প্রায়ই রাতে মুমু আমাকে জিজ্ঞেস করে, খালামণি মা কোথায় গিয়েছে? এতদিন হয়ে গেল মা আসে না কেন?
আমি একটু ভেবে মুমুকে বুকের কাছে টেনে এনে, তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলি,
তোমার মা অ্তন্তেক্তদূরে গিয়েছে।
কেন খালামণি?
তোমার জন্য পঙ্খিরাজ ঘোড়া আনতে গিয়েছে। এই ঘোড়া দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খুব দামিও।
আমি কি মাকে বলেছি পঙ্খিরাজ ঘোড়া আমার চাই?
তুমি তো বলনি মুমুসোনা।
তাহলে মা কেন গেল একা একা? মার ভয় করেনি? মা কেমন করে জানলো সেখানে পঙ্খিরাজ ঘোড়া আছে? আচ্ছা খালামণি সেখানে কি শুধু একটাই ঘোড়া না অনেকগুলো?
তোমার মা নিজেই শখ করেছে তার মেয়ে হলে, সে যখন খেলতে শিখবে তখন তাকে পঙ্খিরাজ ঘোড়া উপহার দিয়ে চমকে দেবে।
আমি কীভাবে খেলব এই ঘোড়া দিয়ে?
তুমি পরীর মতো করে সেজে এই ঘোড়ার পিঠে চড়ে টগবগ টগবগ করে রাজকুমারের বাড়ি যাবে।
তারপর দুজন মিলে খেলা করবে, গল্প করবে। কথা শুনে মুমু যেন ভাবনায় পড়ে যায়। বলে, না, আমি মাকে নিয়েই যাবো। মা ছাড়া অন্য কারও সঙ্গেই আমি খেলব না।
আচ্ছা আচ্ছা, তুমি যা যা চাইবে, যেমন করে চাইবে সব তেমনি হবে। মুমু সময়মতো খায় না, ঘুমায় না। মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে, বলতে বলতে, কাঁদতে কাঁদতে দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে মন ভুলানো মিথ্যে কথায় আর কতদিন রাখতে পারব মুমুকে। এসব ভেবে আমরা সবাই বেশ মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন।
এই ঘোড়া নিয়ে আসতে মার আর কতদিন সময় লাগতে পারে?
হুম...তা তো বলতে পারি না মুমুপাখি। আমি তো কখনো যাইনি সেখানে। তবে তোমার মা বলেছে, বহুপথ হেঁটে যেতে হয়।
মুমু শোয়া থেকে বিছানায় উঠে বসে গালে হাত দিয়ে,
তুমি চেনো সেই জায়গা? আব্বু চেনে?
আমরা কেউই সেই জায়গা চিনি না। তোমার আব্বু কাল বাড়ি এলে জিজ্ঞেস করব চেনে কিনা।
আব্বু যদি চেনে তাহলে বলব আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যেতে। আচ্ছা এবার ঘুমিয়ে পড়ো।
পরের দিন মুমুর বাবা বাড়ি এলে মুমু খুব বায়না ধরে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মুমুর বাবা সান্ত্বনা দিয়ে বলে আমি তো চিনি না সেই জায়গা। মুমু চেঁচিয়ে ওঠে বলে না...না...না...আমাকে নিয়ে চলো আমি হাঁটতে হাঁটতে মাকে পেয়ে যাবো। আর অপেক্ষা করতে পারবো না। মা খুব পচা। এমন করে আমাকে রেখে যেতে পারলো? মাকে আর কক্ষনো কোথাও যেতে দেবো না আমি। মা সারাক্ষণ আমার সাথেই থাকবে। একসাথে খেলা করব, খাবো, দোলনায় দুলবো, ঘুমাবো, টিভি দেখবো, গল্প করবো। পঙ্খিরাজ ঘোড়া চাই না আমার।
মুমুর বাবা মন খারাপ করে গালে হাত দিয়ে বেতের চেয়ারে বসে আছে। আমি মুমুকে কোলে বসিয়ে বোঝাতে লাগলাম, শোনো পঙ্খিরাজ ঘোড়া প্রজাপতির পাখার মতো অনেক রঙের হয়ে থাকে। আবার সেই পাখায় জাদু আছে। তুমি ঘোড়ার পিঠে চড়ে চোখ বন্ধ করে যা যা চাইবে, স্তঅ্তব্ততোমার সামনে চলে আসবে। যাই বলি না কেন ঘুরে-ফিরে সে মায়ের কথাই বলে। কিছুতেই আমরা তাকে বলতে পারছি না, তার জন্মের একবছরের মাথায় তার মা মারা গিয়েছে। মুমু এবার কাঁদতে লাগল আমি মায়ের কাছে যাবো...বলে বলে। মুমুর চোখের পানি দেখে তার বাবা ও আমিও কাঁদতে লাগলাম।