বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ের দেশ স্বর্ণমন্দিরে একদিন

নতুনধারা
  ১০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

ইয়াসিন

স্টাডি টু্যর, পিকনিক বা আনন্দভ্রমণ সবই একসুতোয় গাঁথা। বছরান্তে বড়-ছোট এক হয়ে এদিক-সেদিক বেড়াতে যাওয়াটা এখন কমন ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। শত ব্যস্ততা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, ল্যাবের প্যারা, অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষা আর ভাইভার চাপে যখন পড়াশোনাও তিক্ততার রূপ ধারণ করে। ফ্রেশভিলাষী হয়ে দেখা দেয় আনন্দভ্রমণ। তাই উঁচু-নিচু আর আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে চলে এলাম বান্দরবান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র-জুনিয়র প্রায় ৫০ জন তো হবেই। সবচেয়ে মজার ব্যাপারটি ছিল সবাই চাঁদপুরের চবিয়ান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভোর ৬টায় রওনা হয়ে প্রথমে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট হয়ে সেখান থেকে বান্দরবান শহরে পৌঁছে গিয়েছিলাম ১০টার মধ্যেই। হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে দুপুর ২টা থেকে নেমে পড়েছিলাম পাহাড় আর উঁচু-নিচু রাস্তা ভ্রমণে। প্রথম গন্তব্য স্বর্ণমন্দির। সমতল থেকে ৩৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উঠে যাওয়া এদিক-সেদিক মোড় নেয়া পথ চান্দের গাড়ি দিয়ে পাড়ি দিয়ে দেখা মিলেছে স্বর্ণমন্দির বা মহাসুখ প্রার্থনাপূরক বুদ্ধ ধাতু জাদির। 'বুদ্ধ ধাতু জাদি' যা স্বর্ণমন্দির বা মড়ষফবহ :বসঢ়ষব নামে সুপরিচিত। জাদি বলতে কোনো পবিত্র ব্যক্তির ব্যবহৃত বস্তুকে বোঝায়। সোনালি আকার ধারণ করায় এর নাম দেয়া হয়েছে স্বর্ণমন্দির। এই জাদির রচনাশৈলী ও নির্মাণের কর্মকৌশলতা দারুণ দৃষ্টিনন্দনকারী। প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত ও কারুকার্য খচিত মন্দির দেখতে হাজার হাজার পর্যটক প্রতিদিন ছুটে আসে এখানে। ৫০ টাকায় টিকেট কেটে সোজা চলে গেলাম ভিতরে। অমায়িক গোলাকার সোনালি আর মেরুন রঙে সুসজ্জিত একটি উপাসানালয়। গোলাকার এই জাদির চারপাশে শোভা পাচ্ছে দ্বিতীয় থেকে শতের শতকের ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রার ২৮টি বৌদ্ধমূর্তির। যার মধ্যে রয়েছে ১২টি শেঠ পাথরের মূর্তি।

জাদি তৈরি হওয়ার পর থেকে অষ্টধাতুর ঘণ্টা দিয়ে নিয়মিত প্রার্থনার ক্ষণ ঘোষণা করা হয় এখানে। জানা যায়, ভেন ইউ পান্নইয়া জোতা মাহাথেরো এটি নির্মাণ করেন। এই স্বর্ণমন্দিরে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধমূর্তি এবং সর্বাপেক্ষা হীনযান বৌদ্ধ মন্দিরও। বান্দরবানে বসবাসরত মারমা জাতিগোষ্ঠী হীনযান বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। ২০০০ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশীয় ধাঁচে বার্মার স্থাপত্যবিদদের তত্ত্বাবধানে মন্দিরটি নির্মিত হয়। এটি স্থানীয়দের কাছে কিয়াং নামে পরিচিত। বাংলাদেশের বান্দরবান শহরের বালাঘাট এলাকায় এটির অবস্থান। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী?দের এই তীর্থ স্থানটি নির্মাণ করা হয়। স্থাপনা করার ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়েছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীনের রচনাশৈলীর অনুকরণ। বৌদ্ধ অনুসারীরা প্রতিদিনই এখানে আসেন প্রার্থনা করতে। আর ভ্রমণপিপাসুরা আসেন এই জাদির কারুকার্য উপভোগ করতে। এর ভিতরে রয়েছে মিয়ানমার থেকে উপহার পাওয়া অষ্টধাতুর ৪টি আকর্ষণীয় বৌদ্ধমূর্তি। একই সঙ্গে এই পাহাড়ের চূড়ায় মন্দিরের পাশাপাশি একটি লেকও রয়েছে। যার নাম দেবতা পুকুর। এটি সাড়ে ৩০০ ফুট উঁচুতে হলেও সব মৌসুমেই পানি পাওয়া যায়। বৌদ্ধ ভান্তেদের মতে, এটা দেবতাদের পুকুর তাই সব মৌসুমে পানি পাওয়া যায়। এই জাদিটি এখন শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থানই নয় বরং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে। গৌতমবুদ্ধের সমসাময়িককালে নির্মিত বিশ্বের সেরা কয়েকটি বুদ্ধমূর্তির মধ্যে এটি একটি। নজরকাড়া এই প্রার্থনালয়ে ভক্তি, ভালোবাসা আর ভালোলাগার নৈবেদ্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে নিত্য বিলায় প্রশান্তি।

বুদ্ধ জাদি পাই কিয়াং চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান জেলায় অবস্থিত। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত মন্দিরটি বালাঘাট থেকে ৪ কিলোমিটার এবং বান্দরবান শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<61946 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1