শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জমিদার বাড়িতে একদিন

আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই পাশে বিশাল বিশাল গাছের সারির অপরূপ সৌন্দর্য বিমোহিত করছিল। কিছুদূর যেতেই আমরা সম্পূর্ণ এক গ্রাম্য আবহ পেলাম, যার নৈসর্গিক সৌন্দর্য ছিল কল্পনাতীত। আশপাশের ফসলি মাঠ, কৃষকের ক্লান্তিহীন পরিশ্রম, বধূদের গৃহস্থালি কাজ আর ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে ফেরার দৃশ্য যেন পুরো বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিনিধিত্ব করছিল...
অনিক আহমেদ
  ২২ জুন ২০১৯, ০০:০০

সেদিন ছিল সেমিস্টার ফাইনালের শেষ পরীক্ষা। দীর্ঘ একমাসের পরীক্ষার ক্লান্তিতে অবসাদগ্রস্ত মনের মধ্যে সতেজতা ফিরিয়ে আনতে একটা টু্যর দরকার ছিল। তাই পরীক্ষা শেষ করে বাসায় ফেরার পথে কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিই কোথাও ঘুরতে যাব। তড়িৎ সিদ্ধান্তে স্থান নির্ধারণ করলাম মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। যেই ভাবা সেই কাজ, তড়িঘড়ি করে বন্ধুর প্রাইভেটকার যোগে আমরা সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন বের হয়ে পড়লাম জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে। সাভার থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কালামপুর বাইপাস দিয়ে মির্জাপুর রোডে এগিয়ে চললাম। আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই পাশে বিশাল বিশাল গাছের সারির অপরূপ সৌন্দর্য বিমোহিত করছিল। কিছুদূর যেতেই আমরা সম্পূর্ণ এক গ্রাম্য আবহ পেলাম, যার নৈসর্গিক সৌন্দর্য ছিল কল্পনাতীত। আশপাশের ফসলি মাঠ, কৃষকের ক্লান্তিহীন পরিশ্রম, বধূদের গৃহস্থালি কাজ আর ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে ফেরার দৃশ্য যেন পুরো বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিনিধিত্ব করছিল। দুই নয়ন ভরে এসব দৃশ্য অবলোকন করতে করতে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম জমিদার বাড়িতে।

গাড়ি থেকে নামতেই আমাদের কৌতুহলী দৃষ্টি পড়ল জমিদার বাড়ির বিশাল বিশাল ভবনের প্রতি। প্রতিটা ভবন যেন স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে থেকে তার অস্তিত্ব এবং ইতিহাসকে জানান দিচ্ছিল। গেট থেকে জনপ্রতি ২০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে বিশাল এই জমিদার বাড়ির ভেতরে পদার্পণ করলাম আমরা।

ঊনিশ শতকের এক অপূর্ব নিদর্শন বালিয়াটি জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা গোবিন্দ রাম সাহা। পুরো জমিদার বাড়িটি ৫.৮৮ একর জমির ওপর বিস্তৃত। ভেতরে দায়িত্বরত একজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, গোবিন্দ রাম সাহা ছিলেন তখনকার সময়ে একজন বড় মাপের লবণ ব্যবসায়ী। তার চার পুত্র দধী রাম, পন্ডিত রাম, আনন্দ রাম ও গোলাপ রামই সম্ভবত নির্মাণ করেন বালিয়াটি প্রাসাদ। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা পুরো জমিদার বাড়িতে রয়েছে বিভিন্ন পরিমাপ ও আকৃতির দুই শতাধিক কোঠা। উত্তর দিকে রয়েছে শান বাঁধানো ছয়ঘাট বিশিষ্ট বিশাল একটি পুকুর। এ ছাড়া ভেতরে রয়েছে সাতটি খন্ডে বিভক্ত বিভিন্ন স্থাপনা, স্নানাগার, প্রক্ষালন কক্ষ প্রভৃতি। স্থাপনাগুলোর আকর্ষণীয় দিক হলো সারিবদ্ধ বিশাল আকৃতির করিনথিয়াম থাম, লোহার বিম, ঢালাই লোহার পেঁচানো সিঁড়ি, জানালায় রঙিন কাঁচ, কক্ষের অভ্যন্তরে বিশাল আকৃতির বেলজিয়াম আয়না, কারুকার্যখচিত দেয়াল ও মেঝে, ঝাড়বাতি ইত্যাদি। প্রাসাদটি বর্তমানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক ১৯৬৮ সালের এন্টিকুইটি অ্যাক্টের ১৪নং ধারার আওতায় সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত হচ্ছে।

প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ছয় বন্ধু মিলে জমিদার বাড়ির সব স্থান ঘুরে ঘুরে দেখলাম এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জানলাম। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে বিশেষ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করলাম। রওনা করার আগে সবারই একটা ইচ্ছা ছিল জমিদার বাড়ির বিশাল পুকুরে অবগাহনের মাধ্যমে মনের খোরাক জোগাবে। কিন্তু বিকালের হালকা রোদকে বিদায় করে যখন গোধূলি লগ্ন হাজির হলো তখন আমাদের আর কিছু করার ছিল না। মনের বহুল আকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছাকে অপূর্ণ রেখেই রওনা করতে হলো গন্তব্যের পথে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<54657 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1