বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
গ ল্প

শুভর ভালো কাজ

রুহুল আমিন রাকিব
  ২৫ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

শুভ এই শুভ। আরে এমন করে বসে আছো কেন? চল উত্তরের মাঠে যাই। মাঠে বড় ভাইদের ফুটবল খেলা চলছে, আজ ফাইনাল খেলা। রাফির কথায় কান দেয় না শুভ। পুকুর পাড়ে আমগাছের নিচে আনমনে বসে আছে শুভ।

রাফি আরও দুই-একবার ডাক দিল। অবশেষে শুভ বলল, রাফি আজ আমার মনটা ভীষণ খারাপ। কেন যেন কিছু ভালো লাগছে না।

আমি খেলা দেখতে যাব না। আজ তুমি যাও, আমাকে একটু একাকী থাকতে দাও।

পড়ন্ত বিকেল বেলা, পুকুর জলে কত রকম মাছ খেলা করছে! পানির ওপর সঁাতার কাটছে নানা রঙের হঁাস। তবে সেদিকে একটুও খেয়াল নেই শুভর।

বার বার মনে পড়ছে স্কুল গেটের সামনে দেখা সেই দাদুর কথা।

প্রায় ছয়-মাস ধরে, ওদের স্কুলের সামনে রোজ ভিক্ষা করতে বসে লোকটা।

কত হবে লোকটার বয়স?

সঠিক মনে করতে পারছে না। তবে লোকটা যে শুভর দাদুর সম-বয়সী হবে এটা ঠিক ধরতে পেরেছে।

লোকটাকে দেখে মনে হয় খুব-ই ভালো মানুষ।

নিজের দাদুর মতো দেখতে বলেই লোকটাকে দাদু বলে ডাকে শুভ।

লোকটার কথা মনে পড়তে অঁাতকে উঠল শুভ। কত কষ্ট-ই না রোজ করে।

লোকটার একটি পা নেই।

অনেক কষ্ট করে লাঠিতে ভর দিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে বেড়ায়।

সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে, মানুষের কাছে হাত পেতে যে সাহায্য পায়। দিন শেষে বাড়িতে নিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-পরে দিন চলে ওদের পরিবারের।

শুভ, অনেক ছোট্ট মানুষ। সবেমাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে।

তাই ইচ্ছা থাকলেও লোকটাকে সাহায্য করতে পারে না।

আস্তে আস্তে রক্তিম সূযর্ পশ্চিমের আকাশে ঢলে পড়ল। নীড়ে ফিরছে ক্লান্ত পাখিরা। সাদা বক ডানা ঝাপটে উড়ে গেল পুকুরঘাট থেকে। মসজিদ থেকে ভেসে এলো মাগরিবের আজান।

শুভ এবার উঠে দঁাড়াল। আস্তে আস্তে পা-বাড়িয়ে এগিয়ে চললো বাড়ির দিকে। কিছুতেই পড়ায় মন বসছে না। চোখের সামনে বারবার ভাসছে সেই লোকটার করুণ চাহনি।

আহা! কী মায়াভরা মুখ দাদুটার।

সেদিন কথা বলার এক ফঁাকে দাদু শুভকে বলছে, তার জীবনকাহিনী। অভাবের সংসারে সুখ ফিরাতে, বাড়িতে তিন মেয়ে আর স্ত্রীকে রেখে, কাজের খেঁাজে ঢাকা শহরে এসেছিল।

তবে অভাব যার নিত্যসঙ্গী, তার কপালে কী আর সুখ আছে!

হঠাৎ একদিন সড়ক দুঘর্টনায় ডান পায়ে প্রচÐ রকম আঘাত পায়।

এরপর সুখের সমাপ্তি ঘটে তার জীবনের। শুধু কি তার জীবনের? ডান পায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে। তার সয়-সম্বল বলতে যে কয়েক শতক বাড়ি ভিটার জমি ছিল,তাও বিক্রি করে দিয়েছে। তবুও যদি পা, ভালো হতো মনকে সান্ত¡না দিতে পারত। তবে নাহ্, কপালে যার দুঃখ লেখা আছে, এত সহজে কি আর তার দুঃখ শেষ হয়! অনেক চিকিৎসা করার পরেও কিছুতেই কিছু হলো না। অবশেষে একদিন ডাক্তার বলল, কেটে ফেলতে হবে পুরো ডান পাটাই।

আর সেদিন, ডান পা হারিয়ে কোনো রকম কমর্ করতে না পারার কারণে আজ শত কষ্ট করে রোজ মানুষের বাড়ি বাড়ি এভাবেই ভিক্ষা করে বেড়ায়।

লোকটা সেদিন আক্ষেপ করে বলছে,

মানুষের কাছে এভাবে হাত পেতে ভিক্ষা করাটা তার কাছে ভালো লাগে না। খুব লজ্জা লাগে নিজের কাছে।

তার খুব ইচ্ছা করে বসে থেকে কোনো ব্যবসা করে চলতে।

তবে তার কাছে ব্যবসা করার মতো কোনো পুঁজি নেই।

যদি তারে কেউ সাহায্য করত তবে সে একটা ছোট মুদি ও চা-পানের দোকান দিয়ে সংসার চালাতো।

লোকটার সেদিনের সেই কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে গেল শুভ। কখন যে পড়ার ঘরে এসেছে ওর বাবা তা টের পায়নি।

শুভর বাবা রুমে ঢুকে কিছুক্ষণ পরে বলল এই যে খোকা তোমার কী হয়েছে?

আজ সারা দিন ধরে দেখছি তোমার মন খারাপ।

বিকেল বেলাও দেখি পুকুর পাড়ে একাকী বসে আছো।

বলতো তোমার কী সমস্যা। আমি তোমার বাবা, তোমার কোনো রকম সমস্যা থাকলে তুমি আমাকে খুলে বলতে পারো।

বাবার কথা শুনে, অশ্রæসিক্ত নয়নে, শুভ বাবার পাশে বসে।

ওই দাদুর বিষয়ে সব কথাই খুলে বলল।

আর শেষে বাবার কাছে আবদার করে বসল, কিছু টাকা সাহায্য করলে ওই লোকটা হয়তো একটা দোকান দিতে পারবে। তখন আর মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করতে হবে না। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আর কষ্ট করতে হবে না।

শুভর কথা শুনে, খুব খুশি হলো বাবা।

বুকে জড়িয়ে নিলো!

পরের দিন শুভকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে গিয়ে ওই লোকটার সঙ্গে দেখা করে কথা বলল।

স্কুলের স্যারদের সঙ্গে দেখা করে

কথা বলল।

শুভর বাবা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে শুভর কথাগুলো খুলে বলল।

ছোট্ট শুভর, মানুষের প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে, গবের্ বুক ভরে গেল স্যারদের। শুভর এমন ভালোবাসা স্যারদের অনুপ্রাণিত করল।

শেষে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল, সবার সহযোগিতা নিয়ে ওই লোককে স্কুলের সামনে মুদি ও চায়ের দোকান খুলে দেবে।

অবশেষে এলো সেই দিন।

স্কুলের প্রতি ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রী ও স্যারদের সহযোগিতার টাকা নিয়ে, শুভর বাবা ওই লোকটাকে, একটা মুদি ও চায়ের দোকান খুলে দিল।

শুভ আজ ভীষণ খুশি!

খুশি শুভর বন্ধুরা ও স্যারেরাও।

নতুন দোকান পেয়ে লোকটাও যেন নতুন জীবন ফিরে পেল। ঠেঁাটের কোণে মুচকি হাসি এনে দাদুভাই বলে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল শুভকে।

কয়েক ফেঁাটা অশ্রæও পড়ল চোখের কোণ থেকে। তবে এই অশ্রæ আনন্দের, এই অশ্রæ নতুন করে বেঁচে থাকার জন্য।

ছোট্ট বন্ধুরা, চাইলে তোমরাও পারো, শুভর মতো করে মানুষকে সাহায্য করতে।

স্কুলের সহপাঠীরা মিলে, টিফিনের টাকা বঁাচিয়ে, তোমরাও আজ থেকে শুরু করে দাও ছোট্ট কোনো ভালো কাজ করা।

দেখবে ছোট্ট থেকে শুরু করে, একদিন তোমরাও বদলে দিতে পারবে, তোমাদের স্কুলের সামনে রোজ হাত পেতে থাকা ওই অন্ধ লোকটার জীবন।

ভিক্ষা নয়, তোমাদের আলোয় আলোকিত করবে তার নতুন জীবন।

সফিপুর, গাজীপুর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<4960 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1