শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পড়তে পারেন ভেটেরিনারি সায়েন্স

নতুনধারা
  ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনিক আহমেদ

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষি খাত ব্যাপকভাবে প্রাণিসম্পদের ওপর নির্ভরশীল। প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ছাড়া কৃষিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। আর প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান বা ভেট। ভেটেরিনারি হলো মূলত পশুপালন বিদ্যা ও পশু চিকিৎসা বিদ্যার একত্রিত রূপ। আধুনিক উপায়ে পশুপালন, প্রজনন, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ে একজন ওভটেরিনারিয়ানকে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। ভেটেরিনারিয়ান বা ভেট মূলত তাদেরই বলা হয়- যারা সব ধরনের প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রির চিকিৎসা করে থাকে। সুতরাং, প্রাণিসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন এবং এ খাতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণে একজনভেটেরিনারিয়ানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধনকৃত ভেটেরিনারিয়ানের সংখ্যা ছয় সহস্রাধিক।

বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহের বাকৃবিতে (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ভেটেরিনারি অনুষদ চালুর মাধ্যমে এই শিক্ষার সূচনা হয়। এরপর ভেটেরিনারি শিক্ষার জন্য একে একে গড়ে উঠেছে ১১টি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ( শেকৃবি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি), ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ (ঝিসভেক), গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে ভেটেরিনারি শিক্ষার জন্য একমাত্র বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া সম্প্রতি সিরাজগঞ্জে একটি ভেটেরিনারি কলেজের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এবং সেখানে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদের গুরুত্ব বাড়ছে। অ্যানথ্রাক্স, বার্ডফ্লু প্রভৃতির মতো ভয়াবহ জুনোটিক রোগের প্রাদুর্ভাবের ফলে ভেটেরিনারিয়ানদের গুরুত্ব বেড়েছে। সরকার প্রাণিসম্পদের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় ছেলেমেয়ে সবাই ব্যাপক হারে ভেটেরিনারি শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে ক্যারিয়ার এখন তাই অনেক আশাপ্রদ এবং সম্ভাবনাময়। ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে ৬ মাস/১ বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপসহ ৫ বছর মেয়াদি ডিভিএম/ভেট সায়েন্স অ্যান্ড এএইচ কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় একজন শিক্ষার্থীকে এনাটমি, হিস্টোলজি, বায়োক্যামিস্ট্রি, এনিমেল সায়েন্স, ডেইরি সায়েন্স, পোল্ট্রি সায়েন্স, প্যাথলজি, ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি, পারাসাইটোলজি, মেডিসিন, সার্জারিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জ্ঞান অর্জন করতে হয়।

পড়ালেখা শেষ করে এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। ঋঅঙ, ডঐঙ, টঘওঈঊঋ, টঘঊঝঈঙ, টঘ, উঋওউ-এর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি চাকরির সুবাদে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগও পাবে তারা। এ ছাড়া ওঈউউজই, ইখজও, খজও, ঋজও-এর গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানিতে ভেটদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক পদ রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিসিএসেও ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য রয়েছে বিশেষ সংরক্ষিত কোটা। এ ছাড়া বিসিএসের অন্য ক্যাডারেও ভেটেরিনারিয়ানরা প্রতিযোগিতা করতে পারবে। বিভিন্ন ব্যাংক, কোম্পানি, হ্যাচারি, পোল্ট্রি ও ডেইরি ফার্মে রয়েছে চাকরির সুযোগ। চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে প্র্যাকটিসের মাধ্যমে বাড়তি উপার্জন করতে পারে। ফলে এই বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ারের সুযোগ আসলে ব্যাপক উন্মুক্ত।

ভেটেরিনারি শিক্ষার একমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গণ বিশ্ববিদ্যালয়

২০১৬ সালের মে মাসে দেশের প্রথম ও একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের যাত্রা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদনকৃত ২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অতি অল্প সময়েই ভেটেরিনারি শিক্ষার জন্য যাবতীয় প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারায় ইউজিসি আসন সংখ্যা পঁচিশ থেকে পঞ্চাশে উন্নীত করে। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি শিক্ষার জন্য রয়েছে সুসজ্জিত ক্লাসরুম, আধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি, গবেষণাগার, পোল্ট্রি ও ডেইরি ফার্ম, লাইব্রেরিসহ নানা সুবিধা। গত বছরের ৪ ফেব্রম্নয়ারি উদ্বোধন করা হয় ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল, যা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি শিক্ষার ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করে। এই হাসপাতালের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন হাতে-কলমে তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে তেমনি পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষরা স্বল্পমূল্যে তাদের গৃহপালিত সব প্রাণি ও পোল্ট্রির চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। বর্তমানে ১২ জন শিক্ষকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে এগিয়ে চলেছে এই বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম, যা গণ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে গড়ে তুলতে অনুষদের সূচনালগ্নেই প্রতিষ্ঠা করা হয় পোল্ট্রি ও ডেইরি ফার্ম, একই সঙ্গে চলমান রয়েছে টার্কি গবেষণা প্রকল্প। এ ছাড়াও সম্প্রতি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের অধীনস্থ এনিমেল অপারেশন থিয়েটারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আরো নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

যতই দিন যাচ্ছে প্রাণিসম্পদের ব্যাপক চাহিদার কারণে ভেটদের কদর বেড়েই চলেছে। এই দিক বিবেচনা করে বর্তমান সরকার ভেটেরিনারি শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75916 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1