বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নীল প্রজাপতির গল্প

রকি গৌড়ি
  ০৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

কোন এক সময়। একটি শুয়োপোকা বরই গাছের নিচ থেকে উঁকি দেয় আকাশে। ওখানে কি! শূন্যতা। এত শূন্যতা। নীল নীল কেন। নীল রঙের মেলা চলছে বোধ হয়। নাকি হলি খেলা। স্বপ্ন অঁাকে কচি মনটাতে তার। যদি ওই নীল আকাশের খানিকটা রং তার হুল –শূল শরীরে থাকত। তাহলে ঢং দেখিয়ে বেড়াতে পারতো ফুলবনে। এ কেমন শরীর তার। অদ্ভুত। সে ভাবে। কঁাদে। তারপর নিরাশ হয়ে ডুমুর পাতার আড়ালে মুখ গুঁজে বসে থাকে। অভিমান তার নিজের সঙ্গে। নিজেই নিজের অভিমান ভাঙে। মিনতি করে আকাশের দিকে চেয়ে। ও আকাশ নীল কাশবন আমায় একটু নীল দেবে নীল। উত্তর আসে না। নিজের প্রতিধ্বনিও ফিরে আসে না। মন বেচারা। নীরবে কেঁপে কেঁপে কঁাদে। শুকনো পাতার মতো মুখ শুকিয়ে থাকে। মাটিতে বুক মিশিয়ে মিশিয়ে হঁাটে। কি মনে করে একদিন। বালুতে মাথা গুঁজে বিশ্রাম নিচ্ছিল। হায়রে বজ্জাত পিঁপড়েগুলো কাতুকুতু দিয়ে ওকে অশান্ত করে ছাড়ল। ছেই পিঁপড়া ছেই। শরীর নেড়ে-চেড়ে দূরে ঠেলে দিল পিঁপড়েগুলোকে। ওরা ভীত হয়ে পালিয়ে গেল যার যার মতো।

বুকের হাটির্বট বেড়ে গেছে তার। মনের ব্যথা বাড়ছে। শরীরে কোনো ঢং নেই। রং নেই। রূপ নেই। মান নেই। সুখ নেই। নেই। নেই। নেই। উফ্ অসহ্য। হঠাৎ একটা বাতাস তার গা ঠেলে ঠেলে দিচ্ছে। ওরে এ তো মানুষের বাচ্চা! তার গায়ে ফুঁ দিচ্ছে। ছেড়ে দাও আমায়। বড় বড় চোখ দিয়ে ওকে দেখছে বাচ্চাটা। যেন চোখ দিয়েই ওকে গিলে খাবে। যেই হাতে ধরবে ধরবে। রাগান্বিত এক কণ্ঠস্বর বলল, এই কি করছিস! বাচ্চাটার মা শুয়োটাকে বেলচা দিয়ে তুলে বাগানে ফেলে দেয়।

ধপাস করে পড়ল বাগানের মাটিতে। স্যঁাতসেঁতে ভেজা মাটি। বাগানের ভেতর বেশ কয়েকটা ডুমুরগাছ আছে। ফুলগাছও আছে। এবার তার ক্লান্ত শরীরটাকে ঠেলিয়ে ঠেলিয়ে রওনা হলো ডুমুরগাছের দিকে। ওখানে পৌঁছেছে। পৌঁছেই ডুমুর পাতার গায়ে জড়িয়ে নিল নিজেকে। অজানা সিদ্ধির আশায়। শূন্য থেকে শুরু করে পার করছে দিন। বৌদ্ধিক ধ্যানে। একসময় নীল আকাশ শুয়োপোকার মতো কালো হয়ে ফেঁাটায় ফেঁাটায় জল ঢাললো ডুমুর পাতায় পাতায়। উল্টো করে ডুমুর পাতায় তখনও ল্যাপটে আছে শুয়ো।

প্রকৃতির সময় এলো। ফুলেল হাওয়ায় বাতাস হাসছে। মধু গন্ধে নাচে মৌবন। মৌমাছি গায় খুশি সংগীত। শুয়োপোকা কি ছেঁায়া পাবে আদৌ এর। কিছু সময়ের ব্যবধানে পাথরে এলো প্রাণ। শুকনো পাতা কচি হয়ে গেল। একি দেখছে শুয়ো! তার শরীরের ভিতর থেকে হালকা পাতার মতন দুটো চামড়া বেরিয়ে এলো। পাত। দুটো রঙিন দেখল। স্বপ্ন নয়তো! এ তো নীল জোনাকির মতন জ্বলছে তার চামড়ায়। সে পাতা থেকে নড়ে-চড়ে মাটিতে নামতে চাইল। আরে নীল চামড়া দুটো ডানার মতন ওকে ভাসিয়ে দিচ্ছে শূন্যে। নীল মেঘের মতো উড়ে বেড়াচ্ছে তার শরীর। এমন মনে হচ্ছে সে বসন্তরাজকন্যা। কি আনন্দ। উড়ছে। ঘুরছে। হাসছে। খেলছে।

ফুলের দিকে যাচ্ছে। ফুলেরা ওকে দেখে বলল, বাহ্ কত সুন্দর লাগছে তোমায়! ও শুয়োবোন। শোন। আজ থেকে তোমার নাম নীল প্রজাপতি বলে ডাকব। এসো আমাদের মধু পান করো। তোমার নীল চুমো আমাদের গালে দাও। শুনেছি মানুষ বলে নীল নাকি ভালোবাসার রং। তোমার ভালোবাসা দাও আমাদের। অবশ্যই দেব বন্ধুরা। তোমরা ঠিকই শুনেছ। ভালোবাসার রং নীল। আমি এমনও শুনেছি কষ্টের রং নীল। তবে আমি তো সুখে আছি। দুটো চমকিত নীল ডানা নিয়ে। তাহলে কষ্টের রং নীল হয় কি করে। সূযর্মুখী ফুল বলে উঠলÑ ওদুটো ডানায় তোমার কষ্ট ও ধৈযের্র ফল। যেমন দেখো আমি সূযর্ ভালোবাসি। সূযের্র প্রচÐ তাপ সহ্য করে সূযের্র দিকে চেয়ে থাকি। সবাই আমাকে সূূযর্মুখী ডাকে। এটা আমার কষ্ট ও ধৈযের্র খেতাব। দারুণ বলেছ তুমি। একসময় আমিও ওই নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। চাইতাম আকাশের ওই নীল আদরের ছেঁায়া। তারপর শুয়ো আকাশের দিকে তাকিয়ে কাতর স্বরে বলল, আচ্ছা ওই নীল আকাশেরও কি অনেক কষ্ট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে