১৬৩৫টি দরজার ভবন! ছোট বড় মিলিয়ে এত দরজাবিশিষ্ট ভবনটির নির্মাণশৈলীর নাটকীয়তা যে কারো মনকে উদ্বেলিত করে তুলবে। ভবনের এই বিশালত্ব বুঝিয়ে দেয় জাতীয় সংসদের তথা সংসদীয় গণতন্ত্রের বিশালত্বের কথা। গত ১৮ মার্চ সোমবার আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের ১১ জন গিয়েছি মনোমুগ্ধকর এই ভবন দেখতে। এই ভ্রমণে ফারুক গাজী, জাহিদ হাসান, রমজান শেখ, জাকিউল ইসলাম, ফারহানা আঁখি, বিপাশা আখতার, সোনিয়া সুলতানা সুমি, শিরিন শিলা, লিপি খাতুন, হুমায়রা তিথি সঙ্গি হয়েছিল। সেদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির একান্ত সচিব মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন ভাইয়ের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো আমরা লুই আই কানের নির্মাণশৈলীর নাটকীয় এই ভবনে প্রবেশ করি। মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকার পর নতুন যে কাউকে প্রত্যাশিত কক্ষ খুঁজতে অন্যের সহযোগিতা নিতেই হবে। আমরা ১১ জনও সংসদ ভবনেরই কর্মকর্তা রাহুল ভাইয়ের সহযোগিতায় গেলাম প্রত্যাশিত কক্ষে। সেখানে পরিচয়পর্ব শেষে শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটি দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। প্রশস্ত এবং আলোকিত করিডোর দিয়ে সবাই হাঁটছি, আর মুগ্ধ চোখে মনোরম নির্মাণশৈলী অবলোকন করছি। দেখে অবাক হলাম- এই ভবনের নির্মাণশৈলীর নাটকীয়তা এতই মজার যে প্রায় সব দিকই একই রকম মনে হয়েছে। পুরো দেয়াল ঢালাইয়ে করা এ ভবনে কোথাও রং দেয়া হয়নি। এই ভিন্ন ধরনের ঢালাইয়ে করা এ ভবনটির চেহারাই ভিন্ন। বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যায় শুধু দৃষ্টিনন্দনই নয়, এটি অনেক টেকসই ও মজবুত। এ ছাড়া ভবনটি সব সময়ই থাকে প্রাকৃতিক আলোয় ভরা। কিন্তু ভবনটির অদ্ভুত নির্মাণশৈলী আমাদের মতো নতুন আগন্তুকদের জন্য বিভ্রান্তি তৈরি করে। কারণ রংহীন এই ভবনটির সব পথই দেখে একই রকম মনে হয়। অনেকটা ধাঁধা সৃষ্টি করে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে সংসদ ভবনেরই ফরিদ ভাই থাকায় আমাদের চলার পথ সহজ হয়েছে। এই ভবনটিতে রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, সংসদ নেতা, উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রীবর্গ, বিরোধীদলীয় নেতা, চিফ হুইপ, হুইপরা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, সংসদ সচিব এবং সচিবালয়ের অফিসের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও তিনটি পার্টির জন্য নিজস্ব অফিসকক্ষ, বাণিজ্যিক ব্যাংক, ডাকঘর, নামাজ ঘর, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং হল, সংসদ গ্রন্থাগার ও বিমান অফিসের ব্যবস্থা রয়েছে। ভবনে রয়েছে ২৪টি লিফ্ট। পুরো ভবনটি কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সংসদ কক্ষে অধিবেশনের ব্যবস্থা, পর্যায়ক্রমে ইন্টারপ্রিটেশন সিস্টেম এবং স্বয়ংক্রিয় ভোট গণনার ব্যবস্থা রয়েছে। অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের জন্য আসন রয়েছে ৩৫৪টি। এর বাইরে ভিআইপি গ্যালারিতে ৫৬, কর্মকর্তাদের জন্য ৪১, সাংবাদিকদের জন্য ৮০ এবং দর্শকদের জন্য ৪৩০টি আসন রয়েছে। এই সংসদ ভবনের উচ্চতা ১৫৫ ফুট ৮ ইঞ্চি আর সংসদ কক্ষের উচ্চতা ১১২ ফুট। ভবনে মোট সিঁড়ি রয়েছে ৫০টি। এর বাইরে টয়লেট ৩৪০, দরজা ১,৬৩৫টি, জানালা ৩৩৫টি, পার্টিশন ২৮৮টি, গস্নাস শার্টার রয়েছে ৩৫ হাজার ৮৫০ বর্গফুট ও উডেন শার্টার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট।