বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একাদশ সমাবর্তন

স্বপ্নে ঘেরা আবেগের দিন

একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমের সমাপন শেষে যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়, যে দিনটি সমাবর্তন নামে পরিচিত। দিনটি ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর থাকে হাজারো স্বপ্ন। শিক্ষাজীবন শেষে একটি কালো রঙের গাউন ও ক্যাপ যেন প্রতিটি গ্র্যাজুয়েটের শত প্রতীক্ষার ফল। যে প্রতীক্ষার শেষ হয় সমাবর্তনের মাধ্যমে। ছোটবেলা থেকে লালিত স্বপ্ন যেন বাস্তবে রূপ পায় এদিন। স্বপ্ন যেন ধরা দেয় বাস্তব রূপে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্য গ্র্যাজুয়েটদের সেই স্বপ্নে ঘেরা আবেগের দিনের কথা জানাচ্ছেন আসিফ হাসান রাজু
নতুনধারা
  ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মতিহারের সবুজ চত্বর সেজেছে বর্ণিল সাজে। ক্যাম্পাসটা গমগম করছে। চারিদিকে জাঁকজমক ভাব, সঙ্গে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। কালো গাউনে প্রাণোচ্ছল তারুণ্যের ছড়াছড়ি। এ যেন গ্র্যাজুয়েটদের হাট! এদিন যেন মতিহারের সবুজ চত্বর পুরো যৌবনেভরা রূপ পেয়েছিল। পাবেই না কেন? দিনটি ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ সমাবর্তন। গত শনিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জমকালো এ আয়োজন।

দিনটি ঘিরে নব্য গ্রাজুয়েটদের মনে উত্তেজনার কোনো শেষ ছিল না। ক্যাম্পাসের সবখানেই তাদের মুখরিত পদচারণা। সঙ্গে ক্যামেরা আর মুঠোফোনের ক্লিক। হোক সেটা আবেগের প্যারিস রোড কিংবা সাবাস বাংলাদেশ। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে জোহা চত্বর, পুরনো ফোকলোর মাঠ, শহীদ মিনার, টুকিটাকি চত্বর, চারুকলা, ক্যাফেটেরিয়া, রাকসু প্রাঙ্গণ, টিএসসিসি, স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণসহ কোনো স্থানে থেমে নেই নব্য গ্রাজুয়েটদের ছবি তোলার মহড়া। 'গাউন আর ক্যাপ পরে এমন একটা দিন কে মিস করবে ফ্রেমে আবদ্ধ হতে?' এমনটাই বলছিলেন মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মৌসুমি মৌ।

সমাবর্তনকে ঘিরে লাল-নীল আলোয় সেজেছিল ক্যাম্পাস। এখানে এসেই প্রিয় বিভাগে শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতেছিল গ্র্যাজুয়েটরা। ক্যাম্পাস জীবনে কাটানো প্রাণের সতীর্থদের সঙ্গে নিজের স্মৃতিকে ফ্রেমে বন্দি করতে দেখা যায় অনেকের। শুধু সাবেক নয়, এদিন তাদের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে দিন কাটাতে দেখা যায় বতর্মান শিক্ষার্থীদেরও। এ যেন নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা। সমাবর্তনে অংশ নেওয়া নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তরা বিশ্বাস জানালেন তার স্বপ্নের কথা। 'ছোট বেলা থেকে পুষে রাখা সেই স্বপ্ন পূরণের আর সাধনার স্বীকৃতির দিন। কথাগুলো বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে বললেন, আজ আমার জীবনের সব থেকে আনন্দের দিন।'

সাবাস বাংলাদেশ মাঠে একদল গ্র্যাজুয়েট নীল আকাশে ক্যাপ ছুড়ে আর একটু লাফ দিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত। আকাশে ক্যাপ ছুড়ে না দিলে যেন গ্র্যাজুয়েট ভাবটাই আসে না। কথা হলো তাদের মধ্যে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সুমাইয়া তাসনুভার সঙ্গে। তিনি জানান, 'দিনটি আমার কাছে হাজারো স্বপ্নের ভিড়ে আবেগের দিন। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল একদিন আমিও আমার শিক্ষাজীবন শেষ করে তাদের স্বপ্ন পূরণ করব; আজ আমার সেই দিন।' সমাবর্তনের যোগ দেওয়া নব্য গ্র্যাজুয়েটদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।

'গত চার বছরের পড়াশোনার পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পূর্ণতা এল সমাবর্তনের মাধ্যমে।' বলে জানালেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরফান মাহমুদ। এদিন সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যায়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে। সমাবতর্ন উপলক্ষে এদিন ক্যাম্পাস সেজেছিল এক নতুন সাজে। লাল-সবুজের বাতির সঙ্গে রঙের তুলির অল্পনায় বিশ্ববিদ্যালয় মেইন গেট থেকে শুরু করে স্টেডিয়াম পর্যন্ত নবরূপে সাজিয়ে তোলা হয় ক্যাম্পাসকে। পাশাপাশি বিভিন্ন ভবন, রাস্তা, গাছপালা রঙের আঁচড়ে যেন প্রাণের ছোঁয়া পেয়েছিল সমাবতর্ন উপলক্ষে। এবারের সমাবর্তনে মোট তিন হাজার চারশত একত্রিশ জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করে।

উৎসবমুখর এ দিনটিতে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইতিহাসবিদ প্রফেসর রঞ্জন চক্রবর্তী। সমাবর্তনের সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হাদিম গ্র্যাজুয়েটদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চ মাতান দেশবরেণ্য শিল্পী খুরশিদ আলম ও লুইপা। দিন ভর সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পূর্ণতা পেল আকাশছোঁয়া স্বপ্নের বড় একটি অংশ। সব মিলিয়ে এদিন সদ্য গ্রাজুয়েটদের চোখে-মুখে ছিল উচ্ছ্বাসের ছাপ। চোখে-মুখে সেই স্বপ্ন আটকে হাসিমাখা মুখ নিয়ে এমনটাই প্রত্যয় তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79022 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1