শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফার্মাসিস্টদের বিদায়বেলা

দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছি, এখানকার সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যক্তির কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আমাদের আজ অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাজীবনের একটি ধাপ সমাপ্ত করে পরের ধাপে পা রাখার উদ্দেশ্যে বিদায় নিতে হচ্ছে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনে আরও উন্নতি করে দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি'
অনিক আহমেদ
  ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা

দিন চলে যায়, স্মৃতি রয়ে যায় স্মৃতি। অতীত জীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িত নানা ঘটনা নাড়িয়ে দিয়ে যায় বর্তমানকে। যেমনটা ঘটেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ২৮তম শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। ৪ বছর আগে ২০১৫ সালের মে মাসে যখন ছোট্ট এই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিল, তখন তাদের প্রত্যেকের মনে ছিল বিশাল স্বপ্ন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি পড়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও সান্ত্বনা ছিল গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের সুনাম। দেশের সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসির একটা আলাদা মর্যাদা ছিল। সেই মর্যাদাকে পুঁজি করে দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে পড়ালেখার ৪টি বছর। পূরণ হয়েছে ফার্মাসিস্ট হওয়ার স্বপ্ন। সময় হয়েছে বিদায় নেয়ার, সামনে এগিয়ে যাওয়ার।

ফার্মাসিস্টদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিলর্ যাগ ডে। যেখানে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শেষবারের মতো মিলিত হতে যাচ্ছিল। দুদিন আগেই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ঝামেলা শেষ করার মাধ্যমে বিদায় বলেছে ক্যাম্পাস লাইফের সোনালি চারটি বছরকে। আজকের পর আর কখনো এই মুখগুলোকে ক্যাম্পাসে দেখা যাবে না। এখানে কাটানো সময়গুলোতে বন্ধুদের সঙ্গে ভালো-খারাপ মিলিয়ে বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী হয়েছে তারা। এসব ভাবতে ভাবতেই আবেগাপস্নুত হয়ে পড়ছিল বিদায়ী শিক্ষার্থীরা।

র্

যাগ ডের প্রথম পর্বে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিভাগীয় প্রধানসহ অন্য শিক্ষকরা দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। একসময় ক্লাসে এসব শিক্ষকদের লেকচার শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে ওঠা প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে আজ তাদের বক্তব্য যেন বড়ই শ্রম্নতিমধুর লাগছিল। তারা খুব করে চাইছিল, এক সময়ের বিরক্তিময় এসব মুখ থেকে আরও কিছু শ্রম্নতিমধুর বাণী শুনতে। কেননা আজকের পর থেকে চার বছরের পরিচিত এসব মুখগুলোর দেখা আর সচরাচর মিলবে না। তাই তো বিদায় বেলায় প্রতিটি শিক্ষাগুরুর বক্তব্য শুনে নিজেদের অজান্তেই চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল। প্রতিটি শিক্ষার্থী আজ মনের গভীর থেকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে এসব শিক্ষাগুরুর কাছে তাদের সব ভুলত্রম্নটির জন্য ক্ষমার চাহনীতে তাকিয়ে ছিল। উপস্থিতি সব শিক্ষকরাও যেন তাদের চাহনী বুঝতে পেরে আবেগময় হয়ে বড়ই দুষ্টু, বাউন্ডুলে, হরহামেশায় কথার বিপরীতে চলা এসব মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ থেকে দুয়েক ফোঁটা জল বিসর্জন করছিল আর আশীর্বাদ করে বলছিল, তোরা অনেক বড় হ।

ভালো সময় নাকি দ্রম্নত ফুরিয়ে যায়- অলিখিত এই সত্যকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অল্প সময়েই যেন দুপুর গড়িয়ে পড়ল। এবার শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে ক্যাম্পাসে নিজেদের শেষ দিনটাকে উদযাপনে মেতে ওঠে। একে অন্যকে আবির মাখিয়ে দেয়া, বেসুরো কণ্ঠে গলা ফাটিয়ে যার যার মতো গান গাওয়া, উরাধুরা নাচ সবই যেন সবার মনে অন্যরকম এক প্রশান্তির সৃষ্টি করছিল। প্রত্যেকের টি-শার্টে বন্ধুদের মার্কারের কালিতে নানা ধরনের লেখা, আঁকিবুঁকি সবই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছিল। গোধূলিলগ্নে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে বিদায়ী শিক্ষার্থী মো. নাসিম সিদ্দিক রিফাত বলেন, 'আজ আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান যদিও আমি মনে করি এটা বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ মন থেকে চিরতরে কখনোই বিদায় নেয়া সম্ভব হবে না। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছি, এখানকার সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যক্তির কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আমাদের আজ অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাজীবনের একটি ধাপ সমাপ্ত করে পরের ধাপে পা রাখার উদ্দেশ্যে বিদায় নিতে হচ্ছে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনে আরও উন্নতি করে দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি।'

খুব বেশি বড় নয়; কিন্তু ৩৪ একরের ছোট্ট ক্যাম্পাস হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গড়ার মাধ্যম। ক্যাম্পাস যাদের পদচারণায় সর্বদা মুখরিত থাকে, তাদের দলে এসব বিদায়ী শিক্ষার্থীরাও দীর্ঘ সময় ধরে ছিল। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, বাদামতলা, পিঠাঘর, ফুসকা চত্বর, মিডিয়া কর্নার, বকুলতলা, ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ডসহ ক্যাম্পাসের সব স্থানে সর্বদা বিচরণ ছিল তাদের। শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মানুষের সঙ্গেও তাদের ছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। তারাও আজ এসব শিক্ষার্থীর বিদায়ে অশ্রম্নসিক্ত হয়ে পড়ছিল, সঙ্গে যুক্ত ছিল ক্যাম্পাসের প্রতিটা ইট, বালু, পাথরের রাশভারী কান্না। পুরো ক্যাম্পাসের কান্না আকাশ-বাতাসকে যেন তুমুলভাবে আলোড়িত করে তুলছিল। সময় গড়িয়ে আস্তে আস্তে বিকাল নেমে এলো। তখন বিদায় নেয়ার পালা। তবে এসময় শিক্ষার্থীদের একে অন্যের চোখের দিকে যেন তাকানো যাচ্ছিল না। অনেকেই অতি আবেগময় হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিল। সবাই একে অন্যকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে যখন বাড়ির পথে সবাই রওনা হচ্ছিল, পেছন থেকে পুরো ক্যাম্পাস অদ্ভুত এক নীরবতায় স্তব্ধ হয়ে ছিল। আর মন থেকে যেন তাদের আশীর্বাদ করে বলছিল, 'এগিয়ে যাও স্বপ্নের পথে, পূরণ করো নিজের চাওয়া, পিতামাতার চাওয়া সর্বোপরি দেশের চাওয়া।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62537 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1