রাজু ও তার বন্ধু সিয়াম এখন ক্লাস ফাইভে পড়ে। দুজনেই মেধাবী। প্রতিদিন আগে এসে ফার্স্ট বেঞ্চে এক সঙ্গে বসে দুজন। স্কুলের শিক্ষকরা ওদের নাম দিয়েছেন মানিকজোড়।
শিশুকাল থেকেই রাজু সব শিশুর থেকে একটু আলাদা। কখনো কেউ ওকে চিৎকার করে কাঁদতে দেখেনি। তার মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকত। তাই দেখে মুরুব্বিরা বলতেন এই ছেলের মন সাদা হবে।
হঠাৎ একটি দুঃসংবাদ শিশু রাজুর মনকে নাড়া দিল। সিয়ামের বাবা মারা গেছে। তারপর থেকে সিয়ামের মুখে কখনো হাসি দেখেনি রাজু।
কেন যেন রাজু তার টিফিন কখনো একা খেতে পারে না। সে সিয়ামের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খায়।
সিয়ামকে সে পেন্সিল ধার দেয়। রাজুর মনে হয় যেন সম্ভব হলে সে সিয়ামের সমস্ত কষ্ট দূর করে দিত।
কিছুদিন ধরে রাজুর মাটির ব্যাংকে টাকা জমানোর আগ্রহটা বেড়ে গেছে। বাবা-মা এতে খুব খুশি। প্রতিদিন বাবা বাড়ি ফিরলেই সে কয়েন ও নোট নিয়ে মাটির ব্যাংকে ফেলে। বাবার অজান্তে সে টাকার হিসেবটা তার পুরনো ডায়রিতে লিখে রাখে।
হঠাৎ একদিন রাজু তার বাবার সঙ্গে ঘুমানোর ইচ্ছাপোষণ করল। বাবার গলা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল- বাবা আমাকে এবার বৈশাখী মেলায় নিয়ে যাবে না?
হঁ্যা নিয়ে যাব, বাবা বললেন।
সিয়ামের তো বাবা নেই। ওকে আমাদের সঙ্গে নেবে বাবা? আমি ওর জন্য মাটির ব্যাংকে ৬২৫ টাকা জমিয়েছি। আমি যা কিনব ওকেও তাই কিনে দেবো।
তুমি কেমন করে জানো ব্যাংকে ৬২৫ টাকা জমছে? বাবার প্রশ্ন।
আমি ডায়রিতে হিসেব রেখেছি।
রাজুর কথা শুনে বাবা অবাক হয়ে গেলেন।
ঠিক আছে ওর মায়ের সঙ্গে আগে কথা বলি তারপর। বৈশাখী মেলায় রাজু যা যা কিনল সিয়ামকেও তাই দেয়া হলো।
পহেলা বৈশাখের মেলা থেকে ফিরে এসে রাজুর বাবার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল এই ভেবে যে তার ছেলেটা সত্যি মানুষের মতো মানুষ হচ্ছে। আর রাজুর বাবার চোখ থেকে যেটুকু নোনাজল গড়িয়ে পড়ল ওটা ছিল আনন্দ অশ্রম্ন।
মাটির ব্যাংকটি যেমন ছিল ঠিক তেমনই আছে।
রাজুর জন্মদিনের উপহার।