শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
চীনা রূপকথা

চিতাবাঘ

অনুবাদক: রাকিবুল রকি
  ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনেক দিন আগে এক বিধবা মহিলা তার দুই মেয়ে এবং ছোট এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করত।

একদিন মা তার মেয়েদের বলল, ‘আমি তোমাদের ছোট ভাইকে নিয়ে তোমাদের নানিকে দেখতে যাচ্ছি। তোমরা বাড়ি-ঘর ভালো মতো দেখেশুনে রেখো।’

মেয়েরা বাড়ি-ঘর দেখেশুনে রাখার কথা দিল। মা তখন নিশ্চিন্ত মনে বেরিয়ে গেল।

পথে তাদের সঙ্গে এক চিতাবাঘের দেখা হলো। চিতাবাঘ জানতে চাইল, তারা কোথায় যাচ্ছে?

তিনি বললেন, ‘ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আমার মাকে দেখতে যাচ্ছি।’

‘তোমরা কি একটু বিশ্রাম নেবে না?’ চিতাবাঘ জিজ্ঞেস করল।

‘না।’ তিনি বললেন, ‘এমনিই আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে। তা ছাড়া আমার মায়ের বাড়ি যেতে হলে এখনো অনেক পথ যেতে হবে।’

কিন্তু চিতাবাঘ তাদের কোনো কথাই শুনতে চাইছিল না। তাই বাধ্য হয়ে তারা পথের পাশে বিশ্রাম নেয়ার জন্য বসল।

চিতাবাঘ বলল, ‘আমি একটু তোমার চুলে চিরুনি করে দিই।’

তিনি অনুমতি দিলেন।

কিন্তু বাঘ যখন চিরুনি করে দেয়ার জন্য মাথায় থাবা দিল তখন তার মাথার চামড়া কিছুটা কেটে গেল।

‘থাম!’ তিনি চিৎকার করে বললেন। ‘এভাবে তো তুমি চুলে অনেক ব্যথা দেবে।’

কিন্তু ততক্ষণে চিতাবাঘের নখ তার মাথার অনেকখানি চামড়া তুলে এনে ফেলেছে।

তিনি সাহায্য চাইবার জন্য চিৎকার করবেন তার আগেই চিতাবাঘ থাবা দিয়ে মেরে ফেলল। তারপর তার ছেলেকেও হত্যা করল। এবার চিতাবাঘ মহিলার কাপড় পরে, ছেলের হাড়গুলো ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখল। এরপর সে মহিলার বাড়িতে এলো, যেখানে তার দুই মেয়ে ছিল।

বাঘ মহিলার কণ্ঠ নকল করে তাদের ডাকতে লাগল, ‘দরজা খোল মেয়েরা, তোমাদের মা বাড়ি ফিরে এসেছে।’

মেয়েরা বেড়ার ফঁাক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল, ‘আমাদের মায়ের চোখ তোমার চোখের মতো এত বড় নয়।’

তখন চিতাবাঘ বলল, ‘তোমাদের নানি বাড়ি গিয়ে দেখি তার মুরগি ডিম পাড়ছে। এটা আমাকে সন্তুষ্ট করেছে। এ জন্য আমার চোখ এত বড় হয়ে গেছে।’

‘তোমার মুখের মতো আমাদের মায়ের মুখে কোনো দাগ নেই।’

‘তোমাদের নানির বাড়িতে কোনো অতিরিক্ত বিছানা ছিল না। তাই আমি ডালের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলাম। ডালের চাপে আমার মুখে দাগ পড়ে গেছে।’

‘আমাদের মায়ের পা তোমার মতো এত লম্বা নয়।’

‘এত বোকার মতো আজেবাজে প্রশ্ন করছো কেন? আমি অনেক দূর থেকে হেঁটে এসেছি। তাড়াতাড়ি এসে দরজা খোল!’

তখন এক মেয়ে আরেক মেয়েকে বলল, ‘উনি নিশ্চয় আমাদের মা।’

তারা দরজা খুলে দিল। যখন চিতাবাঘ সামনে এলো তখন বুঝতে পারল আসলে তাদের মা আসেনি।

সন্ধ্যা হয়েছে। মেয়েরা ইতোমধ্যে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। চিতাবাঘ তখন সঙ্গে করে আনা হাড়গুলো চিবাচ্ছিল।

মেয়েরা জিজ্ঞেস করল, ‘মা, তুমি কী খাচ্ছো?

‘আমি বিট খাচ্ছি।’ উত্তর দিল।

তখন মেয়েরা বলল, ‘ও মা, আমাদেরও একটু বিট দাও না। আমরাও অনেক ক্ষুধাথর্!’

মেয়েরা আব্দার করতেই থাকলে তাদের ছদ্ম মা তাদের ছোট একটা আঙুল দিল।

মেয়েরা দেখল যে এটি তাদের ছোট ভাইয়ের আঙুল।

তখন একজন আরেকজনকে বলল, ‘খেয়ে ফেলার আগেই আমাদের এখান থেকে তাড়াতাড়ি বেরুতে হবে।’

তারা দৌড়ে দরজার বাইরে এসে উঠোনের একটি গাছ বেয়ে উঠে পড়ল। তারপর ওপর থেকে তাদের ছদ্ম মাকে ডেকে বলল, ‘বাইরে এসো। দেখে যাও, আমাদের এক প্রতিবেশীর ছেলে তার বিয়েতে কত আনন্দ করছে।’

অথচ তখন গভীর রাত।

ডাক শুনে মা বাইরে এলো। যখন দেখল, তারা গাছের ওপরে তখন সে রেগে গিয়ে বলল, ‘ডেকেছো কেন? জানো না আমি গাছে চড়তে জানি না?’

এক মেয়ে বলল, ‘ঝুড়িটি দড়ি দিয়ে বেঁধে দড়ির একমাথা আমাদের দিকে ছুড়ে মারো। তারপর তুমি ঝুড়িতে উঠে বসবে তখন আমরা তোমাকে টেনে তুলব।’

মা তাদের কথামতো কাজ করল। যখন ঝুড়িটি মেয়েরা অধেের্কর মতো ওপরে টেনে তুলেছে, তখন তারা ঝুড়ি দোলাতে শুরু করল। ঝুড়িটি গিয়ে ধাক্কা খেল এক গাছের সঙ্গে। ধাক্কা খেয়ে ঝুড়িসহ চিতাবাঘ নিচে পড়ে গেলে তার আসল রূপ বেরিয়ে পড়ে। চিতাবাঘ তখন ঝুড়ি থেকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে দৌড়ে পালায়।

একসময় সকাল হয়। মেয়েরা গাছ থেকে নেমে আসে। তারপর দরজার সিঁড়ির সামনে বসে দুই মেয়ে কঁাদতে থাকে। তখন একজন সুই-বিক্রেতা এসে জানতে চায়, তারা কঁাদছে কেন?’

‘একটা চিতাবাঘ আমার মা এবং ভাইকে খেয়ে ফেলেছে।’ মেয়েরা বলল। ‘সে এখন চলে গেছে কিন্তু আমরা জানি সে আবার ফিরে এসে আমাদের খেয়ে ফেলবে।’

তখন সুই-বিক্রেতা তাদের কিছু সুই দিল এবং বলল, ‘এই সুইগুলো চেয়ারের গদিতে সুচালো মাথাটা ওপরে দিয়ে গেঁথে রাখবে।’

মেয়েরা তাকে ধন্যবাদ দিয়ে আবার কঁাদতে লাগল।

কিছুক্ষণ পর আরেকজন লোক এলো। তিনি বিছা ধরেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কঁাদছো কেন?’

‘একটা চিতাবাঘ আমার মা এবং ভাইকে খেয়ে ফেলেছে।’ মেয়েরা বলল। ‘সে এখন চলে গেছে কিন্তু আমরা জানি সে আবার এসে আমাদের খেয়ে ফেলবে।’

লোকটি তখন তাদের একটি বিছা দিয়ে বলল, ‘রান্নাঘরে চুলোর পেছনে এটা রেখে দেবে।’

মেয়েরা তাকে ধন্যবাদ দিল এবং কঁাদতে শুরু করল।

তারপর একজন ডিম-বিক্রেতা এসে তাদের কান্নার কারণ জানতে চাইলেন।

তারা বলল, ‘একটা চিতাবাঘ আমার মা এবং ভাইকে খেয়ে ফেলেছে। সে এখন চলে গেছে কিন্তু আমরা জানি সে আবার এসে আমাদের খেয়ে ফেলবে।’

তখন তিনি তাদের একটি ডিম দিয়ে বললেন, ‘এটি চুলোর ছাইয়ের তলায় রেখে দেবে।’

মেয়েরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার কঁাদতে শুরু করল।

এরপর একজন কচ্ছপ বিক্রেতা এসে তাদের কাছে কান্নার কারণ জানতে চাইলে তারা পুরো ঘটনা খুলে বলল। তখন কচ্ছপ বিক্রেতা তাদের একটি কচ্ছপ দিয়ে বলল, ‘এটি উঠোনে একটি পানির পাত্রে রেখে দিও।’

এরপর যে ব্যক্তি এলো, সে কাঠের মুগুর বিক্রি করে। সে তাদের কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করল। তখন তারা তাদের সম্পূণর্ ঘটনা বলল। তখন সে তাদের দুটো কাঠের মুগুর দিল এবং বলল, ‘এ দুটো রাস্তার দরজার ওপরে বেঁধে রাখবে।’

মেয়েরা তাকে ধন্যবাদ জানালো এবং যে যা করতে বলেছে তারা ঠিকমতো সব করে রাখল।

সন্ধ্যা নামতেই চিতাবাঘ বাড়ি ফিরে এলো। এসেই ঘরের চেয়ারে গিয়ে বসল। বসতেই গদিতে গেঁথে রাখা সুইগুলো তার শরীরে গিয়ে ফুটল। সে দৌড়ে এলো রান্নাঘরে। কিসের খেঁাচা লেগেছে তা আগুনের আলোয় দেখার জন্য। রান্নাঘরে এসে আগুন জ্বালাতে গেলে বিছা তার হাত কামড়ে ধরল। এখানে শেষ নয়। যখন আগুনে জ্বলে উঠল, ডিম ফেটে তার চোখে এসে লাগল। অবস্থা এমন হলো চিতাবাঘ ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছিল না। দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখে উঠোনে একটি পানির পাত্র রাখা। পানি ঠাÐা কিনা দেখার জন্য যখন পানির পাত্রে হাত ডুবালো তখন কচ্ছপ কামড়ে ধরল তাকে। কচ্ছপের কামড়ের ব্যথায় সে আরও জোরে দৌড়াতে লাগল। যখন রাস্তার দরজা দিয়ে বেরুতে যাবে তখন কাঠের মুগুর এসে পড়ল তার মাথায় আর সঙ্গে সঙ্গে সে মারা গেল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22336 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1