শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আলোকিত মানুষের আসর

যে সময়ে কেউ তার প্রেয়সীর হাত ধরে প্যারিস রোড দিয়ে হেঁটে বেড়ায় কিংবা অন্য কোনো অপ্রয়োজনীয় কাজে নষ্ট করে নিজের মূল্যবান সময় সে সময় পাঠচক্রের সদস্যরা পঠন এবং পযের্বক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের আরও বেশি শানিত করে তোলে। একটি সুস্থ ধারার জাতি গঠনে এর কোনো বিকল্প আছে কি?
আরাফাত শাহীন
  ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বই পড়–য়াদের বই পড়ার আসরে শিক্ষাথীর্রা

প্রথম বষের্র শেষের দিকের ঘটনা। আমি ততদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছি। সেখানে সপ্তাহে একদিন বসা হয়। কথা হয় নানান ধরনের। আগামী দিনে কোন কোন পদক্ষেপ হাতে নেয়া যায় সেসব বিষয়ও আলোচনা করা হতো। আমি কিছু কিছু বিষয়ে কথা বলতাম; যেসব বিষয় আমার নিজের কাছে ভালো লাগে। বাদবাকি সময় চুপচাপ বসে সবার কথা শুনতাম। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশিরভাগ সংগঠনের সঙ্গেই বাস্তবতার কোনো সংযোগ নেই। ক্ষণিকের আনন্দই সেখানে মুখ্য বিষয় হয়ে দেখা দেয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমার মনে হলো, আমি যেসব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি সেখানে কী যেন একটা নেই! যেখানে প্রাণের কোনো টান নেই, হৃদয়ের কোনো আকাক্সক্ষা নেই সেখানে গিয়ে কি মানুষ বেশিদিন টিকতে পারে! আমার মনে হলো, আমার এমন কোথাও যাওয়া প্রয়োজন যেখানে আমার প্রাণের চাওয়া পূণর্ হবে আর হৃদয় হবে শীতল। আর একমাত্র সাহিত্যের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠনই আমার এই চাওয়া পূরণ করতে পারে।

কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাম্পাসে আসা ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সদস্য হয়ে গেলাম। একটা কাডের্ পোষাবে না বলে দুটি কাডর্ করলাম। এভাবে কয়েকমাস পড়ার পর মনে হলো, আমি যে বইগুলো পড়ছি সেগুলো নিয়ে যদি কারও সাথে আলোচনা করা যেত! কিন্তু এমন মানুষ আমি কোথায় পাবো! এমন সংগঠন কি আছে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে?

তখন পযর্ন্ত আমি জানতাম না যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পযাের্য় তাদের কাযর্ক্রম পরিচালনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবচেয়ে কাছের বন্ধু নাফিস অলিই আমাকে এই সংগঠনটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। উত্তম জিনিসের সন্ধান যে দিতে পারে তাকেই তো কাছের মানুষ বলা যায়, নাকি?

তারপর থেকে আমি যুক্ত হয়ে গেলাম বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা পাঠচক্রের সঙ্গে। প্রশাসনিক ভবন থেকে শহীদ মিনারের দিকে যে রাস্তাটি গিয়েছে তার বাম পাশেই লাইটপোস্টের গায়ে ছোট্ট করে লাগানো একটা সাইনবোডর্ চোখে পড়বে। তাতে লেখা রয়েছে ‘শাখা পাঠচক্র, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’। প্রথম দেখায় সাইনবোডির্ট হয়ত অনেকের নজর এড়িয়ে যেতে পারে কিন্তু কেউ যদি একটু মনোযোগ দিয়ে দেখে তাহলে ঠিকই চোখে পড়বে।

এটাই হলো পাঠচক্রের সদস্যদের আড্ডাস্থল। সপ্তাহে একদিন- প্রতি সোমবার বিশেষ কোনো প্রাকৃতিক দুযোর্গ কিংবা অন্যকোনো সমস্যা না হলে পাঠচক্রের সদস্যরা ঠিকই এসে হাজির হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে পড়ার জন্য একটা বই দেয়া হয়; যেটা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয়। পরবতীর্ সপ্তাহে পঠিত বইয়ের ওপর চলে চুলচেরা বিশ্লেষণমূলক আলোচনা। কখনও কখনও সদস্যদের মধ্যে মতপাথর্ক্য হলে তুমুল বিতকর্ শুরু হয়ে যায়। পাশ দিয়ে যাওয়া অনেকেই হয়তো তখন এদিকে ফিরে তাকায়।

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সারাদেশে আলোকিত মানুষ গড়ার যে সংগ্রাম শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা পাঠচক্র তারই একটি অংশ। দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাদের কাযর্ক্রম পরিচালনা করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মধ্যে অন্যতম।

বিকেলে সবুজ ঘাসের নরম গালিচার বুকে বসে ২০-৩০ জন মানুষ বাংলা এবং বিশ্বসাহিত্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে বিষয়টা ভাবতেই অদ্ভূত রকমের একটা ভালোলাগা কাজ করে। যে সময়ে কেউ তার প্রেয়সীর হাত ধরে প্যারিস রোড দিয়ে হেঁটে বেড়ায় কিংবা অন্য কোনো অপ্রয়োজনীয় কাজে নষ্ট করে নিজের মূল্যবান সময় সে সময় পাঠচক্রের সদস্যরা পঠন এবং পযের্বক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের আরও বেশি শানিত করে তোলে। একটি সুস্থ ধারার জাতি গঠনে এর কোনো বিকল্প আছে কি?

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এমনিতেই একটি ব্রান্ডের নাম। দেশের অগণিত বইপ্রেমী তাদের মনের ক্ষুধা মেটান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে। শাখা পাঠচক্রে এলে বই পড়ার পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি উপকার পাওয়া যায়। প্রথমত, সবার সামনে কথা বলতে শেখা যায়, নিজেকে উপস্থাপন করতে শেখা যায়। দ্বিতীয়ত, নিজের মেধা ও মননকে আরও বেশি শানিত করে তোলা যায়। এ ছাড়া একসাথে যখন আনেক আলোকিত মুখ এসে বসে তখন নিশ্চিতরূপে সেখান থেকে কিছু না কিছু অজর্ন করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আর দশটা সংগঠনের সাথে শাখা পাঠচক্রের নিশ্চিত একটা পাথর্ক্য আছে। এখানে যে এসেছে একবাক্যে সে এটা স্বীকার করে নিয়েছে। পাঠচক্রের সদস্যরা শুধু বইই পাঠ করেন না তারা নানামুখী সাংস্কৃতিক কমর্কাে র সাথেও জড়িত। আমাদের বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো এখানে পালন করা হয়। এছাড়া প্রতিবছর ‘বহতা’ নামের একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয় যার মাধ্যমে সদস্যগণ তাদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া যে কেউ পাঠচক্রের সদস্য হতে পারেন। আপনিও হতে পারেন পাঠচক্রের একজন সম্মানিত সদস্য। যদি আমাদের এ আয়োজন আপনার ভালো লাগে তাহলে আলোকিত মানুষের আসরে আপনাকে স্বাগতম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<17854 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1