শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

অমর একুশে ভাস্কর্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালোলাগা থেকে দেখতে দেখতেই তাদের সংগ্রামের ইতিহাসকে জানে। জানে এককালে ভাষার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবন দিতে হয়েছিল। অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন, ইতিহাসনির্ভর এমন স্থাপনা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা জরুরি।
ইমরান নূর
  ১১ মে ২০১৯, ০০:০০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অমর একুশে ভাস্কর্য

একুশ মানে ভাষা, একুশ মানেই মতু্য, মায়ের কোলে সন্তানের লাশ। একুশের কথা চিন্তা করলে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে নিষেধের ১৪৪ ধারা। আবার একুশ মানে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে এক ঝাঁক তরুণদের ক্ষিপ্র স্স্নোগানে বুলেটের তাজা গুলি খাওয়া। যারা ক্ষুদিরামের মতো জীবন দিয়েছিল প্রাণ খুলে মায়ের ভাষায় একটু কথা বলার জন্য। ৫২-র একুশে ফেব্রম্নয়ারির সেই ভাষা আন্দোলনকে তরুণ প্রজন্মের কাছে চির অমলিন করে রাখার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয় অমর একুশে 'ভাস্কর্য। যা তিনটি স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। মুষ্টিবদ্ধ হাতে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, অনেকগুলো মৃতু্য আর সন্তান হারা মায়ের কাতর আকুলতা। 'অমর একুশে' আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাঙালি, আমরা বীরের জাতি এবং বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষা আমাদের প্রাপ্তি নয়, আমাদের অর্জন। বহু রক্ত, রক্তাক্ত লাশ, আর সন্তান হারা মায়ের হৃদয়ের রক্তক্ষয়ী আর্তচিৎকার। যেন রক্তছোঁয়া মিষ্টি একটি শব্দ 'মাতৃভাষা'। এর সঙ্গে মাতৃভূমি শব্দটির যথেষ্ট মিল থাকায় পরবর্তী আন্দোলনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল বলেই আমরা পেয়েছিলাম আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। অমর একুশে'র নিচে দাঁড়িয়ে থাকলে আমাদের ৫২-র সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, গায়ে সামান্য কাঁপন ধরায়, শানিত করে আমাদের চেতনাকে। মনে হয়, আমরা ভাষাসৈনিকদেরই একটি অংশ। এই ভাস্কর্য যেন প্রতিবাদের এক বিমূর্ত প্রতীক। ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারদের রক্তের আলিঙ্গন। এর কাছে এলে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে ভয়ে কুঁকড়ে থাকা মানুষটিও। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতীকী এই মূর্তিটাকেই বেছে নেয় সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাই মৌন মিছিল, প্রতিবাদ সভা, বিচারের দাবিসহ সকল প্রকার চাওয়া পাওয়া এর পাদদেশ থেকেই শুরু হয়। ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয় চুনাপাথর, সিমেন্ট, আইড, মডেলিং ক্লে, আর বালি দিয়ে। নির্মাণ শিল্পী জাহানারা পারভীন তিল তিল পরিশ্রম আর বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরিয়ে গড়ে তোলেন ৩৪ ফুট উচ্চতার এই নান্দনিক গঠন। ১৯৯১ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। ভাস্কর্যটি দেখতে চাইলে যেতে হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট (ডেইরি গেট) থেকে একটু ভেতরে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার মাঝে। নান্দনিক স্থাপত্যের বেজমেন্টের ফুলের বাগান ভালোলাগা আরও একটু বৃদ্ধি করবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাই ভালোলাগা থেকে দেখতে দেখতেই তাদের সংগ্রামের ইতিহাসকে জানে। জানে এককালে ভাষার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবন দিতে হয়েছিল। অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন, ইতিহাসনির্ভর এমন স্থাপনা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা জরুরি। যাতে পড়ন্ত বিকেলের লাল আলোয় হাঁটতে হাঁটতে কিংবা গল্পের ছলে আমাদের অতীত ইতিহাসকে জানতে পারা যায়, শিখতে পারা যায় এবং চেতনাকে ধারণ করা যায় হৃদয়ের ক্ষুদ্র একটি কোণে। যেখান থেকে শুধু বাংলাদেশের নামই বের হবে, যার আছে রক্তাক্ত ইতিহাস আর আমি সেই ইতিহাসের অংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<48804 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1