বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ

জমিদারবাড়ী থেকে ছড়াচ্ছে শিক্ষার আলো

শামীম শিকদার
  ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মূলত জমিদারবাড়ী, তবে সবার কাছে পরিচিত কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ নামে। বাড়িটির নান্দনিক ডিজাইন ও নকশা করা শৈল্পিক ছেঁায়া দেখে অনেকে আবার রাজার বাড়িও মনে করে। বলছি, গাজীপুরের কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রশাসনিক ভবনের কথা। পূবের্ জমিদার রামনাথ রায়ের বাসভবন থাকলেও ১৯৬৫ সালে কলেজ পরিচালনার কাযর্ক্রম শুরু হয় এ ভবন থেকেই। ভবনের ডিজাইন ও কারুকাযের্র ছেঁায়ায় পুরোপুরিভাবে বুঝা যায় প্রাচীন অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে এ ভবনকে কেন্দ্র করে। উত্তর পাশ দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের মূল ফটকে প্রবেশ করতেই হাতের পাশে পূবর্ দিকে চোখে পড়বে গাছের নিচে শত বছর আগের পুরনো কারুকাযর্ করা এই ভবনটি। দুতলা এই ভবটিকে চতুভুের্জর মতো করে ডিজাইন করা হয়েছে। ভবনের পূবর্ ও উত্তর পাশে দুটি, পশ্চিম পাশে তিনটি, এবং দক্ষিণ পাশে একটি, মোট ৮টি রুম নিয়ে সাজানো হয়েছে ভবনটির নিচতলা। ভবনের মধ্যে সামান্য খালি জায়গায় রয়েছে ৩টি মাঝারি আকারের আম গাছ। ভবনটির পশ্চিম পাশ দিয়ে রয়েছে দুতলায় যাওয়ার মতো একটি খাড়া সিঁড়ি। যে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে অনেকটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার প্রয়োজন থাকাটা আবশ্যক। দুতলায় দক্ষিণ পশ্চিম কনাের্র রয়েছে ৩টি রুম। একটি রুমে ভাঙা ড্রাইনিং টেবিল ও অন্য আরেকটি রুমে ময়লা-আবজর্নাযুক্ত পুরনো পত্রিকা, আলমারি, খাট ও বিভিন্ন জিনিসপত্র। দুতলা ছাদের বাকি অংশ বতর্মানে বিভিন্ন সবুজ ঘাসে ঘিরে রেখেছে। তা ছাড়া বিভিন্ন আকারের বটগাছ বেড়ে উঠছে জমিদারবাড়ীর এ ছাদেই। ছাদের ঘাস ও গাছ অনেক বেড়ে উঠলে কলেজ কতৃর্পক্ষ তাদের নিজেস্ব উদ্যোগে তা ছঁাটাই করে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করে। ভবনটির নিচে বিভিন্ন রুমে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ভাঙা জিনিসপত্র ফেলে রাখা হলেও পশ্চিম পাশের একটি রুমে অফিসের কাজকমর্ ও দক্ষিণ পাশের রুমটিকে কলেজ প্রিন্সিপালের রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবনের সামনের সাইট দক্ষিণে স্থায়ীভাবে ইট দিয়ে ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত করে বারান্দা তৈরি করা থাকলেও চলাচলের সুবিধাথের্ পরবতীর্ সময়ে পশ্চিম পাশ দিয়ে ছোট আকারে তৈরি করা হয় একটি বারান্দা। পুরো ভবনটিতে শ্যাওলা পড়ে পিচ্ছিল একটি ভাব তৈরি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। অন্যদিকে রুমের ভেতরের অন্ধকার পরিবেশ প্রথমবার যে কোনো ব্যক্তির মনে ভয় জাগিয়ে তুলতে পারে। রুমগুলোর ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার অনেকটা ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। তা ছাড়া দীঘির্দন ব্যবহার না করার ফলে অনেকেই ভেতরে প্রবেশ করতে ক্ষাণিকটা ভয় পাবে। ভবনটি পুরনো ও ভেতরের এমন পরিবেশের কারণে পুরো ভবনটি কলেজ কতৃর্পক্ষের নিয়ন্ত্রণে তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী চাবি নিয়ে ঘুরে দেখার যে একেবারে সুযোগ নেই তা নয়। জমিদার বাড়ির সামান্য একটু সামনেই রয়েছে বিশাল বড় আকৃতির একটি পুকুর। পাশের আইসিটি ভবন পুকুরের শ্যাওলা পড়া পানিতে আয়নার মতো প্রতিছবি হয়ে দৃষ্টি নন্দন করে তুলে। কলেজ ক্যাম্পাসের উত্তরে একাডেমিক ও অফিস ভবন, দক্ষিণে আইসিটি ভবন, পশ্চিমে সায়েন্স ভবন এবং পূবের্ জমিদারবাড়ী। বতর্মানে যেটি প্রশাসনিক ভবন হিসেবে পরিচিত। বাড়িটির সামনে দক্ষিণ পাশে স্থাপন করা হয়েছিল একটি মন্দির। যা বতর্মানে কলেজ মন্দির নামে পরিচিত।

কলেজ ক্যাম্পাসের চারপাশে সুপারি, সেগুন, খেজুর গাছ কলেজ ক্যাম্পাসকে আরও বেশি মনোরম করে তুলেছে। অনেকেই কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে জমিদারবাড়ীটি খুঁজে পাবে না, তার কারণ হচ্ছে পুরো বাড়িটি একটি বকুল ফুল গাছ দ্বারা ঘিরে আছে। সামান্য এগুলেই হাতের বঁা পাশে চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন এই বাড়িটি। সবচেয়ে আশ্চাযের্র বিষয় হচ্ছে ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে ইটের টুকরো খসে পড়লেও সব দরজা জানালা রয়েছে পুরোপুরি অক্ষত। অনেকে ধারণা করে দরজা জানালাগুলো ওই সময়ে গজারি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

জমিদার রামনাথ রায়ের মৃত্যুর পর তার তিন পুত্র ভ‚বতি চন্দ্র রায়, পরেশ চন্দ্র রায় ও প্রাণ গোপাল রায় একে একে জমিদারি স্টেট পরিচালনা করেন। আরেক পুত্র মহেন্দ্র চন্দ্র রায় অন্যত্র বসবাস করেন। প্রায় সাত হাজার বিঘা জমি নিয়ে এ জমিদারি স্টেট পরিচালিত হতো। এ বাড়ির নাটমন্দির ও রন্ধনশালায় বছরব্যাপী হতো পূজাপাবর্ণ। বিশেষ করে দুগার্পূজায় বসত নাট্যোৎসব ও সংগীতের আসর। বিভিন্ন জায়গা থেকে নামিদামি শিল্পীরা এসে উৎসবে যোগ দিতেন। চলত মাসব্যাপী যাত্রাপালা।

অবহেলা, অযতœ এবং সংস্কার ও রণাবেণের অভাবে জমিদারবাড়ীর মূল ফটক ও মন্দিরসহ সব শৈল্পিক স্থাপনাই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পযর্টকদের দৃষ্টি আকষর্ণ করলেও এই জমিদারবাড়ীকে ঘিরে কোনো পযর্টন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। তবে মূল জমিদারবাড়ীটিতে এখন কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের কাযর্ক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২১ একর জায়গা নিয়ে এ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও বাড়িটিতে সংস্কারের ছেঁায়া লাগেনি। ফলে জমিদারবাড়ী এখন শুধুই কালের নীরব সাক্ষী হয়ে দঁাড়িয়ে আছে। দীঘির্দন এই বাড়িটির কোনো সংস্কার না হলেও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে উপজেলায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষার আলো ছড়লেও জমিদারবাড়ীর ঐতিহ্য রক্ষা করা বা বাড়িটি নতুন করে সংস্কার করার কোনো উদ্যোগ নেই। শত বছর আগের পুরনো বাড়ি বলে যথেষ্ট প্রচার ও প্রসারের অভাবে নতুন প্রজন্মরা অনেকেই এ বাড়ি সম্পকের্ অবগত নয়। হাজারো ঐতিহ্য জড়িত কাপাসিয়ার অন্যতম একটি পযর্টক কেন্দ্র হতে পারে কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের এই জমিদারবাড়ীটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<26602 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1