বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ই স লা মী বি শ্ব বি দ্যা ল য়

সমুদ্রের বিশালতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য

তোফাজ্জল এইচ সুজন
  ০৮ জুন ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জুন ২০১৯, ১১:১০
কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছি

খুব ভোরে এখন আর ঘুম থেকে ওঠা হয় না। সূর্যমামার উঁকিগুলো যেন প্রতিনিয়ত খুব মিস করি। এবার সূর্যমামাকে দেখার চেষ্টায়। তবে একা নয়। আছি আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের টুু্যরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সবাই। সবার ইচ্ছেতেই ঠিক হলো নয়নাভিরাম সূর্য দেখার অলৌকিক স্থান সাগরকন্যা কুয়াকাটা যাওয়ার। যা ভাবনা তাই, ঠিক হয়ে গেল এক বুধবার। অধির আগ্রহে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাত্রা শুরু করলাম। ভ্রমণটাকে প্রাণবন্ত করতে সঙ্গে ছিলেন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাহবুবুল আরফীন, বিভাগের প্রভাষক রফিকুল ইসলাম রাকিব, শরিফুল ইসলাম জুয়েল এবং জেসমিন আক্তার। যাত্রা পথে বাসে সবার হৈ-হুলেস্নাড় আর গানের তালে তালে নাচ করতে করতে রাতের শেষাংশে এসে গেলাম। ক্লান্ত শরীরে কখন যে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ ব্রেক কষার শব্দ কানে আসতেই সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে পড়ল, উঠে দেখি কুয়াকাটার প্রায় কাছাকাছি এক স্টেশন। ক্ষুদার তাড়নায় সবাই বাস থেকে নেমে নাশতা শেষ করে আবার গাড়িতে। সাউন্ড বক্সের তালে নাচতে নাচতে পৌঁছে গেলাম স্বপ্নের সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। বাস থেকে নেমেই যেন মনে হলো সমুদ্রের বিশালতায় প্রকৃতির সৌন্দর্যকে যেন ঘনীভূত করেছে এখানে। আগে থেকে ঠিক করা হোটেলে সবাই ঘণ্টাখানেক বিশ্রামের পর আর দেরি না করেই বিচে নেমে পরলাম। আকাশের বিশালতায় মনটার পরিধি যেন মনের অজানতেই বেড়ে গেছে। কিন্তু পানিতে নামা বারণ।

কেননা পরিকল্পনা অনুযায়ী শুরু হবে বিভিন্ন ধরনের খেলা। রাফি, সেতু, ইমন, সালমা খেলাগুলো সুন্দরভাবে পরিচালনা করল। কিন্তু ফুটবল খেলায় চেয়ারম্যান স্যারের নয়াকৌশলে রফিক ও জুয়েল স্যারকে হারিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন। এখন এই টুু্যরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশ হিসেবে 'সেভ ন্যাচার' স্স্নোগানকে ধারণ করে শুরু হলো বিচে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান। অভিযান শেষে মনে হচ্ছিল সূর্যের আভা পরিচ্ছন্ন বিচের ওপর পড়ে ঝিকমিক করে চোখে এসে পড়ছে। বহু প্রতীক্ষার শেষে সমুদ্র চুম্বকের বিপরীত মেরুর টানে তার কাছে আমরা সবাই গেলাম। সমুদ্র স্নানে গা ভাসিয়ে প্রকৃতির পরশতায় মিশে গেলাম। তখন আবার অনেকেই থেমে নেই ছবি তুলতে। প্রায় সবাইকেই খুব ব্যস্ত দেখা যাচ্ছিল তার প্রিয় স্যার, প্রিয় বন্ধুটার সঙ্গে ছবি নিতে।

ইতোমধ্যেই রান্না-বান্না শেষ হয়ে গেছে। দুপুর ২টার মধ্যে খেতে বসলাম। সাকিব, মিরাজ, অরনা, নয়নসহ আরও অনেককেই খাবার পরিবেশন করতে দেখা যায়। সমুদ্রের পাশে গগন তলে সামুদ্রিক মাছের মধ্যাহ্নভোজ যেন প্রকৃতির কোলে প্রাকৃতিক খাবার। ভ্রমণবিলাসী মানুষগুলো বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে আবার ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। দেখা কেরানীপাড়ায় সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা ছোট্ট পালতোলা জাহাজ আমাদের প্রাচীনকালে নিয়ে গেল। ধারণা করতে বেশি সময় লাগল না প্রাচীনকালের মানুষের কারুকার্য কতটা নিখুঁত ছিল। এরপর শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের প্রবেশ করলাম। ফটকের পাশে প্রাচীন দুটি কুয়া। ভিতরে ৩৭ মণ ওজনের ধ্যানমগ্ন গৌতম বুদ্ধের মূর্তি দেখে মনে হলো থাইল্যান্ডের কোনো এক মন্দিরে আছি আমরা। কিছুক্ষণ ঘুরে দেখার পর কেনা-কাটার সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল সবাইকে। আর তখন সবাই তার প্রিয় মানুষ, পরিবারের জন্য বিভিন্ন জিনিস কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পরে সন্ধ্যা ৭টায় আবার হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই রাত ৮টায় সবার অংশগ্রহণে শুরু হলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আদিল ও ইতির সঞ্চালনায় রকমারি সব প্রতিভা দেখছিলাম চাঁদনীর আলোতে বসে। যেখানে রাফির মুখে একতারা বাজানো, চঞ্চলের নাচ, নূরের দম ফাটানো জোকস, মিতানুরের কবিতা, অমিয়ার হৃদয়কাড়া গান, মাহিও তার দলের পরিবেশনায় নাচ, জেসমিন ম্যাম ও তার জীবনসঙ্গীর যৌথ প্রযোজনার গানে কিছুসময়ের জন্য সবাই যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠান শেষে খাওয়া শেষ করে সবাই যেন আবার আড্ডায় ফেটে পড়লাম।

যখন নিস্তব্ধ রাত ঘনিয়ে এলো আমরা সবাই আবার সমুদ্রের টানে বিচে গিয়ে খালি পায়ে হাঁটছিলাম। তখন সাগরকন্যা যেন পরিবারের মতো আপন করে নিল আমাদের। আর ছোট্ট ছোট্ট ঢেউগুলো পা থেকে বালি সরিয়ে নিচ্ছিল। যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। আর এদিকে জুয়েল স্যার ঝিনুক দিয়ে বালির ওপর বিশাল করে বিভাগের নামটি (টিএইচএম) লিখল। তাতেই সোহেল ভাইয়ের ক্যামেরায় ফটো তুলতে সবার উপচেপড়া ভিড়।

পরে রাত ১২টায় সারা দিনের ক্লান্তি অবসানে হোটেলে গেলাম। কিন্তু তা যেন আর হয়ে উঠল না। কেননা রাতে একসঙ্গে বন্ধুদের পেয়ে কত না কথাবার্তা শুরু হলো। আর বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমিটাও যেন থেমে নেই।

পরদিন সকালে সূয্যি মামা জাগার আগেই যেন তাকে দেখার জন্য আমরা জেগে উঠলাম। উঠেই সবাই চলে গেলাম বিচে। গিয়ে দেখি অনেক মানুষের সমাগম। যারা আকাশে লালচে কিছু দেখার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। সবার আগ্রহ দেখে মনে হলো ৭৬ বছর পর তারা ধূমকেতু দেখবে। নিত্যদিনের এই সূর্যের আজ বিশেষত্ব কি? সে বিশেষত্বটা কিন্তু সাগরকন্যার। যেখানে সবার আগে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। বহু প্রতীক্ষিত সকালের সূর্য উঁকি দিতে বিড়ম্বনা করল। অবশেষে প্রায় ৮টা বাজতেই লাজুক সূর্য তার ঘোমটা খুলে উঁকি দিল। সেখান থেকে আমরা ভ্যানে করে ঝাউবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বন্ধুর পথে প্রকৃতির বুক চিরে চলছে ভ্যান। সঙ্গে 'এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো' গানে গানে দোল খাচ্ছে সবাই। বেশিক্ষণ থাকার সুযোগ নেই কারণ আজ কুয়াকাটা ছাড়তে হবে। হোটেলে ফিরেই রীতিমতো ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিলাম। হোটেলের বাইরে খাবারের বন্দোবস্ত হয়ে গেল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে গাড়িতে উঠতে উঠতে দুপুর ১২টা বেজে গেল। আবার হৈ-হুলেস্নাড়ে মেতেছে সবাই।

বাসের মধ্যেই কিছুক্ষণ পরর্ যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হলো। একের পর এক বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করছে স্যার, সঙ্গে সঙ্গে একেক করে চিৎকার করতে লাগলো আমি আমি করে। শেষমেশ জল্পনা-কল্পনা ছাড়িয়ে নূর মোহাম্মদ প্রথম হয়ে গেল। এভাবেই বাসে নাচ-গানের মধ্যদিয়ে রাত ১২টায় ক্যাম্পাসে পৌঁছালাম। আর ক্যাম্পাসে পা রাখতেই সবাইকে ছেড়ে নিজ রুমে যেতে ইচ্ছে করছিল না। কেননা মনে হচ্ছিল অবসান হয়ে যাচ্ছে সব আনন্দের দ্বার। তবে দুই দিনের এই ভ্রমণ স্মৃতির পাতায় অম্স্নান হয়ে থাকবে। আর মনের গুপ্ত কুঠিরে সুপ্ত হয়ে রবে সারাটি জীবন। এদিকে হাঁটার সময় মনে পড়ছিল সেই কবিতাটি- ভ্রমণের ছোড়া পেয়ে ধন্য হলো জীবন, সুখে থেকো সব বন্ধুরা, সফল হলো ভ্রমণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<52628 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1