শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হিজল তলার ভূত

মো. ছিদ্দিকুর রহমান
  ১০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

কালবৈশাখীর বিকালের আকাশটা ভীষণ কালো মেঘে সেজেছে। অমাবস্যার ঝুম কালো আঁধারের রাত্রির মতো হয়ে আঁধার নেমে এলো। হঠাৎ প্রবলবেগে ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে। গ্রামের প্রায় বাড়ি-ঘর, গাছ-পালা ভেঙে লন্ডভন্ড করে দেয়। প্রায় দুই-তিন ঘণ্টা একটানা দমকা হাওয়া ঝড়-বৃষ্টি হয়। সন্ধ্যাবেলা যখন ঝড়-বৃষ্টি থেমে গেল তখন জাহিদকে তার মা ডেকে বলে, জাহিদ আমাদের হাঁসগুলো ঘরে ফেরেনি। জাহিদের মা খুব শখ করে কয়েকটি হাঁস পালন করত। সকাল হলে হাঁসগুলো ঘর থেকে বের হয়ে নদীতে যেত। আবার সন্ধ্যা হলে সময়মতো হাঁসের ইচ্ছামতো ঘরে ফিরত। আজ ঝড়ের কবলে পড়ে সন্ধাবেলায় হাঁসগুলো আর ঘরে ফেরেনি। তাই জাহিদ এবং তার মা দুজন মিলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও হাঁসগুলো পাওয়া যায়নি। হাঁসগুলোর জন্য জাহিদের মায়ের ভীষণ মন খারাপ। হাঁসগুলো খুঁজতে খুঁজতে অনেক রাত হয়ে গেল। হাঁস না পাওয়ার টেনশনে জাহিদের মায়ের চোখে ঘুম আসছিল না। এই ভাবনা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ এক সময় কখন জানি জাহিদের মায়ের চোখে ঘুম এসে গেল। এমন সময় হঠাৎ ঘুমন্ত অবস্থায় জাহিদের মায়ের কানে হাঁসের ডাকের শব্দ এলো। ঘরের বাইরে যেন হাঁসগুলো ডাকছে। শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায় জাহিদের মায়ের। জাহিদ ও হাঁসের চিন্তা বাদ দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ছিল। হাঁসের ডাকের শব্দ পেয়ে জাহিদকে তার মা ডেকে বলে জাহিদ, দেখ আমরার হাঁসগুলো মনে হয় আসছে। বাইরে হাঁসগুলোর ডাক শোনা যায়। জাহিদেরও মনে হলো তাই। ঘরের বাইরে হাঁসের ডাকের শব্দ শুনে জাহিদের মা ও জাহিদ দুজনই ঘরের দরজা খুলে ঘরের বাহির হয়, কিন্তু ঘরের বাহির হয়ে দেখে ঘরের আশপাশে কোনো হাঁস নেই। এবং হাঁসের কোনো শব্দও নেই। হাঁস না পেয়ে ঘরে গিয়ে জাহিদ এবং তার মা দুজনই ঘুমিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ ঠিক আবার সেই হাঁসগুলোর ডাক জাহিদের মায়ের কানে আসে। তবে এখন হাঁসের ডাকগুলো ঘরের কাছে নয়। এখন ডাক শোনা যায় ঘর থেকে একটু দূরে। ঘর থেকে একটু দূরে অনেক দিনের পুরনো একটি বড় হিজলগাছ আছে। সেই হিজলগাছ তলায় হাঁসের ডাক শোনা যায়। হাঁসের ডাক শুনতে পেয়ে তখন আবার জাহিদের মা জাহিদকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলে, জাহিদ দেখ আমরার হাঁসগুলো আবার ডাকতেছে। জাহিদও ঘুম থেকে জেগে সত্যিই হাঁসের ডাক শুনতে পায়। জাহিদ এবং তার মা ভাবছে হিজলগাছের পাশে যেই ঝোপঝাড় আছে সেই ঝোপের ভিতরে মনে হয় আছে। তখন মা-ছেলে দুজন ঘর থেকে বাহির হয়ে হিজল তলায় যায়। গিয়ে দেখে ওখানে হাঁসের কোনো সাড়া-শব্দ নাই। কি আর করার, হাঁস না পেয়ে মা-ছেলে ঘরে ফিরে আসে। ঘরে ফিরে আসার পর একটু পরে আবার খুব জোরে হাঁসের ডাক শোনা যায়। জাহিদের মা হাঁসের মায়া মন থেকে দূর করতে না পেরে আবার হাঁসের খোঁজে মা-ছেলে দুজন ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এবারও ঘর থেকে বের হয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। যতই যাচ্ছে যাওয়ার পর হাঁসের কোনো সাড়া-শব্দ আর তারা পাচ্ছে না। হাঁসের খোঁজে ঘরের বাহির হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁসের ডাকাডাকি আর থাকে না। হাঁসের কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায় না।

এভাবে তিন-চারবার যাওয়ার পর শেষ মুহূর্তে যখন তারা হিজল তলায় যায় তখন ঘরের কাছে হাঁসের ডাক শুনতে পায়। আবার যখন ঘরের কাছে আসে তখন আবার হিজল তলায় হাঁসের ডাক শুনতে পায়। এভাবে হাঁসের খোঁজে মা-ছেলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শেষ মুহূর্তে মা-ছেলের আর বুঝতে বাকি থাকেনি। অবশেষে বুঝতে পারল আসলে যেই হাঁস তাদের হারিয়ে গেছে সেই হাঁসের ডাক না। এটা নিশ্চিত যে হিজল তলার ভূত, মা-ছেলের যে কাউকে একা পেলে হয়তো ক্ষতি করত। জাহিদ এবং জাহিদের মা বুঝতে পেরে মাথা থেকে হাঁসের চিন্তা ফেলে জাহিদ এবং তার মা ঘুমিয়ে পড়ল। হাঁসের ডাক আরও বহু শুনেও আর ঘর থেকে তারা কেউ বের হয়নি। পরদিন সকাল ঘুম থেকে উঠে হাঁসের খোঁজ নিয়ে দেখে, জাহিদের মায়ের হাঁসগুলো অন্য এক বাড়ির হাঁসের সঙ্গে তাদের হাঁসগুলোও রাতে ওই বাড়িতে ছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<61952 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1