পরী মানেই অপূর্ব সুন্দর। পরী তো পরীর মতোই। কিন্তু পরীর চেয়েও বেশি সুন্দর ফুলপরী। ফুলের মতো সুন্দর বলেই এর নাম ফুলপরী। ফুলপরী যেমন সুন্দর তেমনি মনটাও অসম্ভব ভালো। সব সময় শুধু ভালোটাই ভাবে, কেউ যদি কখনো কোনো সমস্যায় পড়ে ফুলপরী দৌড়ে গিয়ে তাকে সমস্যা থেকে উদ্ধারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফুলপরী সারাক্ষণ ফুলের বনেই থাকে। ফুল বাগানেই ফুলপরীর নিত্য আবাস। ফুলপরী কিন্তু কাউকে সহজে দেখা দেয় না। কারণ ফুলপরীকে একবার কেউ দেখলে, তা আর সহজে ভুলতে পারে না। ভুলবেও বা কেমনে, ফুলপরীর এমনই চোখ ধাঁধানো রূপ। ভুলতে চাইলেও ভোলা যায় না। ফুলপরীকে দেখতে কত জনের ইচ্ছে তৈরি হয়, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ইচ্ছা তৈরি হলেই কী ফুলপরী দেখা দিবে? তা নয়। ফুলপরী জানে ও বোঝে কার মনটা কেমন সুন্দর ও পবিত্র। ফুলপরী চায়, শুধুমাত্র সুন্দর মনের বন্ধুরাই তার সৌন্দর্য অবলোকন করুক। যেই বন্ধুদের মন ভালো না, সব সময় মন্দ কিছু নিয়ে ভাবে বা করে তাদের ভুলেও পছন্দ নয় ফুলপরীর। ফুলপরীর যেই বাগানে সব সময় আনাগোনা, ওই বাগানের কাছেই স্নিগ্ধাদের বাসা। স্নিগ্ধা প্রতিদিন বিকেল হলে ফুলবাগানে ঘুরতে যায়। বাগানে ঘুরতে গেলেও স্নিগ্ধার কখনো ফুলপরীকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। সৌভাগ্য বলতে স্নিগ্ধাও জানে না, বাগানে যে ফুলপরী আছে। স্নিগ্ধা শুধু বাগানের নানা রঙের ফুলগুলোই দেখে সৌন্দর্য উপলব্ধি করে। স্নিগ্ধা ফুলপরীকে না দেখলেও ফুলপরী ঠিকই স্নিগ্ধাকে দেখে। স্নিগ্ধা বাগানে গেলে কোথায় কী করে সবই ফুলপরী দেখতে পায়। বাগানের ফুলে ফুলে ফড়িং ছানারা আনন্দে ঘুরে বেড়ায়। এই ফুল ওই ফুলে ঘুরতে ঘুরতে কখন দিন চলে যায়, ফড়িং ছানারাও বুঝতে পারে না। স্নিগ্ধা একদিন খুশির ছলে একটি ফড়িং ছানাকে ধরে মজা করে খেলা করছে। তখন ফড়িং ছানার খুবই কষ্ট হচ্ছে। অন্য ফড়িং ছানারা ও বন্ধুর জন্য কষ্ট অনুভব করছে। ফড়িং ছানাদের কিন্তু ফুলপরীর সঙ্গে ভালো ভাব-সাব। একটি ফড়িং ছানাকে আঁটকে রেখে খেলা করা মোটেই ভালো কাজ নয়। স্নিগ্ধা এটা নিয়ে খুশি হলেও ফড়িং ছানার জন্য খুবই কষ্টের। ফুলপরী তখন অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। তাই জানে না এটা ফুলপরী। তখন বন্ধুর কষ্টের কথাটা অন্য একটি ফড়িং ছানা গিয়ে ফুলপরীকে জানালো। ফুলপরী দ্রম্নত এসে হাজির যথা স্থানে। দেখছে স্নিগ্ধা ফড়িং ছানাকে হাতে নিয়ে খেলা করছে। আর ফড়িং ছানাটি খুব কষ্ট পাচ্ছে। স্নিগ্ধার এত দিনের সুনামটা আজকের একটা ভুল, ফুলপরীর কাছে বেশ অপছন্দ হলো। ফুলপরী এবার স্নিগ্ধার সামনে ভিন্ন বেশে হাজির। ফুলপরী যে একটা পরী, বা এই বাগানেই থাকে এটা স্নিগ্ধা জানে না। ফুলপরীকে দেখে স্নিগ্ধা প্রথমে চমকে উঠল। স্নিগ্ধা স্থির হয়ে জিগ্যেস করে, তুমি কে? কোথা থেকে এসেছো? তোমাকে তো আগে কখনো দেখিনি! তুমি কী আমাকে কিছু বলবে? স্নিগ্ধার উত্তরে ফুলপরী বলে, আমি এই বাগানেই থাকি। তোমাকে আমি রোজই দেখি, তুমি আমাকে দেখতে পাওনা। অন্য কথা পরে বলব আগে তোমার হাত থেকে ফড়িং ছানাকে ছেড়ে দাও। স্নিগ্ধা বলে, কেন? ফুলপরী বলে, তুমি যেমন এই বাগানের সৌন্দর্য দেখতে এসেছ, ওরাও এই বাগানের সুন্দর, এবং বাগানেই থাকে। ওদেরও এই বাগানে স্বাধীনভাবে ঘুরে-ফিরে খেলা করার অধিকার আছে। তুমি যে ওকে ধরে রাখছ জান, ওর কত কষ্ট হচ্ছে? কই আমি তো ওকে কোনো কষ্ট দিচ্ছি না। তুমি ভাবছ কোনো কষ্ট দিচ্ছ না, কিন্তু ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে, তা আমি জানি। এবার স্নিগ্ধা আর কোনো তর্কে গেলেন না। ছেড়ে দিল ফড়িং ছানাকে। ছাড়া পেয়ে ফড়িং ছানা মহানন্দে অন্য ফড়িং ছানাদের সঙ্গে মিলিত হলো এবং কৃতজ্ঞতা জানালো ফুলপরীকে। ফুলপরী এবার নিজের রূপ ধারণ করল। স্নিগ্ধা তো দেখে হতবাক! কী করে দ্রম্নত নিজের রূপ পরিবর্তন করে ফেললেন! ফুলপরী বলল, আমি ফুলপরী। আমি এই বাগানেই থাকি। আমি জানি তোমার মনটা ভালো ও সুন্দর। তাই আমি তোমাকে দেখা দিলাম এবং তুমি আমার কথা শুনেছ। জান, স্নিগ্ধা তুমি মনে করছ একটা ফড়িং ছানা ধরে তুমি অনেক আনন্দ পাও? তুমি কী একবারও ভাবছ? যখন ধরো তোমরা ভাই-বোন মিলে কোথাও খেলা করছ, তখন তোমার সামনে থেকে যদি তোমার ভাইকে কেউ ধরে নিয়ে আঁটকিয়ে রাখে তোমার কী রকম লাগবে? আর তোমার ভাইও তখন কত কষ্ট পাবে? স্নিগ্ধা বলল, ঠিকই তো, তখন আমার খুব কষ্ট ও খারাপ লাগবে। ভাইয়ারও অনেক কষ্ট হবে। ঠিক আছে আমি আর কোনোদিন এমন ভুল করব না। স্নিগ্ধা নিজের অপরাধ বোধ বুঝতে পারায় ফুলপরীও খুশি। ফুলপরী বলল, তুমি আজ থেকে আমার বন্ধু। বাগানে এলে তুমি আমাকে দেখতে পাবে। আমাকে যে তুমি দেখেছ আর তোমার বন্ধু হলাম, একথা সবাইকে বলার প্রয়োজন নেই। কেননা আমি সবাইকে দেখা দিই না। যারাই আমার মতো ভালো, মন্দ কাজ করে না, মন দিয়ে লেখাপড়া করে, এবং মা-বাবাও বড়দের কথা সবসময় শোনে শুধু তাদেরই আমার পছন্দ। এর থেকে বিচু্যত হলে, দেখবে তুমি আর আমাকে দেখতে পাবে না। বন্ধু তালিকা থেকে আপনা-আপনিই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। স্নিগ্ধা প্রতিজ্ঞা করে বলে, না ফুলপরী আমি তোমার উপদেশগুলো মনে রাখবো। তুমিও আমার বন্ধু থাকবে। তোমাকে দেখতে পেয়ে আমার খুবই ভালো লাগছে এবং সৌভাগ্যবান ভাবছি নিজেকে। তবু বলি, আমার যদি কোনো ভুল হয়, তুমি আমাকে শুধরে দিবে এমন করে দেখা দিয়ে। ঠিক আছে বন্ধু, ভালো থেকো। এই বলে অদৃশ্য হয়ে গেল ফুলপরী। স্নিগ্ধা পা বাড়ায় বাসার দিকে।