শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জা হা ঙ্গী র ন গ র বি শ্ব বি দ্যা ল য়

বৃষ্টির ফোঁটায় ছড়িয়ে পড়ুক কবিতা

নতুনধারা
  ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ইমন মাহমুদ

কয়েকদিন ধরেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে কালো মেঘ মাথার ওপর নিয়ে যেতে হচ্ছে ক্লাস করতে। ঝুম বৃষ্টিতে মেঘেরা যখন বিষাদের অর্কেস্ট্রা বাজায়, বইয়ের ভাঁজে মুখ গুজে থাকা নবীন প্রাণগুলো ছন্নছাড়া হয়ে ওঠে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে।

শ্রাবণের অঝোর ধারায় সিক্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সবুজ প্রাঙ্গণ। বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল হাতে বৃষ্টিবিলাস দিয়েই শুরু হয় জাহাঙ্গীরনগরের বর্ষা বন্দনা। টিএসসির বারান্দায় গিটারের টুংটাং শব্দ ঝড় তোলে চায়ের কাপে। কবিতা ছাড়া বর্ষাযাপন কেমন যেন স্বাদহীন লাগে। কবিতার আকুলতা কড়া নাড়ে হৃদয়ের ডাকবাক্সে।

কবিতা শব্দটি উচ্চারণ করলেই আমাদের মন শিহরিত হয়। মনের মাঝে জেগে ওঠে একটি স্নিগ্ধ চিত্রকল্প। আমরা হারিয়ে যেতে শুরু করি আমাদের খামখেয়ালী কল্পনারাজ্যে। আর সেই কবিতা যদি শৈল্পিক মাধুর্যের নির্যাস মিশিয়ে আবৃত্তি করা হয় তবে তা কবিতার আবেদন শ্রোতার কাছে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।

একজন আবৃত্তিশিল্পী নৈপুণ্যময় আবৃত্তির মাধ্যমে শ্রোতাদের শ্রম্নতি- অনুভবে এবং চোখের সামনে কবিতার চিত্রকল্পকে উপস্থাপন করতে পারেন সহজেই। আর সে কারণেই আবৃত্তিকার একজন শিল্পী এবং আবৃত্তি একটি শিল্প। আবৃত্তি শুনতে কার না ভালো লাগে। আর এই আবৃত্তি যদি হয় বর্ষাকে উপজীব্য করে তবে তো কথাই নেই।

বাংলাদেশ পরিচিত ষড়ঋতুর দেশ হিসেবে। ছয়টি ঋতুই সাদরে বরণ করে নেয় বাঙালিরা। এর মধ্যে বাংলার জীবনযাত্রার সঙ্গে বর্ষার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। বর্ষা বাঙালির জীবনকে করেছে পুলকিত, শিহরিত, আবার কখনো বেদনা-বিধুর। বাংলা সাহিত্যের পূর্ণ রস আস্বাদনে বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তাই বর্ষার গান ও কবিতার কোনো জুড়ি নেই। সে কারণে বর্ষা আবিষ্ট হয়ে আছে বাঙালির আরাধনায়। যদি মঞ্চ থেকে একঝাঁক আবৃত্তিশিল্পী বর্ষাকে উপজীব্য করে কবিতা আবৃত্তি করে তখন যে কোনো বাঙালির মন জুড়িয়ে যায়।

সম্প্রতি এমনই একটি মন জুড়ানো আবৃত্তি অনুষ্ঠান 'জ্বালো ঐতিহ্যের আলো' দর্শকদের উপহার দিয়েছিল সংস্কৃতির নগরী হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংগঠন 'ধ্বনি'। 'ধ্বনি' ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবৃত্তি সংগঠন। যাদের স্স্নোগান 'দিগন্তে চলো শব্দ যেথায় সূর্য সত্য'। বছরজুড়ে নানা আয়োজনে ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখেন ধ্বনির সদস্যরা; পাশাপাশি আয়োজন করে থাকেন আবৃত্তি সহায়ক অনেক কর্মশালা। সন্ধ্যা থেকেই আবৃত্তিপ্রেমীদের আনাগোনা শুরু হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে। সন্ধ্যা ৭টায় ধ্বনির সদস্যদের বলিষ্ঠ কণ্ঠে একক কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়েই শুরু হয় অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব।

অনুষ্ঠানটির দর্শক হিসেবে আসা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র সম্পদ অয়ন মারান্ডী বলেন, 'আবৃত্তিপ্রেমী মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। এই ধরনের আবৃত্তির অনুষ্ঠানগুলো আবৃত্তির সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়ে আবৃত্তিপ্রেমী মানুষকে আনন্দদানে সক্ষম।'

অনুষ্ঠানটির প্রধান আকর্ষণ ছিল ধ্বনির বর্ষা প্রযোজনা : 'প্রণয় মেঘে বিরহ পুরাণ' যার গ্রন্থনা এবং নির্দেশনায় ছিলেন মারিয়াম রশীদ ছন্দা।

সংগীত এবং আবৃত্তির নৈসর্গিক মিথস্ক্রিয়ায় পুরোটা সময় বর্ষা বন্দনার এক অদ্ভুত আমেজ তৈরি করে ধ্বনির সদস্যরা। আবৃত্তির সময়টুকু কাটে মুগ্ধতার আবেশে। ঠিক এরকমই একটি সন্ধ্যা ভালো করে দিতে পারে আপনার মন। বর্ষাকে নতুন করে ভালোবাসার খোরাকও জোগাতে পারে।

এতে অংশগ্রহণ করেন আসাদুলস্নাহ আল গালিব, শাহিদা আক্তার, জিনিয়া আফরোজ ঝরা, মোশাররফ হোসেন, নাবিলা নূর মুমু, জারিন তাসনীম জিতা, নারমীন সুলতানা উপমা, ফয়সাল রাব্বি, সাদিয়া সরওয়ার উলস্নাস এবং আবহ সংগীতে ছিলেন আকাশ মন্ডল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<65670 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1