ পেলে শতভাগ শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে পুরোপুরি বিনা বেতনে লেখাপড়া করা যায়।’ তবে বিইউবিটিতে লেখাপড়ার পদ্ধতি ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় খুবই কড়াকড়ি রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মিঞা লুৎফার রহমান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার জন্য সুষ্ঠু ও নিরিবিলি পরিবেশ নিশ্চিত করেছি। মাদকসেবন, ধূমপান বা অযথা হট্টগোল যেন কেউ করতে না পারে, সে জন্য পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা নিয়মিত শ্রেণিকক্ষ, খেলার স্থানসহ সব স্থান পরিদশর্ন করি। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা বিপথে যেতে পারে না।’ সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে লেখাপড়া করে ছাত্র-ছাত্রীরা পাশ করে গেলেও তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মন পোড়ে। পুরনো ও বতর্মান ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সম্পকর্ তৈরি এবং যোগাযোগ রক্ষার জন্য ‘বিইউবিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’ আছে। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এএইচএম আজমল হোসেন বললেন, “বিইউবিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলোÑসাবেকদের হাত ধরে যেন বতর্মান ও ভবিষ্যতের ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ভালো কমের্ক্ষত্রে যোগদানের সুযোগ পায়। আমরা ক্যারিয়ার কানির্ভালের আয়োজন করি, বনভোজনে যাই। অ্যাসোসিয়েশনের গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ‘বৃত্তি তহবিল’ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সেরা বিভাগ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আমীর আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে লেখাপড়ার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। কমর্মুখী বিশ্ববিদ্যালয় বলে আমরা ব্যবহারিক শিক্ষাদানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিইউবিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিল্প-কারখানাবিষয়ক চারটি ব্যবহারিক কোসর্ পড়ানো হয়। ফলে সেসব প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পকের্ ছাত্র-ছাত্রীরা জ্ঞান লাভ করে, তাদের কমাির্ভজ্ঞতা তৈরি হয়, ভবিষ্যতে সেগুলোতে তারা কাজ করার সুযোগ পায়। তা ছাড়া ব্যবহারিক লেখাপড়ার অংশ হিসেবে এই বিভাগে ১১টি সমৃদ্ধ গবেষণাগার রয়েছে। আমাদের ৪৫ জন শিক্ষক আছেন। শুধু এখানে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে লেখাপড়া করে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই বিদেশে মাস্টাসর্, গবেষণা ও পরে পিএইচডি করেছে।’ এই বিভাগটি সহশিক্ষা কাযর্ক্রমে এগিয়ে আছে। বিভাগের চেয়ারম্যান জানালেন, কিছুদিন আগে তঁাদের উদ্যোগে ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুুলিশ কমিশনার কাযার্লয়ের সহযোগিতায় ঢাকা মহানগরের সাতটি থানার পুলিশ কমর্কতাের্দর নিয়ে ‘সাইবারক্রাইম ইনভেস্টিগেশন’-এর কমর্শালা করা হয়েছে। তাতে যেমন পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের কম্পিউটার সম্পকীর্য় অপরাধগুলোর ব্যাপারে জ্ঞান ও সেগুলো রোধের দক্ষতা তৈরি হয়েছে, তেমনি শিক্ষকদেরও বাংলাদেশে প্রচলিত কম্পিউটারনিভর্র অপরাধ সম্পকের্ জানা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (জনসংযোগ) জিসান আল যুবাইর বললেন, ‘বিইউবিটিতে টেক্সটাইল বিভাগের ১২টি আধুনিক ল্যাবসহ মোট ৪২টি ল্যাব রয়েছে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, ইংরেজি ও আইন বিভাগের আলাদা ল্যাব আছে।’

উন্নত ভবিষ্যৎ

বিইউবিটির সব বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার গড়ে দেওয়ার জন্য নানা কমর্শালা, চাকরির মেলা, পরামশর্সভা ইত্যাদির আয়োজন করে ‘ক্যারিয়ার গাইডেন্স অফিস’। এটির পরিচালক মোহাম্মাদ মাসুসুর রহমান বলেন, “একেবারে নতুনদের নিয়ে আমাদের কাজ শুরু করতে হয়। ‘নেতৃত্বে উদ্বুদ্ধকরণ’ নামে তাদের জন্য আমাদের একটি কমর্সূচি রয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই যেন তাদের সুদূরপ্রসারী চিন্তা-চেতনা গড়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতে যেন সঠিক কমের্ক্ষত্র বেছে নিতে পারে, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্সহ বিভাগগুলোর শিক্ষক, প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা আমন্ত্রিত হয়ে এসে তাদের পরামশর্ দেন।’ তিনি জানালেন, ‘আমাদের মূল কাজ হলো, ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের ভবিষ্যৎ পেশা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে দিকনিদেশর্না প্রদান ও ধারণা দেওয়া। সে জন্য এই অফিসের উদ্যোগে প্রতি শনি ও বৃহস্পতিবার ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের নিয়ে পরামশর্ ও আলোচনাসভার আয়োজন করি। তা ছাড়া আমাদের উদ্যোগে সব বিভাগের শিক্ষাথীের্দর নিয়ে তাদের নেতৃত্ব ও দক্ষতা বিকাশের জন্য কমর্শালার আয়োজন করা হয়। সেসব কমর্শালায় নানা পেশার সফল মানুষরা অতিথি হিসেবে এসে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। বিষয়ভিত্তিক সেমিনার তো হয়ই। নতুন অনেক কমর্শালারও আয়োজন করি। আমরা ‘প্রফেশনাল এটিকেট’ বা ‘পেশাগত শিষ্টাচার’ বিষয়ে কমর্শালার আয়োজন করেছি। তাতে আমাদের সব বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নিয়েছে।” তিনি জানালেন, কমর্সূচি, সভা বা সেমিনারের মধ্যে তাদের কাযর্ক্রম সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাথীের্দর ইন্টানির্শপের ব্যবস্থা করে দেওয়াও তাদের অন্যতম কাজ। ক্যারিয়ার গাইডেন্স অফিসের যৌথ আয়োজনে ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কোসর্ পরিচালনা করা হয়। দেশ-বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে এই অফিসের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণা সমঝোতা চুক্তির আওতায় সেসব দেশে উচ্চশিক্ষা, গবেষণার জন্য ক্রেডিট ট্রান্সফার কাযর্ক্রম পরিচালনা করা হয়। তারা গত মাচের্ প্রতিবারের মতো ‘বিইউবিটি ক্যারিয়ার ফেয়ার ২০১৭’র আয়োজন করেছেন। সেখানে দেশের নামকরা চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের কমর্মুখী দক্ষতা বৃদ্ধি কমর্সূচির অংশ হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষাথীর্ ও শিক্ষকদের নিয়ে টেক্সটাইলবিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করেছেন। সেখানে এই খাতের গুরুত্বপূণর্ মানুষরা অংশ নিয়েছেন। সেমিনার শেষে টেক্সটাইল ল্যাবে ছাত্র-ছাত্রীদের তৈরি তোয়ালে অতিথিদের উপহার দেওয়া হয়েছে এবং তাতে তারা অত্যন্ত খুশি হয়েছেন।

জানাের্ল বিইউবিটি

বিইউবিটির রেজিস্ট্রার ও জানাের্লর প্রকাশক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, “টাকা-পয়সা গ্রহণ ও পদের বিচার না করে শুধু নিবন্ধের মানের ভিত্তিতে ‘বিইউবিটি জানার্ল’-এ লেখা প্রকাশিত হয়। প্রতি বছর ইংরেজি ভাষায় একটি করে এ পযর্ন্ত মোট আটটি জানার্ল প্রকাশিত হয়েছে।’ ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক, ফ্যাকাল্টি অব আটর্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজের ডিন ও জানাের্লর এডিটর ড. সৈয়দ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘কোনো গবেষক লেখা জমাদানের পর আমরা সেটির সফট কপি আধুনিক ডিভাইসে পরীক্ষা করে সত্যতা যাচাই করি। এরপর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে গড়া জানার্ল কমিটি লেখার মান যাছাই করেন। খ্যাতনামা শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গড়া রিভিউ কমিটির মাধ্যমেও সেটির বিশ্লেষণ করা হয়। এডিটরিয়াল বোডর্ সেটি নিবার্চনের পর আমার কাছে পাঠালে ভাষা ঠিক করে প্রকাশের জন্য পাঠাই।’ তিনি জানালেন, যে কোনো গবেষক বিইউবিটি জানাের্ল লেখা প্রকাশ করতে পারেন। প্রতি সংখ্যায় ১২ থেকে ১৫টি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। বিইউবিটি জানাের্লর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোডর্ অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সফিক আহমেদ সিদ্দিক, উপাচাযর্ অধ্যাপক ড. মো. আবু সালেহ্ এবং ট্রাস্টি বোডের্র সাবেক সদস্য ও কমাসর্ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক কাজী মো. নুরুল ইসলাম ফারুকী।

ব্যস্ত আট ক্লাব

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আটটি ক্লাব আছে। সেগুলো হলোÑ বিজনেস ক্লাব, ডিবেটিং, কালচারাল, ফটোগ্রাফি, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার, গেমস অ্যান্ড স্পোটর্স, আইটি ও রোভার স্কাউট ক্লাব। ক্লাবগুলো নিয়ে বলতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ফটোগ্রাফি ও ডিবেটিং ক্লাবের চিফ কো-অডিের্নটর (প্রধান সমন্বয়কারী) মো. আবদুল্লাহ আল আজাদ বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি নানা কাযর্ক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব গড়ে দেয়া, সমাজের সবের্শ্রণির মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ তৈরি করা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তাদের যুক্তিনিভর্র করা, তাদের মধ্যে নেতৃত্বদানের যোগ্যতার বিকাশের জন্য ক্লাবগুলো সারাবছর অনেক কমর্কাÐ পরিচালনা করে।’ সেসব কাযর্ক্রমের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “বিজনেস ক্লাব ‘বিজনেস আইডিয়া কম্পিটিশন’ বা ব্যবসায় ধারণা প্রতিযোগিতা করে; ‘মাকেির্টং পলিসি’ বা বিপণননীতি নিয়ে কমর্শালা করে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ক্লাবটি ‘হোয়াই উই ফেইল?’ নামে একটি ব্যবসায়িক সেমিনারের আয়োজন করেছে।’ তিনি জানালেন, প্রতিটি ক্লাবের সমস্যাগুলোর সমাধান, প্রতিযোগিতার আয়োজন ও তাদের দিকনিদের্শনা প্রদানের জন্য শিক্ষকরা ক্লাবগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। নিজেদের ক্লাবের গল্প করতে গিয়ে আইটি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আহসানুল আলম রিফাত বলেন, ‘আমরা সারা বছর ধরে নানা কাজ করি, অনেক আয়োজন আছে। সেগুলোর মধ্যে ‘ইন্টারন্যাশনাল এসিএম আইসিপিসি ঢাকা সুইট ২০১৪’ অন্যতম। তাতে সারাদেশের ৩৫০ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন। তা ছাড়া কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সঙ্গে যৌথ আয়োজনে গত বছরের ৮ থেকে ১৩ অক্টোবর পঁাচ দিন ধরে ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রামিং ক্যাম্প’ করেছি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও বিশিষ্ট কম্পিউটার ব্যক্তিত্ব ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ দিতে এসেছিলেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিয়ে আলাদা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা করেছি, অন্ত ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাও করেছি।’

গেমস অ্যান্ড স্পোটর্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট জাকিরুল ইসলাম শাওন জানান, তাদের ক্রিকেট দলটি বেশ শক্তিশালী। টানা তিনবার ‘ক্লেমন ইনডোর ক্রিকেট টুনাের্মন্ট’-এ অংশ নিয়েছে, গত বছরের ১৫ এপ্রিল ‘লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ড’ ক্রিকেট টুনাের্মন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, ‘ডিআইইউ-একমি ইন্টার ইউনিভাসিির্ট ক্রিকেট টুনাের্মন্ট ২০১৭’তে সেমিফাইনালে খেলেছে।

ডিবেট ক্লাব ঘুরে জানা গেল, ক্লাবের সদস্যরা নিয়মিত জাতীয় বিতকর্ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতকর্ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। গত বছরের ১১ থেকে ১৬ নভেম্বর তারা আন্তঃবিভাগ বিতকর্ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন।

সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব এই সমাজের মানুষের জন্য কাজ করে। গত বছরের ২৬ আগস্ট ক্লাবের সদস্যরা কুড়িগ্রাম জেলায় গিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ক্লাবগুলোর বন্ধুদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা খাবার, ওষুধপত্র, পোশাকসহ নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তারা ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান’, শীতে অসহায়দের মধ্যে পোশাক বিতরণ কমর্সূচি পালন করেন। সামাজিক সচেতনতার জন্য মাদক, যৌতুক, নারী নিপীড়নসহ নানা বিষয়ে সেমিনার ও কমর্শালার আয়োজন করেন।

লাইব্রেরি

বিইউবিটির তিনটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি আছে। একটি প্রায় দুই হাজার ১০০ বগর্ফুটের, ১৫০ আসনবিশিষ্ট। অন্যটি পঁাচ হাজার ৬৭৮ বগর্ফুটের, ২৫০ আসনবিশিষ্ট। আরেকটিও পঁাচ হাজার বগর্ফুট আয়তনের, আসনও তেমন। স্থায়ী ক্যাম্পাসের এই লাইব্রেরিগুলোতে মোট ২৪ হাজার ২৩৬টি বই, এক হাজার ৫৯০টি জানার্ল, এক হাজার ৪৮২টি সাময়িকী ও ৩১০টি অডিও ভিজ্যুয়াল উপকরণ আছে। লাইব্রেরিতে কম্পিউটার ও অনলাইন ক্যাটালগিং সুবিধা আছে। লাইব্রেরিতে বসে পড়ছিলেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চতুথর্ সেমিস্টারের ছাত্র সোহাগ উল আনাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভাগের সব বই লাইব্রেরিতে আছে। আমরা এক সপ্তাহের জন্য দুটি বই বাসায় নিয়ে পড়তে পারি। অনলাইনেও বইয়ের অ্যাকসেস পাওয়া যায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান বিনয় কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের কাছে সব বিভাগের সংশ্লিষ্ট সব বই ও জানার্ল আছে। সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পযর্ন্ত লাইব্রেরিগুলো খোলা থাকে। সোমবার বিকেল ৫টা পযর্ন্ত খোলা থাকে।’ তিনি জানালেন, ‘বিইউবিটি লাইব্রেরি কোহা আইএলএস সফটওয়্যার ব্যবহার করে। কোহা হলো বিশ্বের প্রথম উন্মুক্ত লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার। এটির মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর এক হাজার ৫০০ বিখ্যাত লাইব্রেরি ও তথ্যপ্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করতে পারি।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<16628 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1