বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে

ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন
  ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
কৃষি ও গবেষণার অন্যতম প্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সুবিশাল আম বাগান অথবা হটির্কালচার গাডের্ন কিংবা বিশাল এলাকাজুড়ে ফসলের মাঠ, দুচোখ ভরে শুধু সবুজের স্বপ্নÑ এটাই হলো রাজধানীর ছায়া সুনীবিড়, শান্তির নীড়, সবুজ শ্যামলের একটি গ্রাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। একসময়ের ব্যস্ততম ঢাকা শহরের দিনে ও রাতে শিয়ালের চেঁচামেচি কিংবা বানর দলের ডালে ডালে ঘুরে বেড়ানো-এসব এখন অকল্পনীয় মনে হলেও এগুলিই ছিল একসময় এই ক্যাম্পাসের চিরচেনা চিত্র। শেরেবাংলা নগরের প্রায় ৮৭ একর এলাকা নিয়ে বতর্মান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও ২০০১ সালের ১৫ জুলাই তৎকালীন ও বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষনার সাত মাসের মধ্যেই সেদিন একঝঁাক উদ্যমী শিক্ষক, কমর্কতার্ ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ খুব অল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণাকে বাস্তবে রূপ লাভ দিয়েছিল। কৃষি শিক্ষা ও গবেষণাকে ত্বরান্বিত করতে ছাত্র-ছাত্রীদের যুগোপযোগী ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্যই প্রতিষ্ঠানটির জন্ম হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আজকের দিনে (১৫ জুলাই) ১৮ বছরে পদাপর্ণ করলেও দেশের সবার্চীন কৃষির এ বিদ্যাপীঠের রয়েছে ৮০ বছরের গৌরবময় ইতিহাস। প্রায় ৩০০ একর সম্পত্তি নিয়ে ফামের্গট থেকে খামারবাড়ী, সংসদ ভবন এলাকা, মানিক মিয়া এভিনিউ, বাণিজ্য মেলার মাঠসহ বতর্মান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নিয়েই ১৯৩৮ সালে উপমহাদেশের কৃষির সুতিকাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দি বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। পূবর্বাংলার কৃষকদরদী নেতা ও অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক প্রথম এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। আর তখন কৃষির যাবতীয় কমর্কাÐ ও পরিচালিত হতো এ প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই। যদিও পরবতীের্ত রাজনৈতিক মারপ্যঁাচে পড়ে এ প্রতিষ্ঠানকে অবহেলা করে ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এর কমর্কাÐ অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়ে ছিল। ইতিহাস যাই হোক না কেন কৃষি শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণে এ প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা প্রায় ৩০ হাজার কৃষিবিদের রয়েছে গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা।

শুধু তাই নয় ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুথান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বই এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষাথীর্রা অনেক গুরুত্বপূণর্ অবদান রাখে। যুগে যুগে এ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে অনেক দেশবরেণ্য কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষক যাদের মধ্যে ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা ও ড. হাসানুজ্জামান কৃষিবিদদের নিকট এক পরিচিত নাম। এ ছাড়া সাবেক মুখ্য সচিব ড. মহবুব উজ্জামানসহ অনেক উচ্চপদস্থ আমলা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতা এ প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র। সাম্প্রতিক কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরজাহান বেগমের বাংলাদেশ পাবলিক সাভির্স কমিশন (বিপিএসসি)-এর সদস্য নিবাির্চত হওয়ার খবরটি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাব মূতিের্ক আরও বেশি উজ্জ্বল করেছে। এ ছাড়া কৃষিতত্ত¡ বিভাগের তরুণ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মীজার্ হাসানুজ্জামান একজন স্বনামধন্য কৃষি বিজ্ঞানী হিসেবে ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছেন। শুধু তাই নয়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এখন জাতীয়ভাবে স্বীকৃত, যাদের মধ্যে শেকৃবি ডিবেটিং সোসাইটি, কিষাণ থিয়েটার ও এগ্রি রোভাসর্ অন্যতম।

কৃষিপ্রধান এই দেশকে খাদ্য ঘাটতির দেশ নয় বরং উদ্ধৃত খাদ্যের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যেই কাজ করছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা গ্র্যাজুয়েটরা। সামাজিক অবস্থানকে দূরে ঠেলে কৃষকের ভাগ্য পরিবতের্নর জন্য কৃষিবিদরা ছুটছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। আর তাই কৃষক ও এখানকার কৃষিবিদদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই আজ আমরা দানা জাতীয় খাদ্যে অনেকটা স্বয়ং সম্পূণর্। বতর্মানে কোনো দুযোর্গকালীন অবস্থা ছাড়া সরকারকে উল্লেখযোগ্য কোনো খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয় না, বরং আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এবং কৃষকের প্রয়োজনীয় বীজ ও সার সঠিক সময়ে সরবরাহ করতে পারলে আমরা খাদ্য রপ্তানি ও করতে পারি। তবে সরকারের কৃষি গবেষণা খাতে আরো বেশি উৎসাহ প্রদান এবং সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি-এই খাতটির জন্য আরো বেশি সুফল বয়ে আনতে পারে। আর সেই সাথে আগামী দিনের তুখোর মেধাবী শিক্ষাথীর্রা আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে কৃষি শিক্ষায়।

আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু অথের্র অভাবে উল্লেখযোগ্য গতিতে গবেষণা কাজ এগোয় না। সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌতিক অবকাঠামোর ঊন্নয়ন আর ছাত্র-শিক্ষক-কমর্কতার্র সংখ্যা বাড়লেও সে অনুযায়ী বাড়েনি গবেষণা কাযর্ক্রম। একদিকে জমির অভাব আর অন্যদিকে উন্নত কোনো বিশেষায়িত ল্যাব আজ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই বলে কি গবেষণা কাযর্ক্রম থেমে আছে? না, বিশ্ব যখন এগিয়ে যাচ্ছে জ্যামিতিক গতিতে আর আমরা এগোচ্ছি গাণিতিক গতিতে। উন্নত বিশ্ব, বিশেষ করে জাপানের সাথে তুলনা করলে আমরা এখন ও বহু বহু দূরে।

যেহেতু রাজধানীর বুকে এ প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ৮৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তাই কৃষকের সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধানকল্পে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন উন্নতমানের একটি বিশেষায়িত ল্যাব কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় ক্ষেত্রে নতুন ধারা উন্মোচন করবে। এ ছাড়া গত কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো খাদ্যে ভেজাল, আর এ ভেজাল নিণের্য়র জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি ল্যাব স্থাপন এখন সময়ের দাবি, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাথীর্রা গবেষণায় আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আর যেহেতু মাঠ গবেষণার জন্য অনেক বেশি জমির প্রয়োজন, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পরিত্যক্ত বাণিজ্য মেলার মাঠটিকে শুধু গবেষণার জন্য দেয়া যায় কিনা সরকারের এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দেয়া উচিত বলে মনে করেন কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।

কৃষি যেহেতু বাংলাদেশের অথর্নীতির প্রধান চালিকাশক্তি এবং অধিকাংশ মানুষ এখন ও কৃষির ওপর নিভর্রশীল, এ ছাড়া উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কমর্সংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা অনস্বীকাযর্Ñ তাই কৃষি ও কৃষকের স্বাথের্ এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপর সরকারের বিশেষ নজর ও আরও আথির্ক সহযোগিতার প্রয়োজন।

সময়ের তালে অনেক কিছুই হারিয়ে যাবে, আর নতুনরা মেতে থাকবে নতুন কোন আশায় ও নেশায়। প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষি গবেষণায় ও শিক্ষায় ঈবহঃৎব ড়ভ ঊীপবষষবহপব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক, কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে আরও বেশি নিবেদিত হোক-এই প্রত্যাশাই করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<3957 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1