কালের ধারায় প্রকৃতি জগতে প্রাণের সজীবতা, রং, রূপ ও স্নিগ্ধতা নিয়ে এসেছে ঋতুরানী শরৎ। শরৎ হলো বষার্র পরবতীর্ ঋতু।
বষার্র অতি বষর্ণ ও অবিরাম মেঘবালিকার গুরুগুরু গজর্ন থেমে গিয়ে প্রকৃতিতে নিয়ে এসেছে এক অপরূপ দৃশ্য।
ঝকঝকে নীল আকাশের বুকে ধবধবে সাদা মেঘের ভেলা। নানাবিধ ফুলের শোভা আর শস্যের শ্যামলতা। ভাদ্র-আশ্বিন এ দুই মাস মিলেমিশে শরৎ ঋতু। শরৎ মানেই নদীর তীরে কাশফুল, গাছে গাছে শিউলি, বেলি, জুঁই, শেফালি, মালতি, টগর, হাসনাহেনা আর বিলে-ঝিলে শাপলা ফুলের সমারোহ আর লম্বা লম্বা তালগাছে পাকা তালের মিষ্টি ঘ্রাণ। সেই তাল দিয়ে তৈরি করা পিঠা, পায়েস? আর ক্ষেতে ক্ষেতে আমন ধানের বেড়ে ওঠা চারা। শরৎ ঋতুর সৌন্দযর্ বাংলার প্রকৃতিকে করে তোলে রূপময় ও মোহনীয়।
শরতের সকালে বয়ে চলে ঝিরিঝিরি হাওয়া। ছোট ছোট পাখিদের বেপরোয়া দাপাদাপি ও মিষ্টি কলতান! ফুটন্ত শিউলির প্রাণ জুড়ানো ঘ্রাণ। শিউলি তলায় হালকা শিশিরে ভেজা দূবার্ঘাসের ওপর চাদরের মতো বিছিয়ে থাকে রাশি রাশি শিউলিফুল। আমনের মাঠে মাঠে শিশিরসিক্ত সবুজের স্বচ্ছ শামিয়ানা! বাতাসের দাপটে অবিরাম ঢেউ তুলে যায় আমন ধানের ক্ষেতজুড়ে। নদীর তীরে শুভ্র সাদা কাশফুলের খিলখিল হাসিতে যেন তার সবটুকু সৌন্দযর্ ঢেলে পড়ার উপক্রম। শরতের আকাশের মতো স্বচ্ছ আকাশ আর কোনো ঋতুতে দেখা যায় না।
শরতের মেঘমুক্ত আকাশে যেন শুভ্রতার ফুল ঝরে। শরতের দিনে খুব ভোরে কিশোর-কিশোরীরা ছুটে যায় ফুল কুড়াতে শিউলি তলায়। ফুল কুড়িয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরে।
পুবাকাশে সূযর্ ওঠে সোনার বরণ রূপ নিয়ে। সূযের্র ঝলমলে আলোয় ভরে যায় চারদিক। আমন ধানের সবুজ চারার ওপর ঢেউ খেলে যায় ভোরের হিমেল হাওয়া। নদী-নালা খাল বিলে ক্রমেই পানি কমতে শুরু করে। সেই সুযোগে গ্রাম বাংলার জনসাধারণেরা মিলেমিশে আনন্দঘন নৌকা ভ্রমণের আয়োজন করে। এঁকেবেঁকে বয়ে চলা নদীর বুকে মাঝিরা ডিঙি নাও বইতে বইতে গেয়ে ওঠে ভাটিয়ালি গান। বিলের জলে নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে লাল, সাদা শাপলাফুল।
সকালের হালকা কুয়াশায় সেই শাপলাগুলো এক স্বপ্নিল দৃশ্যের আভাস বয়ে আনে। আলো চিকচিক বিলের জলে ফুটে ওঠে প্রকৃতির অপার সৌন্দযর্ লীলা। পুকুরপাড়ে গাছের ডালে মাছরাঙা ধ্যান করে বসে থাকে।
পুকুরের স্বচ্ছ জলে পুঁটি, চান্দা, খলসে ও ছোট প্রজাতি মাছের রুপালি শরীর ভেসে উঠলেই ছোঁ মেরে নিয়ে যায় তার লম্বা ঠেঁাটে। সন্ধ্যেবেলা দিনের শেষে থেমে যায় চারপাশের কমের্কালাহল। প্রকৃতিতে নেমে আশে এক অন্যরকম আবহ। টগবগে লাল রক্তের রূপ ধারণ করে দিনের সূযর্ পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে।
সূযের্র রক্তিম আলোর ছটায় প্রকৃতি যেন অন্যরকম রঙে নিজেকে সাজায়।
পশু-পাখি নীড়ে ফিরতে থাকে।