শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
নারী শিক্ষার্থীদের ভাবনায়

প্রজন্ম হোক সমতার

১৯৭৫ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিকভাবে নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে প্রথম নারী দিবস পালন হয় ১৯৭১ সালে। নারীদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্য ও অবহেলা থেকে মুক্তি দিতে নারী দিবসের উৎপত্তি। দিবসটি নিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের নারী শিক্ষার্থীরা কি ভাবছেন, সেটা তুলে ধরেছেন- তানভীর আহম্মেদ।
নতুনধারা
  ০৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

নারী দিবসের মূল তাৎপর্য হলো নারীদের সমান অধিকার অর্জন। আজকের বিশ্বে নারীরা এখনো সমান অধিকার পায় না। কোনো না কোনোভাবে পুরুষদের তুলনায় নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের প্রতিনিয়ত পুরুষের নানা বৈষম্য এবং নিপীড়নের প্রতিনিয়ত শিকার হতে হয়। নারী দিবসের তাৎপর্যকে ধারণ করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নারী-পুরুষ সম মজুরি এবং নারীর নিরাপদ কর্ম পরিবেশের দাবির লড়াই হতেই আজকের নারী দিবসের উৎপত্তি। কিন্তু এখনো কর্মক্ষেত্রে নারীকে নানা বৈষম্যের শিকার হতে হয়। নারীদের নিজের স্বপ্ন পূরণ করার আগে তার পরিবার, তার সমাজের চাহিদা মেটাতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা উচ্চশিক্ষার সিঁড়ি অতিক্রম করতে পারে না। অনেক নারীই আছেন যারা সন্তান ধারণ করে পড়াশোনায় ইতি টেনে সংসারী হতে বাধ্য হয়েছেন। এভাবেই নারীকে শিকলে বাঁধা জীবন অতিবাহিত করতে হয়। সম্প্রতি উদ্বেগজনক হারে ধর্ষণের মাত্রা বেড়ে গেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিই এর জন্য দায়ী। ঘরে বাহিরে সব জায়গায় নারী অনিরাপরাধ জীবন ধারণ করে। এসব বিষয় থেকে নারীকে মুক্তি দিতে পারলেই নারী দিবস সার্থক হবে।

প্রভা আক্তার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বলা যায়, প্রাচীন যুগ থেকেই নারী একজন মানুষ হিসেবে তার পূর্ণ অধিকার নিয়ে জীবন ধারণ করতে পারেনি। সমাজের যত বাধা নিষেধ তা নারীর জন্যই নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। পিতৃতান্ত্রিক এই ব্যবস্থায় নারীকে চিরকাল পুরুষের অধীনস্থ করে চলতে বাধ্য করা হয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে পদে পদে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আমাদের দেশের নারীদের বর্তমান অবস্থান অতীতের থেকেও অনেক ভয়াবহ। সামগ্রিকভাবে কোনো জনগণেরই নিরাপত্তা এ দেশে নেই। কিন্তু আলাদাভাবে নারীর নিরাপত্তাটুকু যেন কোথাও নেই। না ঘরে না বাহিরে! ক্ষোভের বিষয় হলো নারী ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের কোনো বিচারও এ দেশে হয় না। বিগত এক দশকের দিকে নজর দিলে দেখা যায় কত অসংখ্য নারীকে এই সমাজের কাছে বলি হতে হয়েছে। নারীর অধিকার শুধু ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং বৈষম্যের দ্বারা ক্ষুণ্ন হচ্ছে না, বাজে দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব, অকথ্য ব্যবহার ইত্যাদি সব রকম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার সবার। অথচ দেখা যায়, বিদ্যমান যে শাসনব্যবস্থা জারি আছে তার প্রভাবে বলি হতে হচ্ছে সব থেকে বেশি নারীদেরই। সুতরাং রাষ্ট্র কর্তৃক জিইয়ে রাখা এই পিতৃতন্ত্রকে কষাঘাত করাটা জরুরি। আর এই জরুরি কাজটা করার উদ্যোগ নারীদের নিতে হবে এবং সাহসের সঙ্গে এই কাজ এগিয়ে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সেই সুতা কারখানার নারী এ ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক।

রূপন্তী দীপা মলিস্নক

নর্দান ইউনিভার্সিটি।

সমাজের প্রত্যেকটি অঙ্গনে নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের প্রতি ভ্রান্ত ধারণা তাদের অগ্রতিতে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন করে। নারীর অগ্রগতি হওয়া উচিত বাধামুক্ত। নারীরা শিক্ষা এবং কুসংস্কারের বাধা কিছুটা অতিক্রম করতে পারলেও নিরাপত্তা ইসু্যতে অনেক পিছিয়ে আছে। ধর্ষণ এবং ইভটিজিংয়ের ভয়ে রাস্তায় কোনো নারী একা চলতে সাহস পায় না। ২০১৯ সালে ব্যাপক হারে নারী ধর্ষণের শিকার হলেও অপরাধীদের কোনো বিচার হয়নি। এই ঘটনায় বলে দেয় নারীরা আজকের সমাজে কতটা অসহায় জীবনযাপন করে। বেশিরভাগ নারী চার দেয়ালের মাঝে আটকে পড়ে বন্দি জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। পরিবার নামক কারাগার তাদের বন্দি জীবনযাপন করতে বাধ্য করে। খেলাধুলায় নারীদের এগিয়ে আসা নিয়েও সমাজের মানুষদের বিরূপ মনোভাব রয়েছে। একটি সুন্দর সমাজ গঠনে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান গুরুত্ব রয়েছে তবুও কেন পুরুষের অধিকার নারীর তুলনায় বেশি হবে? সর্বক্ষেত্রে নারীরা তার অধিকার ফিরে পাবে এটাই আমার চাওয়া।

তরিকুন নেছা মিম

গণবিশ্ববিদ্যালয়।

বর্তমানে আমাদের সমাজে নারীরা সবার ঊর্ধ্বে। সব জায়গাতেই তাদের সম্মান দেয়া হচ্ছে। তবে সম্মান পাওয়াটা নির্ভর করে ব্যক্তিত্বের ওপর। আবার যদি আমরা নিজেরাই নিজেদের জায়গাটা নষ্ট করি তাহলে হয়তো আমরা সেই সম্মানও পাব না। সুতরাং আমাদের তথা নারীদের উচিত নিজেদের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে চলা।

নারী দিবসে শুধু নারীদের সম্মান দেখিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস বা ভিন্ন কিছু আয়োজন করার মানে নেই। বরং বছরের প্রতিটা দিন নারীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা উচিত। সামাজিকভাবে মেয়েরা এখন সব দিক থেকেই এগিয়ে। নারীরা তার যথাযথ প্রাপ্য পেলেই হয়তো দেশ আরো সামনে দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। আর নারীর প্রতি সম্মান নিজেদের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। তাহলে হয়তো কোনো নারীকে আর নির্যাতিত হতে হবে না।

আফসানা রাত্রি মিশু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস হচ্ছে রাষ্ট্র, সমাজ ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে এবং স্তরে পুরুষের সমপর্যায়ে নারীর অধিকারবাদের এক উজ্জ্বল দিন। অবশ্য বলতে হয়, সমানাধিকারের দাবি যেন পশ্চিমা দেশের প্রগতির অন্তিম ধারায় পর্যবসতি না হয়। আমরা স্বীকার করি ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান প্রভৃতি দেশে নারীশিক্ষার হার আজ পুরুষের সমপর্যায়ে উন্নীত। সেই সঙ্গে সমান অধিকারের দাবিও সোচ্চার। কিন্তু আমাদের স্বীকার করতে হবে, রাষ্ট্রীয় আন্দোলনের প্রাথমিক অবস্থা হতে এক দল মহীয়সী নারী যে বাগ্মিতাশক্তি ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন তা আজ বিশ্বের অজানা নয়। আন্দোলনের বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন এবং নিজের কর্মপ্রতিভার পরিচয় দিয়ে গেছেন।

অবশ্য বলতে হয়, নারী শিক্ষা-দীক্ষায় পুরুষের পাশে দাঁড়ানোর অধিকার লাভ করলেও পরিবার ও সমাজ জীবনে বহু নারী আশানুরূপ শান্তি ও সন্তোষ লাভ করতে পারেনি। নারীর অধিকার বিষয়ে রাষ্ট্রও সজাগ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ যাতে না থাকে সে ব্যাপারে আইনের ব্যবস্থা আছে। এত কিছুর পরও নারী নির্যাতন, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন ইত্যাদি বেড়েই চলছে। শিক্ষা-দীক্ষা কিছুই পারছে না। বহু নারী যেমন অনেক ক্ষেত্রে নারীত্বের মর্যাদা হারিয়েছে। একদল পুরুষের ক্ষেত্রে নারী শুধুই ভোগলালসার সামগ্রী। শিক্ষিত-অশিক্ষিত দুটি দিক একই অবস্থায় আছে। উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত পুরুষের ভোগলালসার যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় লালসার শিকার যেমন রুচিমার্জিতা নারী হচ্ছে, ঠিক একদল নারী শিকার ধরে দেবার ফাঁদও তৈরি করে পুরুষকে প্রলোভিত করছে। এসব অবস্থা থেকে পরিত্রাণ অতিসত্বর জরুরি।

সুমাইয়া রিমা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমাদের দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও নারীর নিরাপত্তা আজও নিশ্চিত হয়নি। দৈনন্দিন জীবনে নারীদের এখনো প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয়। সমাজের এক শ্রেণির মানুষের কাছে নারীরা এখনো শুধু ভোগবিলাসের বস্তু। আর এই শ্রেণির দ্বারা প্রতিদিনই দেশে একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ৩ মাসের শিশু থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধা, ধর্ষণের হাত থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছে না। এমনকি এ সব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার পর্যন্ত হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের হার বেড়েই চলছে। এই পরিস্থিতির দ্রম্নত অবসান প্রয়োজন। রাষ্ট্র যদি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে, তবে নারীরা হয়তো নিরাপত্তার জন্য আবারো গৃহবন্দি হয়ে পড়বে। নারী দিবসকে কেবল সভা সেমিনারে সীমাবদ্ধ না রেখে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। ধর্ষক, উত্ত্যক্তকারীদের ত্তৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে নারীর জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলা হোক এটাই প্রত্যাশা।

ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<91734 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1