শীতের সকাল। চারদিকে ভীষণ কুয়াশা। নতুন প্রজাপতির খেঁাজে এসেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। একটু পরেই কুয়াশার চাদর কেটে গিয়ে সূয্যিমামা হেসে উঠলেন। চারদিক নরম রোদে ঝলমল করে উঠল। এমন পরিবেশ প্রজাপতি পযের্বক্ষণের জন্য বেশ উপযুক্ত। সামনের ঝোপটিতে নাম না জানা কি একটা ফুল ফুটেছে হালকা বেগুনি রঙের। ছোট ছোট ফুল। তাতে হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা প্রজাপতি এসে বসল। ধূসর খয়েরি রঙের প্রজাপতি, কমলা পটি। দুটো লেজ। আরে! এটা তো টংসা প্রজাপতি! লাইসিনিডি পরিবারভুক্ত এ প্রজাপতিটির ইংরেজি নাম কমন টিট (ঈড়সসড়হ ঞরঃ) আর বৈজ্ঞানিক নাম ঐুঢ়ড়ষুপধবহধ বৎুষঁং (এড়ফধৎঃ). ডানার বিস্তার মাত্র ৩২-৩৬ মিলিমিটার। এদের নিচের পিঠ ধূসর খয়েরি। ডানার খেঁাপ শেষ হয়েছে গায়ে গায়ে সমান্তরাল আর সমান এক জোড়া রেখায়। ডানার অঁাচলে একটি সরু কমলা পটি, তাতে দুই পাশ থেকে সরু সাদার বেড়া দেয়া। সামনের ডানার পটি সুগঠিত ও অবিচ্ছিন্ন। পিছনের ডানায় ভাঙা ভাঙা, সরে যাওয়া কতকগুলো খÐ রয়েছে। দুটি ‘চোখ’ চিহ্ন রয়েছে। ওপরের চোখটি কমলায় ঘেরা কালো রঙের। নিচের চোখটিও কালো, তবে কমলা ছোপ নেই, সরু সাদার বেড়া ভেতর দিকে। ওপর-পিঠ গাঢ় খয়েরি বা কালচে খয়েরি। পুরুষ প্রজাপতিটির এই খয়েরি রং ছাপিয়ে ওঠে গুঁড়ো নীল-ঘষা ঔজ্জ্বল্য। রংটি কতটা উজ্জ্বল দেখাবে তা নিভর্র করে কোন দিক থেকে আলো আসছে তার ওপর। ডানার পাড়ে কোনো নীল রং দেখা যায় না। শীষের্র দিকে এই কালচে খয়েরি পাড় কিছুটা চওড়া হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া সামনের ডানায় মাঝ-অঁাচলে, খেঁাপটা ছাড়িয়ে ঠিক বাইরে ও খানিকটা নিচের দিকে কিছুটা অংশে কোনো নীল নেই। স্ত্রী প্রজাপতির ওপরের পিঠে নীল রং থাকে না। বন্ধুরা, এবারে এসো এ প্রজাপতির স্বভাব সম্পকের্ কিছু তথ্য জেনে নিই। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুলাই এবং সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ডিসেম্বর পযর্ন্ত এ প্রজাপতিটি দেখতে পাওয়া যায়। পুরুষ প্রজাপতিদের ভেজা মাটির কাছাকাছি বেশি দেখা যায়, স্ত্রী প্রজাপতিটি কদাচিৎ চোখে পড়ে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের সিকিম থেকে শুরু করে অরুণাচল প্রদেশ ও আন্দামান পযর্ন্ত এবং নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে টংসা প্রজাপতি দেখা যায়।