শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ই স লা মী বি শ্ব বি দ্যা ল য়

চাঁদের পাহাড়ে একদিন

সবাই শিকড়ের সন্ধানে মগ্ন হয়ে গেল। কেউ স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রিয় বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে ছবি তুলছে কেউবা খুঁটে খুঁটে দেখছে সব কিছু। আর আমরা কয়েকজন দেখছি সবাইকে। বিভিন্ন ভাঁজে দাঁড়িয়ে, বসে, লাফ দিয়ে যে যার যার মতো ছবি তোলায় ব্যস্ত। সময় ঘনিয়ে আসছে।
মুতাসিম বিলস্নাহ পাপ্পু
  ১১ মে ২০১৯, ০০:০০
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ক্লাস, পরীক্ষা, ইনকোর্স, অ্যাসাইনমেন্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন কাজ। রুটিন ওয়ার্কের শৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে আনন্দের জোয়ারে কে না চায় গা ভাসাতে। সব নিয়মের বাঁধ ভেঙে হারিয়ে যেতে চায় দূরের কোনো অপরিচিত জায়গায়। আবিষ্কার করতে চায় জীবনের ভিন্ন মানে। মেটাতে চায় মনের খোরাক। তাই শিক্ষা সফর শিক্ষার্থীদের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত বিষয়। আর তা যদি হয় প্রতিদিনে চলার সঙ্গীদের সঙ্গে তবে তো কথাই নেই। আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও এর ব্যতিক্রম হলাম না। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও মহাস্থানগড় ভেনু্য ঠিক হলো। আমরা দল বেঁধে জুলফিকার হোসেন স্যার, মতিনুর রহমান স্যার, মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান স্যার, মোহাম্মাদ সেলিম স্যার, লুৎফর রহমান স্যার, মুন্সী মর্তুজা আলী স্যারের কাছে গেলাম। এর মধ্যে মর্তুজা স্যার আমাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য একবারেই রাজি হলেন। স্যাররা সবাই যেতে না পারলেও আমাদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। আমরা যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি বরাদ্দের জন্য আবেদন করে পাওয়া গেল না। গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। হাতে সময়ও খুব কম। যাওয়ার জন্য ৭ ফেব্রম্নয়ারি অনেক আগেই ঠিক করে রেখে ছিলাম আমরা। সমস্যা নিয়ে গেলাম মতু্যজা স্যারের কাছে। স্যার ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি রিকুইজেশন নিয়ে দিতে চাইলেন। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

সব জল্পনা-কল্পনা শেষে আমরা চূড়ান্তভাবে টু্যরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করলাম। আমি, হাবিব, অসীম, ফয়সাল, সাব্বির, মেহেদী, শাকিল, দিনার, হিমু, জয়, আঞ্জিরসহ আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে টু্যরের সব পরিকল্পনা ও কাজ শুরু থেকেই করে আসছিলাম। মেয়েদের মধ্যে নাজিফা, মৌ, সৃষ্টি, রিমা, নিতুসহ আরও কয়েকজনও মেয়েদের টাকা তোলা ও অন্যান্য কাজে আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা প্রত্যেকে কাজ ভাগ করে নিলাম। স্পটে গিয়ে রান্না করে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। টি-শার্ট, ব্যানার, রান্নার বাজারসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ আমরা এক সঙ্গেই শেষ করলাম। যাওয়ার আগের রাতে ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান জুলফিকার হোসেন স্যার আমাদের সঙ্গে সপরিবারে যাওয়ার জন্য রাজি হলেন। এটি ছিল বার্তি আনন্দ। ৭ ফেব্রম্নয়ারি ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ক্যাফেটোরিয়ার সামনে থেকে বাস ছাড়ল। মেয়েদের হলের সামনে থেকে ১৭ জন বান্ধবীকে আমরা বাসে তুলে নিলাম। আমরা ছেলেরাসহ মোট ৫১ জন বন্ধু-বান্ধবী যাচ্ছি। জুলফিকার স্যার ও মর্তুজা স্যার আমাদের সঙ্গে কুষ্টিয়া মজমপুর থেকে যোগ দিলেন। ঘুম ঘুম চোখে সবাই বাসে উঠে বসে পড়ল। রান্নার জন্য সঙ্গে থাকল ক্যাফেটোরিয়ার শিমুল ও আরশাদ। গাড়ি চালাচ্ছেন হাসমত ভাই।

আমাদের যাত্রা শুরু হলো। বাসের ভিতরে সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠল। স্যাররাও বাদ গেলেন না। যোগ দিলেন আমাদের সঙ্গে। তবে আমি, হাবিব, শাকিল, অসীম মেহেদীসহ কয়েকজন সবার সঙ্গে শ্রোতে গা ভাসাতে পারলাম না। কারণ টু্যরটা কোনো প্রকার বিতর্ক ছাড়া সম্পন্ন করা ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। গত দুই বছরে একত্রিতভাবে এটাই ছিল আমাদের ব্যাচের প্রথম টু্যর। ৮টার দিকে বাসের মধ্যে সকালের নাশতা দিয়ে দেয়া হলো। বগুড়ায় থেমে আমরা দই নিলাম। এরপর জয়পুর হাট জেলা হয়ে ঢুকলাম। কিছু দূর রাস্তা যেতেই প্রচন্ড রকমের ভাঙ্গা রাস্তা মিলল। এতে আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় ২ ঘণ্টা বেশি সময় লাগল। পাহাড়পুর গিয়ে পৌঁছলাম দুপুর ১টায়। এরপর তড়িঘড়ি করে গাড়ি পার্কিং, প্রবেশের জন্য টিকেট করা, রান্নার ব্যবস্থা করাসহ সব প্রস্তুতি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করলাম আমরা।

এখন সবার কাঙ্ক্ষিত সময়। যে যার যার মতো ফ্রেশ হয়ে ঘোরাফেরায় ব্যস্ত হয়ে গেল। কাজে আটকা পড়লাম আমরা আয়োজক কয়জন। এদিকে রান্না থেকে শুরু করে সব কাজের প্রস্তুতি শেষ করে আমরা সবার সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা পর যোগ দিলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্যাররা অন্যান্য সবাইকে নিয়ে স্পটটি ঘুরে দেখছেন। ক্যামেরার দায়িত্বে ছিল আহসান নাইম। সবার খুশি মতো ছবি তুলে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছে সে। সবাই ছড়িয়ে পড়ল। পুরো বৌদ্ধবিহারজুড়ে ইবির লোগো লাগানো সাদা টি-শার্টে ভরপুর হয়ে গেল। আমরা সংখ্যায় কম হলেও গ্রম্নপ আকারে ঘোরায় দল বেশি ভারি লাগছিল। পাহাড়পুর মহাবিহার নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত। এর প্রকৃত নাম সোমপুর (চাঁদের পাহাড়), মহাবিহার (বিশালাকার বিহার স্থাপত্য)। রাজা ধর্মপালের নির্মাতা।

সবাই শিখড়ের সন্ধানে মগ্ন হয়ে গেল। কেউ স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রিয় বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে ছবি তুলছে কেউবা খুঁটে খুঁটে দেখছে সব কিছু। আর আমরা কয়েকজন দেখছি সবাইকে। বিভিন্ন ভাঁজে দাঁড়িয়ে, বসে, লাফ দিয়ে যে যার যার মতো ছবি তোলায় ব্যস্ত। সময় ঘনিয়ে আসছে। আমার শুরুতেই ইচ্ছা ছিল একটা গ্রম্নপ ছবি তোলার। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সবাইকে একত্রিক করতে বেশ বেগ পেত হলো আমাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চলেছে। তিনটা বেজে গেল। সবাই ক্ষুধায় কাতর। এদিকে খুব কম সময়ের মধ্যে খাবার তৈরি করে দিল শিমুল আর আরশাদ। আমরা সাড়ে ৩টার দিকে খেতে বসলাম। প্রথমে প্রায় ৪০ জনকে খাইয়ে আমরা ১০-১২ জন পরে খেতে বসলাম। খাওয়াটাই তড়িঘড়ি করে খেলাম। কারণ আমাদের এখনো মহাস্থান গড় যাওয়া বাকি। স্যাররা বললেন সেখানে না গিয়ে পাহাড়পুরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে ফিরতে। কিন্তু আমিসহ কয়েকজন এলে বিপক্ষে মত দিলাম। স্যাররাও আর জোর করলেন না। আবার সব কিছু বাসে উঠিয়ে সাড়ে চারটার দিকে রওনা করলাম মহাস্থান গড়ের উদ্দেশ্যে। কিন্তু বগুড়া ঢোকার আগেই সন্ধ্যা নেমে এলো। তাই আর কেউ যেতে রাজি হলো না। এর মধ্যে বক্সটা হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেল। ভ্রমণটা কেমন যেন আর জমছে না। অনেকেই বসে বসে ঝিমোচ্ছে। আমরা কয়েকজন হঠাৎ গান শুরু করলাম। এভাবেই গান গাইতে গাইতে প্রায় রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে ঢুকলাম আমরা। এসে ক্যাফেটোরিয়ায় সবাই রাতের খাবার খেয়ে নিল। এরপর একটি আনন্দঘন দিনের স্মৃতি নিয়ে রাত্রী যাপনে গেলাম সবাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<48803 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1