বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাখির ছানা

আরিফ আনজুম
  ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

প্রতিদিনের থেকে আজ আলাদা, ঘুম একটু ভোরেই ভেঙে গেল। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। বাড়ির পাশে আমগাছের পাতা থেকে জল গড়িয়ে পড়ার শব্দ শোনার চেষ্টা করছি, টিপ টিপ টিপ, অবিরাম শিশির পড়ার কী মধুর শব্দ। সেই সঙ্গে পাখির ছানাগুলোও কেন যেন কিচিরমিচির আওয়াজ করছে। কিছুদিন আগে আমাদের আমগাছে দুটি পাখি বাসা তৈরি করেছে, তাতে ডিম পেড়েছে। দাদুকে পাখিটির নাম জিজ্ঞাসা করায় দাদু বলেছে, ওই দুটো শালিক পাখি। এখন বুঝি ডিম থেকে বাচ্চাগুলো ফুটেছে, আর বৃষ্টির মতো কুয়াশায় বেচারা ভিজে যাচ্ছে। তাই অমন কান্না করছে। তাদের কিচিরমিচিরে কেমন যেন একটা বিষণœতা, নাকি মা রাতে বাসায় ফেরেনি? এত কান্না করছে কেন?

বাইরে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো দক্ষিণের দমকা বাতাস, মাঝেমধ্যে রোদ আলোর ঝলকানি, দমকা বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার বেগও বেড়েছে অনেকটা। সেই সঙ্গে বাচ্ছাগুলোর কিচিরমিচিরও বেড়েছে আরও দ্বিগুণ। আমি খুব মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম তাদের মায়ের কণ্ঠ। কিন্তু একবারও পেলাম না। তাহলে নিশ্চয়ই মা শালিক বাসায় ফিরতে পারেনি কোন কারণে। বাচ্চাগুলো কুয়াশা ও দমকা হাওয়ার কারণে ভয়ে হয়তো মা মা বলে চিৎকার করছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন একটু জোরে দমকা বাতাস হলেই ভয় পেয়ে মা মা বলে চিৎকার করতাম বা মায়ের কাছে ছুটে গিয়ে মায়ের কোলে মুখ লুকাতাম। বাচ্চাগুলোও হয়তো তেমনটিই করছে ভয়ে মায়ের সান্নিধ্য চাইছে।

আমি আর বিছানায় শুয়ে থাকতে পারলাম না। মাথার কাছের জানালাটা আলতো করে খুললাম। ছন্দবদ্ধ শিশিরের মন মাতানো শব্দ আর দমকা হাওয়ার ঝঁাপটা চোখে মুখে এসে পড়ল। ভোরের অল্প আলোয় দেখলাম আমগাছের যে ডালটা আমার রুমের জানালার দিকে ঝুঁকে আছে, সেই ডালেই শালিক পাখিটির বাসাটা। বাসায় তিনটে বাচ্চা রয়েছে। ঝিরিঝিরি শিশির আর দমকা বাতাসে বাসার কিছু খড়-কুটো ঝরে পড়েছে। বাসার কিছু অংশ ভেঙে গেছে প্রায়। তিনটে বাচ্চা বাসার এক কোণে জড়সড় হয়ে যেন একে অন্যকে ভয়ে জড়িয়ে ধরে রয়েছে। আমি জানালা দিয়ে ডান হাতটা তাদের দিকে বাড়িয়ে মুখ দিয়ে কুহু কুহু শব্দ করতে লাগলাম। তাদের ভয়ে আতর্নাদ অনেকটা কমে গেল। শালিক বাচ্চাগুলো আমার দিকে চুপচাপ আনমনে খানিক সময় তাকিয়ে থাকল। শীতের প্রকট আক্রমণী শিশিরের জলে আমার হাত আর কাপড় ভিজে যাচ্ছিল। তবুও আমি ওদের ভয়কে পরাজিত করার চেষ্টা করছিলাম। নিজেকে মনে মনে ওদের মা ভেবে নিচ্ছিলাম। ‘ভয় নেই বাবা, ভয় নেই- এই তো আমি আছি’Ñ বারবার এটাই বলতে ইচ্ছে করছিল। যতক্ষণ বৃষ্টি হচ্ছিল আমি তাদের ওই ভাবে সাহস দিয়ে গেলাম। তাদের চিৎকারও অনেকটা কমিয়ে গিয়েছিল।

কিছুক্ষণ পর কুয়াশা পড়া বন্ধ হয়ে গেল, পুব আকাশে সূয্যি মামা মেঘের আড়াল থেকে দঁাত কেলিয়ে বেরিয়ে এলো। দেখলাম কোথায় থেকে যেন মা শালিক পাখিটাও ভেজা শরীরে উড়ে এলো। গাছের চারদিকে কয়েকবার পাক খেয়ে বাসার পাশের ডালে এসে বসল। যাক, বাচ্চাদের আর ভয় নেই। নিজের কাপড় পুরো ভিজে গিয়েছে। তাতে আমারও কোনো দুঃখ নেই। কিছুক্ষণ এর জন্য মা হওয়ার আনন্দটা খুব অদ্ভুত, অবণর্নীয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32288 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1