শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেমাইয়ের সৈন্য-সামন্ত

মিদহাদ আহমদ
  ০৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

স কাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রাইসা বায়না ধরল আজ সে সেমাই রান্না করবে। রাইসার কথা শুনে রাইসার আম্মু তো অবাক। মেয়েটা বলে কি। এই সকাল সকাল আবার সেমাইয়ের ভূত মাথায় চাপলো কেন?

রাইসা বলল, কি মা। আমি সেমাই রান্না করি?

মা বললেন, এখন না। এখন স্কুলে যাও। স্কুল থেকে এসে বিকালে সেমাই রান্না করবে। কেমন?

রাইসা বলল, আচ্ছা আম্মু ঠিক আছে।

রাইসা। আব্বু আম্মুর একমাত্র মেয়ে। ক্লাস থ্রিতে পড়ে। পড়াশোনায়ও ভালো। তবে সবসময় একটা আবদার ওর থাকবেই। যা ইচ্ছা হবে তাই সে করবে। সব কাজ ঠিকমতো করে বলে আব্বু আম্মুও রাইসার কাজে খুব একটা বাধা দেন না।

বিকালে স্কুল থেকে ফিরে সেই একই কথা। রাইসার আম্মু তখন রান্নাঘরে ছিলেন। রাইসা তার আম্মুকে ডেকে বলে,

আম্মু আম্মু, তুমি বের হয়ে যাও রান্নাঘর থেকে। আমি সেমাই রান্না করব।

রাইসার কথা শুনে রাইসার আম্মু বললেন, আরে মেয়েটা, আগে খাবারটা খেয়ে নে। সারা দিন ক্লান্তি শেষে এই মাত্র ফিরেছিস। এখনই সেমাই রান্না না। বিকালে করবি।

রাইসা বলল, না।

রাইসার আম্মু বললেন, না।

এই দুই 'না'-এর সঙ্গে রাইসার না আর টিকলো না। রাইসাকে তার আম্মুর কথাই মানতে হলো। তাই আর দেরি না করে রাইসা খাবার খেয়ে নিল। খাবার শেষে রাইসাকে তার আম্মু বললেন, এই রান্নাঘরে সবকিছু আছে। তোর জন্য সেমাই এক প্যাকেট আনিয়ে রেখেছি। যা সেমাই রান্না করে আয়। দেখি কেমন সেমাই রান্না করিস। রাইসা তার আম্মুকে বলল, দেখবে আমি খুব ভালো সেমাই রান্না করব।

মা আর কিচ্ছু বললেন না। মুচকি হাসি দিলেন।

রাইসা রান্নাঘরে ঢুকল। সেমাই রান্না করল। একটা ডিস পেস্নটে সুন্দর করে সেমাইয়ের ডেকোরেশন করল। উপরে শুধু সাদা গুঁড়ো দুধ ছিটিয়ে দিল।

সেমাই রান্না শেষে সেমাইয়ের ডিস রাইসা তার আম্মুর রুমে নিয়ে এলো। আম্মু তো অবাক। সেমাই দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে। রাইসা আম্মুকে বলল, আম্মু ডেকোরেশনে দশে কত দেবে?

আম্মু বললেন, আট।

রাইসা বলল, কেন? দেখছো না কত সুন্দর সাজিয়েছি।

রাইসার আম্মু উঠে গিয়ে কাঠবাদাম কুচি এনে ছিটিয়ে দিলেন সেমাইয়ের ওপর। রাইসা চিৎকার করে উঠল। একি করলে আম্মু?

আম্মু বললেন, এখন দশে দশ।

রাইসা বলল, না। এই সেমাই আমি খাবো না। আমি ইচ্ছা করেই সেমাইয়ের ওপর কাঠবাদাম দিইনি।

মা বললেন, কেন?

রাইসা বলল, বলি তাহলে, গত রাত্রে একটা স্বপ্ন দেখেছি আমি। স্বপ্নে চাঁদের মা বুড়ি আর আমি সেমাই রান্নার সৈন্য-সামন্ত জোগাড় করতে বেরিয়েছিলাম। আমি আর চাঁদের মা বুড়ি মিলে, সেমাই ঘুটুনি বুড়ির সেমাই, ধবলা গাইয়ের দুধ, কিশমিশ বটের কিশমিশ, রূপসাগরের সামান্য লবণ, আখ চাচার চিনি আর তেজ খালামণির তেজপাতা জোগাড় করে আনি। শেষে যখন কাঠবাদামি নানুর কাছে যাই, তখনই আমার ঘুম ভেঙে যায়। তাই আমি আর সেমাই রান্নায় কাঠবাদামি নানুকে ব্যবহার করব না। এই বলেই রাইসার সে কি কান্না।

রাইসার কান্নায় মা কিছুই বলেন না। শুধু হাসেন আর মনে মনে বলেন, সেমাইয়ের সৈন্য-সামন্তে কাঠবাদাম ছাড়া হয়?

কাঠবাদামিকে আবার রাইসা নানু বানিয়ে দিয়েছে। মা রাইসাকে বুকে টেনে বলেন, আরে পাগলি মেয়ে আমার, এই দেখ, কাঠবাদামি নানু নিজে তোমার কাছে চলে এসেছে।

রাইসা পেছনে ফিরেই দেখে তার নানু দাঁড়িয়ে আছেন। রাইসা খুশিতে নানুভাই বলে কাঠবাদামি নানুকে জড়িয়ে ধরে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<56818 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1