শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকৃতির সান্নিধ্যে ইতিহাস পরিবার

নতুনধারা
  ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আবির মাহমুদ খবির

আমরা ১২৭ জন ছাত্রছাত্রী রওনা দিয়েছিলাম বিকেল ৫টার দিকে। আমাদের সঙ্গে ছিলেন ইতিহাস বিভাগের শ্রদ্ধেয় শাকির স্যার এবং মাসুদা পারভীন ম্যাম। ভ্রমণটি ছিল মূলত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে। এটি ইতিহাস বিভাগের বার্ষিক শিক্ষা সফর। ক্যাম্পাসের নতুন কলাভবন থেকে তিনটি বাসে আমরা যাত্রা শুরু করি। আমাদের গন্তব্য কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও মহেশখালী। প্রথমবারের মতো আমি কোনো শিক্ষা সফরে যাচ্ছি তাই ভেবে আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল। আমার মতো আরো অনেকেই ছিল, তাই স্বাভাবিকভাবে আমাদের আবেগ ছিল অন্যের চেয়ে অনেক বেশি। বাস ছাড়ার পর গাড়িতে আমরা বন্ধুবান্ধবীরা অনেক মজা করি। গাড়িতে বসেই রাতের খাবার খাই। সবটাই নতুন অভিজ্ঞতা। জীবনে প্রথম আমি এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে যাচ্ছি, তাই অনুভূতিটা ছিল অন্যরকম। সারা রাত ভ্রমণ করে পরের দিন সকাল অর্থাৎ ৩ নভেম্বর সকাল ৮টায় আমরা টেকনাফে গিয়ে পৌঁছাই। ওখানে সকালের নাস্তা শেষে আমরা জাহাজে করে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেই। দুপুরের দিকে সেন্টমার্টিনে পৌঁছে আমরা সেখানকার হোটেলে উঠি। দুপুরের খাবার হোটেলেই খেয়ে নেই। তারপর বাংলাদেশের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সমুদ্র সৈকতে হইহুলেস্নাড় করে গোসল করি। সমুদ্রের লোনা পানি আমাদের বিমোহিত করে। সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত হয় মনের এক কোণে। আমরা বন্ধুবান্ধবরা সবাই একসঙ্গে সমুদ্রবিলাস করি। শুধু তাই নয়, দলীয় ছবিও তুলি। ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সমুদ্রবিলাস করে সন্ধ্যায় ফিরে যাই হোটেলে। পরের দিন আমরা রওনা দিই ছেঁড়াদ্বীপের উদ্দেশে। আমি অনেকবার ছেঁড়াদ্বীপের নাম শুনেছি। বন্ধুরা গল্পের ছলে বলতো সেখানকার সৌন্দর্যের কথা। তখন কৌতূহল জাগতো সেখানে যাওয়ার। আমি কি না সেই ছেঁড়াদ্বীপে রওনা দিচ্ছি এভাবে; খুব ভালো লাগতে শুরু করল। ৪ নভেম্বর দুপুরে টলারে করে আমরা ছেঁড়াদ্বীপ পৌঁছালাম। সত্যিই অসাধারণ সৌন্দর্যের সমারোহ ছেঁড়াদ্বীপে। সেখানে খুব ভালো কিছু সময় কাটিয়ে আবার ফিরে যাই সেন্টমার্টিনে। ৫ নভেম্বর রাতে আমরা কক্সবাজার চলে আসি। রাত কাটাই হোটেলে। পরেরদিন ৬ নভেম্বর সকালে আমরা ছোট ট্রলারে করে মহেশখালী রওনা দেই। মহেশখালী অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর একটা স্থান। সেখানে বিভিন্ন মন্দির দেখতে পাই। রাখাইনদের তৈরি বিভিন্ন বস্ত্র দেখতে পাই। রাখাইন পলস্নী দেখতে পাই। মহেশখালী ঘণ্টাতিনেক কাটিয়ে আমরা আবার বিকেলে ফিরে আসি কক্সবাজারে আমাদের হোটেলে। ফিরে এসেই দেখতে যাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ঢেউ আর ঢেউ! সমুদের পানির ঢেউয়ের উচ্চতা এত বেশি ছিল যে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম।

সমুদ্রের পাড় দিয়ে হাঁটাহাটি করতে যে কি ভালোলাগে তা কেবল সমুদ্র পিপাসুরাই অনুভব করতে পারে। সেদিন রাত ৮টায় আমাদের ক্যাম্পাসে ফিরে আসার জন্য রওনা দিতে হবে, তাই সমুদ্রে বেশি সময় না দিয়ে হোটেলে চলে যাই ব্যাগ গোছাতে। ফেরার সময় কেন যেন মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। তখন খুব করে মনে হচ্ছিল আমি সমুদ্রের মায়ায় পড়ে গিয়েছি। কিন্তু ফিরে তো আসতেই হবে। তাই সব মায়া ত্যাগ করে পরেরদিন অর্থাৎ ৭ নভেম্বর সকালে ক্যাম্পাসে ফিরে আসি। সত্যি বলতে ভ্রমণটি আমার জীবনে সবচেয়ে উপভোগ্য ছিল। স্মৃতি হয়ে থাকবে আজীবন।

এত সুন্দর একটি ভ্রমণ আয়োজন করার জন্য আমি অনেক ধন্যবাদ জানাই আমার ডিপার্টমেন্টের স্যার ও ম্যামদের। ভালোবাসি ইতিহাস বিভাগ, ভালোবাসি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79023 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1