মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আবিরের রঙে রঙিন বন্ধুত্ব

আলী ইউনুস হৃদয়
  ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
র্যাগ ডে-তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম ব্যাচের শিক্ষার্র্থীযাগ ডে-তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী

বসন্তের কুয়াশা মোড়ানো সকালবেলা। সূর্যের আলো তখনও চারপাশে ছড়িয়ে পড়েনি। জনশূন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। ঘড়িতে সকাল ৭টা বাজে। এর মাঝেই সেখানে দেখা মিলল দেশ, রেজা আর রেজাউলের সঙ্গে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সেখানে ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী হাজির হয়ে গেল। প্রত্যেকেই সাদা টি-শার্ট পরে হাসি-আড্ডায় মেতে উঠেছে। তারা সবাই এখানে এসেছেন শিক্ষাজীবনের অন্যতম একটি দিনর্ যাগ ডে উদযাপন করতে।

জানতে চেয়েছিলাম সকালে কেন এই আয়োজন? তাদের একজন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল হোসেন বললেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাডেমিক সময় সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র বাজানো, সাউন্ড বক্স ব্যবহার ও মাইকিং বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে। সেই নির্দেশনার প্রতি সম্মান জানিয়ে এই সময়ের্ যাগ ডে'র আয়োজন করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত এই সময়ের্ যাগ ডে উদযাপন কখনও চোখে পড়ে না। বেশিরভাগ সময়ই একাডেমিক সময় কিংবা দুপুরের বিরতির মাঝে করতে দেখা যায়। এতে করে পরীক্ষায় অংশ নেয়া বা ক্লাসে বসে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ব্যাহত হয়। সেই অসুবিধার কথা বিবেচনা করেই এই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ব্যতিক্রমীর্ যাগ ডে উদযাপন করেছে।

শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে তারা একে অপরের টি-শার্টে মনের অগোছালো কথাগুলো রঙিন কালি দিয়ে লিখছে। অনেকেই লিখেছেন- ভালো ছেলে, বন্ধু ভালো থেকো ও মনে পড়বে তোমায় আবার কেউ লিখেছেন ফাঁকিবাজ, ঘুমবাবু ও অলওয়েজ লেট। এই কথাগুলো বন্ধুদের টি-শার্টে লিখে তারা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। এরপর সেখানে তারা গানের তালে দলবদ্ধ হয়ে নাচতে থাকেন। আগে থেকেই কয়েকটি গানের কাটা অংশ জোড়া দিয়ে পাঁচ মিনিটের গান বানিয়েছে। ৯টা বাজতেই তারা একাডেমিক ভবনের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের মাঠের এক কোণে চলে যায়। সেখানে তারা একে-অপরকে আলতো ছোঁয়ায় বিভিন্ন রঙের আবির লাগিয়ে দিতে থাকে। অনেকেই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লে কেউ এসে জোর করে তুলে বলছে- 'কিরে বসে আছিস কেন?' এক সময় ফরিদ-মমিন নামের দুইজন শিক্ষার্থী মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কথা বলতে থাকেন এবংর্ যাগ ডে'তে অংশ নেয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অনুভূতি জানতে চাওয়া হয়। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে আলমগীর বলেন, আমি খুব আগ্রহী ছিলামর্ যাগ ডে'র জন্য। ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে বন্ধুদের সঙ্গে এমন একটি দিন হাসি-আড্ডায় কাটিয়ে দেয়ার। শত ব্যস্ততার মাঝেও আমরা এরকম আড্ডায় মিলিত হতে পেরেছি বলে খুব ভালো লাগছে। এরপর একে একে আনন্দ আড্ডার কথা বললেন- জয়শ্রী, পুষ্প, শহিদ, রিয়া, দিহান, স্বপ্না ও সুজনসহ অনেকেই। এরপর তারা দলবেঁধে ক্যাম্পাসে হাঁটতে থাকে। সাদা রঙের একই টি-শার্ট পরিহিত এই শিক্ষার্থীর দলকে দেখে অনেকেই তাকিয়ে ছিলেন। কোনো ধরনেরর্ যালি হচ্ছে না আবার বাদ্যযন্ত্রেরও ব্যবহার নেই। ঘুরতে ঘুরতে তারা প্যারিস রোড, প্রশাসন ভবন ও প্রিয় বিভাগ প্রাঙ্গণে একসঙ্গে ছবি তুললেন। এরপর সবাই যার যার মতো রুমে ফিরলেন। বিকেলে একাডেমিক সময় শেষ হলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ড. জোহা চত্বরের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এরপর অটোযোগে যেয়ে রাজশাহী নগরের একটি রেস্টুরেন্টে সেদিনের রাতের খাবার সেরে নেন। ব্যস্ত একটি দিন শেষে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় দিলেন। সবাই বললেন, দ্রম্নতই যেন আমাদের সময় চলে যাচ্ছে...।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<43713 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1