বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক ব্যাগ রক্ত, সে তো অমূল্য রতন

অনিক আহমেদ
  ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

এক ব্যাগ রক্ত, সেতো অমূল্য রতন; বাঁচাতে সহযোগিতা করে একটি জীবন। রক্তের বিকল্প কোনো কিছু নাই, তাই এসো রক্তদানে এগিয়ে যাই।

প্রচারে নয় কাজে বিশ্বাসী মো. জাভেদ নাছিম বাংলাদেশের একজন সর্বোচ্চ 'ও' নেগেটিভ রক্তদাতা। এ পর্যন্ত তিনি ১৬৯ বার রক্তদান করেছেন, যার মধ্যে ৪৮ বার (৩০-১৫০ মিলি) শিশুদের জন্য এবং ১১৯ বার (৪৫০ মিলি) হোল বস্নাড এবং ২ বার পস্নাটিলেট দিয়েছেন। মানুষকে রক্ত দিয়ে মনের শান্তি খুঁজে পান তিনি। তার রক্তেই আছে মানুষের উপকারের নেশা।

কুমিলস্না জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাংগরা থানার পীর কাশিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. জাভেদ নাছিম। আঠার বছর বয়সে ১৯৮৬ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে তার রক্তদানের এই নেশা শুরু হয়। তখনকার সময়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে 'মুমূর্ষু' রোগীর জন্য জরুরি রক্তের প্রয়োজন- এমন আবেদন জাভেদ নাছিমের মনে রক্তদানের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

রক্তের গ্রম্নপ অজানা, প্রথম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রেড ক্রিসেন্টের একটি স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে রক্তদান করেন, যখন জানতে পারলেন তার রক্তের গ্রম্নপ 'ও' নেগেটিভ তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। সদ্য রক্তদাতা হিসেবে সমাজে 'ও' নেগেটিভ রক্তের গুরুত্ব ঠিক তখনই বুঝতে পেরেছিলেন। মরণোত্তর চক্ষুদান নিবন্ধন করেছেন ১৯৮৭ সালে। তিনি বলেন, জীবনে কিছু করতে না পারলে মানুষ হয়ে জন্মানো কেন! আর সব কিছু করতে হলে টাকা থাকতে হবে, তাও নয়। ইচ্ছা থাকলেই মানুষের কল্যাণে কাজ করা যায়।

আইজিপি পদকসহ জেলা পুলিশ, কুমিলস্না থেকে সম্মাননা স্মারক, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে সম্মাননা পেয়েছেন মো. জাভেদ নাছিম।

অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জাভেদ নাছিম বিভিন্ন কাজে ১৭টি দেশে ঘুরেছেন, চাকরির সুবাদে থেকেছেন সিঙ্গাপুরে। এ সময় সিঙ্গাপুরে তিনবার, ভিয়েতনামে দুবারসহ দেশের বাইরে সাতবার রক্তদান করেছেন।

রক্ত দেয়ার কথা বলতেই মেলে ধরলেন কথার ঝাঁপি,

'নিজে রক্ত দিয়ে যাচ্ছি গত ৩৩ বছর ধরে। শিশুদের যখন রক্ত দিয়েছি তখন আমাকে ৪ মাস অপেক্ষা করতে হয়নি, কারণ তাদের পরিমাণে ৩০ মিলি থেকে ১৫০ মিলি বস্নাড দিয়েছি। ২৫ নভেম্বর ১৯৯৮ থেকে শিশুদের রক্ত দিই। ওইদিন আমার ছেলেটা মারা যায়, হাসপাতালেই ছেলের লাশের সামনেই বস্নাড দিই ৬০ মিলি। সন্ধানীতেই বেশি বস্নাড দিই, সিলেট মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, ঢাকার রেড ক্রিসেন্ট, কোয়ান্টাম বস্নাড ব্যাংক, পুলিশ বস্নাড ব্যাংকসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে রক্ত দিয়েছি।

তিনি বলেন, রক্ত দিলে মানুষের উপকার হয়। নতুন রক্ত তৈরি হয় শরীরে। আর একজন মানুষের যখন রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন তাকে রক্ত দিলে যে মানসিক তৃপ্তি, পৃথিবীর অন্যকিছুর বিনিময়ে সেই তৃপ্তি পাওয়া যাবে না। আমার রক্তে একজন মানুষ বেঁচে উঠছেন এর চেয়ে আনন্দদায়ক আর কী হতে পারে জীবনে! আমার তো মানুষের জন্য অনেক কিছু করার সামর্থ্য নেই; যেটুকু আছে, সেটাকে যদি কাজে না লাগাই তাহলে আর মানুষ হয়ে জন্ম নেয়া কেন! মানুষ তো মানুষের জন্যই।

স্বেচ্ছায় রক্তদানের জীবনে কোনো আনন্দময় বা দুঃখের ঘটনার কথা মনে করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে মো. জাভেদ নাছিম বলেন, রক্তদানের সব ঘটনাই আনন্দের তবে ঢাকা সিএমএইচে একজন রোগীকে পস্নাটিলেট দেয়ার পরদিন রোগীটি মারা যায়। ওই দিন আমি ছিলাম গাজীপুরে, গাজীপুর থেকে ঢাকায় আসতে রাত হয়ে যায়। ঢাকায় এসে সিএমএইচে যাই রাত ১২টায়, গিয়ে শুনি রাত ১০টার পর বস্নাড নেয়া হয় না। ওই রাত হাসপাতালে কাটিয়ে সকালে পস্নাটিলেট দিয়ে আসি, পরে লোকটা মারা যায়। আরেকটি ঘটনা ওই দিন ঢাকা থেকে সিলেট রওনা হই বস্নাড দিতে, পথে জানতে পারি বস্নাডটা লাগবে না।

কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে কি জানতে চাইলে বলেন, থ্যালাসিমিয়া, আগুনে পোড়া ও গরিব রোগীদের জন্য মন কাঁদে। আমার খুব ইচ্ছা একটি ট্রাস্টি বোর্ড করে নিজে একটি বস্নাড ব্যাংক করা যেখানে বস্নাড নিতে তাদের কোনো প্রকার খরচ হবে না। সমাজের বিত্তবানরা এই মহতী কাজে এগিয়ে এলে সম্ভব হবে। আমি যতদিন রক্ত দিতে পারব রক্তদান করতে চাই।

নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি দুদু হিসেবে পরিচিত। নতুন প্রজন্ম তাকে দাদু বলে সম্বোধন করে। এ প্রজন্মের জন্য কী পরামর্শ দেবেন জানতে চাইলে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা মো. জাভেদ নাছিম বলেন, মানুষের জন্য কাজ করার মতো মহৎ কিছু পৃথিবীতে আর নেই! তরুণ প্রজন্মকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ হতে হবে আর যে কোনো ধরনের খারাপ নেশা থেকে দূরে থাকতে হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সামাজিক ও মানবিক কাজগুলো করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<58917 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1