শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাসে পুরনো বই

আরাফাত শাহীন
  ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথের সামনে পুরনো বই দেখছেন শিক্ষার্থীরা

ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নানা ধরনের সৃজনশীল বই পাঠের অভ্যাসটি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে লালন করে এসেছি। যখন বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতাম, তখন বড়ভাইদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে পড়তাম। পড়া শেষে আবার বইটি ফেরত দিয়ে আসতে হতো। মাঝেমধ্যে দু'একটি বই যে কিনে পড়তাম না তা নয়- প্রতিমাসেই খরচের টাকা থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে পছন্দের বইটি ঠিকই কিনে ফেলতাম। পঠিত বইটি নিজের কাছে রাখতে না পারলে আর সার্থকতা কোথায়!

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার পর বই পড়ার ক্ষুধা আগের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেজন্য প্রথমদিকে এসেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিলাম। সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে বই নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে। কিন্তু পঠিত বইটি পরের সপ্তাহে আবার ফেরত দিয়ে দিতে হয়। বইটি নিজের কাছে রাখার কোনো উপায় যে নেই! তা ছাড়া সপ্তাহে একটি বই পড়ে কেমন যেন পোষাতো না। আরও বেশি পড়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়তাম।

বাড়িতে থাকাকালে প্রতি মাসেই কিছু বই কেনা হতো। এখানে এসেও বই কেনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকি। কিন্তু বাড়িতে থাকতে যে কাজটি অনেক সহজে করতে পারতাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সেই কাজটিই বড় কঠিন হয়ে দাঁড়াল। এখানে আমাকে বাড়ি থেকে যে টাকা পাঠানো হয়, মাস শেষে তার থেকে খুব বেশি টাকা জমানো সম্ভব হয় না। তারপরও কিছু টাকা অবশ্যই জমিয়ে রাখতে সক্ষম হই। এই টাকা দিয়ে বাজার থেকে বেশকিছু বই কিনেছিও। কিন্তু কেমন যেন শান্তি পাচ্ছিলাম না। নতুন বইয়ের দাম একটু বেশি কিনা! চিন্তা করলাম, এই টাকা দিয়ে যদি পুরনো বই কিনতে পারি তাহলে অনেক বই কেনা সম্ভব হবে। খুলনায় থাকতে এভাবে অনেক পুরনো বই আমি কিনেছি। নীলক্ষেতের ফুটপাতগুলোতেও পুরনো বই পাওয়া যায়। কিন্তু রাজশাহীতে আমি পুরনো বই কোথায় পাবো? কে আমাকে পুরনো বইয়ের সন্ধান এনে দেবে?

মনের কষ্টের কথাটি একদিন খুব কাছের একজন বন্ধুর কাছে বললাম। বন্ধু আমার কথা শুনে পুরোপুরি অবাক। আমাকে প্রশ্ন করল, তুই পুরনো বই কোথাও খুঁজে পাচ্ছিস না? বন্ধুর পাল্টা প্রশ্ন শুনে আমি বেশ সংকোচের সঙ্গে বললাম, না তো! তুই কোনো খোঁজ জানিস নাকি? বন্ধু হাসতে হাসতে বলল, আরে গাধা আমাদের ক্যাম্পাসেই তো পুরনো বই কিনতে পাওয়া যায়! বন্ধুর কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করলাম সে আমার সঙ্গে মজা করছে কিনা। ক্যাম্পাসে পুরনো বই বিক্রি হয় অথচ আমার চোখে পড়ল না কেন?

ক্যাম্পাসটা তখনো খুব বেশি চেনা-পরিচিত হয়নি। ৭৫৩ একর জায়গার বিশাল এ ক্যাম্পাসের কোথায় কী হয় তার সবটা জানা মুশকিল। সুতরাং নিজেকে খুব একটা দোষী ভাবার সুযোগ নেই। আর ক্যাম্পাসে তখন আমি নতুন। সব খোঁজ-খবর জানা সম্ভবও নয়। বন্ধুকে নিয়ে পুরনো বইয়ের সন্ধানে তখনই বেরিয়ে পড়লাম। যত তাড়াতাড়ি গিয়ে পৌঁছানো যায় ততই মঙ্গল। আমার আগে এসে যদি কেউ প্রিয় বইগুলোর দখল নিয়ে নেয়! বন্ধু আমাকে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে নিয়ে এলো। সামনে তাকিয়ে দেখি, বেশ বয়স্ক একজন লোক পুরনো বইয়ের বেশ বড়সড় এক ভান্ডার নিয়ে বসে আছেন। ক্রেতার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। আমি এই পথ দিয়ে এর আগে বহুবার যাতায়াত করেছি অথচ বিষয়টা কীভাবে যেন আমার নজর এড়িয়ে গেছে। হয়তো খোঁজার প্রয়োজন মনে করিনি বলে।

হরেক রকমের পুরনো বইয়ের বান্ডিল নিয়ে লোকটি বসে আছেন। ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিও করছেন। চাকরির বই থেকে শুরু করে সাহিত্য, এমনকি ধর্মীয় বইপুস্তকও চাচার ভান্ডারে রয়েছে। আমি তখনই বেশকিছু সাহিত্যের বই বগলদাবা করলাম। এগুলো আমাকে নিতেই হবে। পরে এসে যদি আর না পাই! বইগুলো বেশ সস্তায়ই কিনলাম। নতুন বই কিনতে গেলে যা খরচ হতো তার চেয়ে যদি তিন ভাগের একভাগ দামে পাওয়া যায় তাতে মন্দ কী!

সেদিন থেকে পুরনো বই বিক্রির দোকানে আমার নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়। বইগুলোর ওপর একবার চোখ বুলিয়ে দেখি। যেগুলো পছন্দ হয় তখনই নিয়ে নিই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরনো বই বিক্রির দোকান আরও কয়েকটি আছে। পরে ধীরে ধীরে সেগুলোও খুঁজে বের করেছি। রাজশাহী শহরেও বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। মাঝেমধ্যেই আমি সেখানে গিয়ে ঢুঁ মেরে আসি। পুরনো বই দামাদামি করে কেনার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে। সেই আনন্দটা উপভোগ করতে আমার বেশ লাগে। ক্যাম্পাস থেকে আপনারাও অতি সহজে পুরনো বই সংগ্রহ করতে পারবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<58919 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1