বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা যেমনিভাবে ক্যাম্পাসের উন্নতি-অগ্রগতি তুলে ধরেন ঠিক তেমনি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বলা হয় ক্যাম্পাসের প্রাণভোমরা। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যেমনি আনন্দ আছে পাশাপাশি আছে অনেক কষ্ট ও শঙ্কা। এসব মাড়িয়ে ক্যাম্পাসে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের হয় এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের সেই অভিজ্ঞতার গল্প শুনাচ্ছেন মাহবুব এ রহমান

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার গল্প

মাহবুব এ রহমান
  ২০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের শুভাকাঙ্ক্ষীর পাশাপাশি শত্রম্নও বেশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অন্যান্য ক্যাম্পাসের চেয়ে আয়তনে বড় হওয়ায় নিউজও সাধারণত বেশি থাকে। তাই সাংবাদিকতা শুরুটা ছিল খুবই কষ্টের। কারণ একদিনে দু-তিনটা নিউজ কাভার করা কষ্ট হয়ে যেত। মাস-তিনেক সময় লেগেছে বিষয়ট মানিয়ে নিতে। এখন পর্যন্ত এসে মনে হলো ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের শুভাকাঙ্ক্ষীরও অভাব নেই আবার শত্রম্নরও কমতি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়মের নিউজ প্রকাশ করায় একাধিকবার নানা ধরনের হুমকি-ধমকির (মামলা করে দেব, সার্টিফিকেট কিভাবে নিয়ে যাও দেখব) শিকার হতে হয়েছে। তখন পত্রিকা অফিস অনেক সাপোর্ট দেয়ার ফলে আর এসব হয়রানির শিকার হতে হয়নি। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের অন্য সহকর্মীরাও সহযোগিতা করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোও তাদের অনিয়মে নিউজ প্রকাশ হলে সাংবাদিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য এমনকি মারধর করতে দ্বিধা করে না। কিন্তু আবার এটাও দেখেছি, ভুল বুঝতে পেরে ক্যাম্পাস কাঁপানো ছাত্র নেতারা সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আদ্যোপান্ত মোটামুটি জানা থাকে। কারণ তাদের নিউজের প্রয়োজনে আবাসিক হলের স্টাফ থেকে শুরু করে ভিসি অফিস পর্যন্ত প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করতে হয়। ফলে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার মাধ্যমে সবার সঙ্গে সহজে মেশার একটা সুযোগ থাকে। যা অন্যদের সহজে সম্ভব হয় না। মোবারক আজাদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার বাস্তবতা শিখিয়েছে ২০১৮'র নভেম্বর থেকে ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করি। এই স্বল্পসময়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতাকে ঘিরে অজস্র অভিজ্ঞতা জমা হয়েছে যার কোনোটা আনন্দের, কোনোটা ভয়ের আবার কোনোটা কষ্টের। এখন পর্যন্ত জীবনে সবচেয়ে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছি ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার কারণেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে নিজের শিক্ষাজীবনই হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। উপাচার্য আমার বিরুদ্ধে বেশকিছু মিথ্যা অভিযোগ এনে আমায় বহিষ্কার করেছিলেন যেটি পরবর্তী সময়ে সারাদেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বহিষ্কারের আগেও একই ঘটনার জেরে মধ্য রাতে আমার মেসে হামলার চেষ্টা করা হয় এবং সকাল হওয়ার আগেই আমি মেস ছাড়তে বাধ্য হই। এমনকি বহিষ্কারের পরও চলতে থাকে মানসিক নির্যাতন। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে মিথ্যা স্ট্যাটাস দেওয়ানো, বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান, জোর করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি গ্রহণের চেষ্টা, রুমে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতনসহ একজন মানুষকে যতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায় আমার ক্ষেত্রে তার সব চেষ্টাই করা হয়েছিল। এ ঘটনাগুলো যখন ভীত ও আতঙ্কিত করে তুলছিল, তখন নিজেকে প্রচন্ড অসহায় মনে হচ্ছিল। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সূত্রে দেশে এবং দেশের বাইরে অনেকে আমার পাশে দাঁড়ায় এবং এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। সব ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা তাদের জায়গা থেকে প্রতিবাদ করে, সর্বদা খোঁজ খবর নেয়াসহ মানসিকভাবে শক্তি জোগায়। প্রচন্ড স্বার্থপর একটা সময়ে সবার এই স্বার্থহীন ভালোবাসা ও সহযোগিতা আমায় মুগ্ধ করেছে এবং এ ঘটনার ফলে আমার নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে হয়। সাংবাদিকতা মানেই ঝুঁকি, আমার ক্ষেত্রে যেটি ঘটেছে সেটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এ ঘটনা আমায় বাস্তবতা শিখিয়েছে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার কল্যাণে একদিকে যেমন জানতে পেরেছি স্বার্থের কারণে একটা মানুষ কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে অপরদিকে এটাও বুঝতে পেরেছি খারাপ কিছু ঘটনা মানেই সব শেষ নয়, ধৈর্য ধরে লড়াইটা চালিয়ে গেলে ফলাফলটা ভালোও হতে পারে। ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিয়ত নিজেকে আবিষ্কার করতে শিখেছি ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করছি প্রথমবর্ষ থেকেই। দেখতে দেখতে প্রায় চার বছর কেটে গেল। দিন গড়িয়েছে, পালস্না দিয়ে বেড়েছে কর্মব্যস্ততা। ব্যস্ততা যতই বেড়েছে, ততই যেন আবিষ্কার করেছি নিজেকে। শিখেছি ভুল থেকে ভালো কিছু কীভাবে করা যায়। আর এর সবটুকুই আমাকে শিখিয়েছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায়। সাংবাদিকতার প্রতি আমার আগ্রহটা বেশ আগে থেকেই। আর এই ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে ছুটতে হয়েছে ক্যাম্পাসের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে। পরিচয় হয়েছে বিচিত্র মানুষের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে মিশতে গিয়ে জেনেছি অনেক অজানাকে। শিখেছি কলমের শক্তিকে নতুন করে উপলব্ধি করতে। সত্যি কথা বলতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা আমার জল্পনা-কল্পনার দিগন্তকে প্রসারিত করেছে। রেদওয়ানুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা সবার থেকে এগিয়ে রাখে অনেকখানি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা সৃজনশীলতায় উদ্বুদ্ধ করে। এটি আসলে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। প্রতিদিনের সংঘটিত কোনো ঘটনা সংবাদ হিসেবে উপস্থাপন সহজ বিষয় নয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ঘটনাকে একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক যেভাবে দেখেন বা বিশ্লেষণ করেন অন্যান্য শিক্ষার্থীরা কিন্তু সেভাবে উপলব্ধি করতে পারেন না। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের প্রখর দৃষ্টিসম্পন্ন, অনুসন্ধিৎসু মন, তীক্ষ্ন বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হতে হয়। সাংবাদিকতার প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ এমনকি বিশ্বের সমসাময়িক বিষয়গুলো জানতে হয় তাদের। যা অন্যদের থেকে তাদের এগিয়ে রাখে বহুগুণে। তবে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সবেচেয় বড় প্রতিবন্ধকতা হলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রতিপক্ষ মনে করে। প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করে। এমনিক কখনো কখনো তাদের রোষানলেও পড়েত হয়। অথচ গঠনমূলক সমালোচনা ও অর্জনগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে সবার কাছে উপস্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে রাখে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরাই। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা যেমন আছে তেমনি ভালো দিকও আছে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার মাধ্যমে নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি হয়, যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধিপায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অগ্রগতি ও কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারা সত্যিই ভালো লাগার। জান্নাতুল ফেরদৌস কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় ভয় আর বাধা মাড়িয়ে এগিয়ে যেতে হয় সম্মুখ পানে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাংবাদিকতা চর্চার 'উর্বরভূমি' বলা হয়। সাংবাদিকতার কোনো ধরনের জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকতার প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা থেকেই নিজেকে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় নিযুক্ত করেন। এখান থেকে একজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকতার প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করে। সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েই ধীরে ধীরে একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পান। সততা, বস্তুনিষ্ঠতা, দক্ষতা, সর্বোপরি নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের জন্য ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা সংবাদের অক্লান্তকর্মী। কিন্তু মাঝেমাঝে তাদের লেখনীকে স্তব্ধ করতে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের ওপর আঘাত হানা হয়। দেয়া হয় হলুদ সাংবাদিকতার তকমা। লাঞ্ছিত হতে হয় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনদের হাতে। কিন্তু ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা এসব বাধা আর ভয়কে মাড়িয়ে কলমযুদ্ধে এগিয়ে যায় সম্মুখ পানে। রায়হান উদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে