বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
শিশুতোষ গল্প

উইপাখি

রকি গৌড়ি
  ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০

রাঙামাটির মাটি ঈষৎ লাল। উইপোকাবাসীর সুযোগ্য পৃথিবী বলা চলে। এমন লালচে পৃথিবীর পেদা তিং তিং পাহাড়দেশে গামারিগাছ তাদের অন্যান্য প্রতিবেশী জংলা গাছের সঙ্গে বসবাস করছে। অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে নিজ নিজ ডালপালা মেলে দিন কাটাচ্ছে পাহাড়দেশে। ওদের ডালপালায় নানা ঢঙের-রঙের পাখি বসে। নানা সৌকর্যে বাসা বাঁধে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওড়াউড়ি করে। নৃ-গোষ্ঠীর নকল করা পাহাড়ি নৃত্য করে। গান গায়। নিজ নিজ ভাষায় পূর্বপুরুষের গল্প করে। কাকেরা কাকশিল্প সভায় হইচই করে। সাপেরা ডালপালায় বেঁকে বেঁকে

হাঁটে। ফিসফিস করে আদিকথা বলে। লতা-পাতায় চরকির মতো পেঁচিয়ে বিশ্রাম নেয়। বনমোরগ কক্‌ কক্‌ করে ডাকাডাকি করে। ডিম পাড়ে। সংসার বাড়ায়। গামারিগাছের অনেক প্রতিবেশী আছে সেগুন, পেয়ারা, বরই, কাঁটা ও জংলা। এদের নিয়ে পাহাড়িগাছ সমাজের দিন চলছে। বেশ ভালোই চলছে। ওরা একে অপরের সঙ্গে মানুষের মতো ঝগড়া করে না। মারামারি করে না। জন্ম থেকে শান্তিবাসিনী। নীরব কিন্তু সবুজময় স্বভাবের। বাতাস ওদের শরীর নেড়ে-চেড়ে ব্যায়াম করিয়ে দেয়। কখনো কখনো ব্যায়াম করাতে গিয়ে দুই একটা ডাল মট মট করে ভাঙে। টুপটাপ আওয়াজে পাতা ছিঁড়ে পড়ে। শাঁ শাঁ শব্দে নরম কণ্ঠে সান্ত্বনা দেয় বাতাস। এভাবে বাতাসের সঙ্গে ব্যায়াম খেলায় বেশ কাটছে তাদের সময়। একদিন সূর্য নিবু নিবু সময়ে দুটো এলিয়েন পোকা একটি গামারিগাছের কাছে এলো। সাদা পিঁপড়ের মতো দেখতে। গায়ের আকার ছোট্ট বরফ কণার তুল্য। গামারিগাছকে বলল, ও ভাই চিনতে পারছো আমাদের? আমরা উই। তেলে ভরা আমাদের শরীর। আমরা পুণ্যপতঙ্গ। বুড়ো হলে পাখা মেলে স্বর্গে যাই। গামারিগাছ এমনটা শুনে হতবাক হয়ে বলল, এঁ্যা তাই নাকি। তোমরা স্বর্গে উড়ে উড়ে যাও! তাহলে তোমাদের আমরা উইপাখি বলে ডাকব।

আচ্ছা উইপাখি বলো তো, আমরা কি করতে পারি তোমাদের জন্য? তোমাদের পুণ্য করে আমরাও একটু পুণ্যি লাভ করি। উইপোকা বলল, গামারি বন্ধু আমাদের তোমার শরীরে একটু জায়গা করে দেবে? আমরা তোমার প্রকান্ড শরীরে একটু ধ্যান-সাধনা করতে চাই। এমনি এমনি নয়। তোমাদের পুণ্যি লাভ করার বিদ্যে শেখাবো। চুপিচুপি গল্প শোনাবো। দেখো আমাদের সৃজন করা গল্প বলে তোমরা সাপ আর পাখিকেও হার মানিয়ে দেবে। গামারি বলল, গল্প! গল্প শুনতে তো খুব ভালোবাসি। বাহ্‌ ভালোই হবে। এতদিন পাখিদের গান। সাপেদের ফিসফিসানি শুনে দিন কাটতো। এখন থেকে উইপাখির গল্প শুনবো। পুণ্যি লাভ করার বিদ্যে শিখবো। ঠিক আছে এসো আমাদের শরীরে প্রবেশ করো। উইপোকারা শরীরে প্রবেশ করল। গাছেদের রস খেয়ে ওরা আরও তেলতেলে হতে লাগল। গামারিগাছের পাশে অল্প মাটির নিচে বাসা তৈরি করল। মানুষ বলে উইয়ের ঢিপি। গামারির রসে-কষে দিনে দিনে ননোপনো হয়ে সংখ্যায় বাড়তে লাগল উইবাসী।

একদিন গামারি উইপাখিকে বলল, উইপাখি ওওও উইপাখি গল্প শোনাও। উইপাখি বলল, এসো তোমাদের আজ মা মাকড়সার গল্প শোনাই। মা মাকড়সার আত্মত্যাগের গল্প জানো। মা মাকড়সা নিজের বাচ্চাগুলোকে শক্ত করে বুকে আগলে রাখে। সব বিপদ থেকে রক্ষা করে। বাচ্চাদের কিছুতেই বুক ছাড়া করে না।

মায়ের বুকের সঙ্গে লেপটে থাকা বাচ্চাগুলোর খিদে পেলে, কুটি কুটি দাঁত দিয়ে মায়ের বুক ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়। এভাবে বাচ্চারা বেড়ে ওঠে। একসময় মায়ের শরীরের মাংস শেষ হয়। হাড়গোড় বাকি থাকা মা মাকড়সা শুকিয়ে মারা যায়। শুকনো ঘাসের মতো উড়ে যায় মায়ের শরীর। ডিমে থাকা বাচ্চারা বের হয়। ঘোরে-ফেরে, লতা-পাতাজুড়ে। পাতা থেকে পাতায় বাতাসের ওপর লালা দিয়ে তৈরি করে তাদের জালপ্যালেস। মায়ের আত্মত্যাগের কথা কেমনে রাখে। গামারিগাছ বলল আহ্‌! কেমন তরো মা। যার হয়না তুলনা। আচ্ছা উইপাখি কদিন ধরে আমার শরীরটা কেমন কেমন লাগছে। মনে হচ্ছে বাতাসে মড়াত করে কোমর ভেঙে পড়বে। পুরো শরীরটা প্রজাপতির মতো হালকা লাগছে ভেতরটা দিনে দিনে ক্ষয়ে যাচ্ছে যেন। কিন্তু আমরা তো গাছ। আমরা ডিম পাড়ি না। মাকড়সার মতো বুকে বাচ্চাদের লালন করি না। তবু যেন মনে হচ্ছে মা মাকড়সার মতোই শুকিয়ে যাচ্ছি। দেখো পাতা ডালপালা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। বোধ হয় মরতেও আর বেশি দেরি নেই। উইপাখি তক্ষণি বলল, মরতে তো একদিন হবে। সে আজ বা কাল। আত্মত্যাগের জ্ঞান মাথায় রেখো। গামারি বলল, সে না হয় রাখবো। তবে মরার আগে উইপাখি তোমাদের স্বর্গে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে চাই। উইপাখি হেসে বলল, তোমাদের অন্তিম সময়ের আগেই আমাদের স্বর্গে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে পাবে। কিছু দিন পর সূর্য যখন ঘুমাতে যাবে তার একটু আগে। উইপাখিরা উই ঢিপি থেকে একে একে ডানা মেলছে। উড়াল উৎসব যেন আজ। পেস্ননের মতো কেউ কিছুদূর চড়ে গিয়ে উড়াল দিচ্ছে। উইপাখিদের উড়তে দেখে মৃত প্রায় গামারিগাছটা বলল, আমাদের মেরে স্বর্গে উড়ে যাচ্ছ। যাও। ওই দেখো কত পাখি রাক্ষসরা তোমাদের খেতে অপেক্ষা করছে। হতচকিত হওয়ার কিছু নেই আত্মত্যাগের জ্ঞান তোমাদের আছে বৈকি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50916 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1